কিয়েলিনির গোল-উৎসব। ছবি: এএফপি
ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে দারুণ একটা টুইট করেছিল স্পেন অধিনায়ক র্যামোস। ‘অ্যানালাইজ, রিফ্লেক্ট, লার্ন অ্যান্ড ইমপ্রুভ’। বাংলা করল, বিশ্লেষণ, প্রতিফলন, শিক্ষা এবং উন্নতি!
পিকে-র্যামোসদের ডিফেন্স সেই হারের বিশ্লেষণ করে শিক্ষা নিলেও তারুণ্যে ভরা ইতালির সামনে পরের ম্যাচেই কতটা উন্নতি করতে পারবে তা নিয়ে আমার কিন্তু কিছুটা সন্দেহ ছিল! সোমবার কন্তের দলের জোড়া গোলে স্পেনকে হারিয়ে ইউরো কোয়ার্টারে ওঠা দেখে নিশ্চিত হলাম, তা হলে আমার সন্দেহটা ভুল ছিল না। ইউরোপে গত এক দশক জুড়ে রাজত্ব করলেও স্প্যানিশদের সেই বিখ্যাত তিকিতাকা এখন জৌলুস যেমন হারিয়েছে, তেমনই ওদের ডিফেন্সকে শুরু থেকে আক্রমণ করলে হাঁসফাঁস করে ওঠে সেটাও এ বারের ইউরো দেখিয়েছে। আগের ম্যাচেই করে দেখিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। আন্তোনিও কন্তে আর দেল বস্কি দু’জনেই ভূমধ্যসাগরপারের দেশের মানুষ। সেই হিসেবে ম্যাচটা ছিল ভূমধ্যসাগরীয় ডার্বি। যে ডার্বি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল স্পেনের তিকিতাকা অস্তমিত সূর্য।
ম্যাচের আগে স্পেনের মোরাতাকে নিয়ে প্রচুর হইচই হচ্ছিল। গোটা ম্যাচে দে’রোসি ওকে সে ভাবে নড়াচড়া করতে দেয়নি। আর রোসিকে দু’-এক বার বোকা বানালেও মোরাতা, ইনিয়েস্তারা বার বার আটকে গিয়েছে কন্তের বিখ্যাত জুভেন্তাস ‘থ্রি ব্যাক’ বারজাগলি, বোনুচ্চি আর কিয়েলিনির নিখুঁত কভারিং ও ট্যাকলের সামনে। এই ইতালি শুধুই কাউন্টার অ্যাটাকে খেলে না। শুরু থেকেই ওপেন অ্যাটাকে যায়। যা এ দিনও স্পেনের বিরুদ্ধে বজায় রেখেছিল।
এ ধরনের হাইভোল্টেজ ম্যাচে ফুটবলারদের অ্যাটিটিউড খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের শুরুতে স্পেন পিছিয়ে পড়েছিল সেখানে। স্পেন কোচ দেল বস্কি যেমন বলেই রেখেছিলেন, নক আউটের শুরুতেই ইতালিকে চাননি। সেখানে আবার উল্টো ছবি ইতালিয়ান শিবিরে। এ দিন ওদের প্রথম গোলটা যে ডিপ ডিফেন্ডার কিয়েলিনি উঠে এসে করল, সে আগেই জুভেন্তাসে তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ স্পেনের মোরাতার উদ্দেশ্যে আগাম মন্তব্য করেছিল, সোমবার মোরাতার ভাল যাবে না। এ রকম স্নায়ুযুদ্ধের আগে কিয়েলিনির আত্মবিশ্বাসটা দেখুন!
ইতালির ৩৮ বছর বয়সি গোলকিপার বুফন আবার বলেছিল, ওর প্রিয় শব্দ নাকি প্রতিশোধ। আসলে গত ইউরো ফাইনালে ০-৪ হার থেকেই স্পেন সম্পর্কে বুফনের এই গাত্রদাহ। এ দিন ০-১ পিছিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে যখন স্পেন আক্রমণের ঝড় তুলছিল, তখন চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে বুফন যে দু’টো অবিশ্বাস্য সেভ করল তাতে প্রতিশোধের মনোভাবেরই যেন চিহ্ন।
ফুটবলে ডিফেন্সিভ সংগঠনের সময় একটা কথা বারবার বলা হয়—পেনিট্রেটিভ জোনে নো রিবাউন্ড। অর্থাৎ সেকেন্ড বল যেন বেরিয়ে না আসে। কিয়েলিনির গোলটার সময় ঠিক সেই ভুলটাই করল স্পেন। প্রথমত এডারের ফ্রি কিকের সময় মার্কিং ঠিক করেনি পিকে। বৃষ্টিভেজা মাঠে দে হিয়ার হাত থেকে যে বল বেরিয়ে আসতে পারে সেটাও বুঝতে দেরি করল ও। বল বেরিয়ে আসছে দেখেও কভার করতে ছুটল না। আবার যখন ছুটল ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ইতালির তিন জন তখন ঢুকে পড়েছে স্কোরিং জোনে।
আর শেষের দিকে পেল্লের গোলটার সময় স্পেন এতটাই মরিয়া হয়ে গিয়েছিল যে, ডিফেন্স পুরো ফাঁকা রেখে উঠে গিয়েছিল প্রায় সবাই। পেল্লের গোলের পর প্রায় পাগলের মতো গ্যালারির দিকে ছুটে সেটা বেয়ে উঠতে চাইছিলেন ইতালি কোচ। টিভিতে দেখছিলাম আর হাসছিলাম। কন্তে এ রকম আবেগপ্রবণ বলে বোধহয় পেরেছেন ইতালির খেলায় পরিবর্তন আনতে। শুকনো আলট্রা ডিফেন্সের বদলে আবেগী আক্রমণ।
স্পেনের তিকিতাকা ঘেঁটে দিতে এ দিন কন্তের অস্ত্র দুই উইংহাফ ফ্লোরেঞ্জি আর সিলিও। আক্রমণের ঝড়টা ওরাই বইয়ে দিচ্ছিল। আর মিডল করিডরে রোসি যতক্ষণ ছিল, অপারেটই করতে দেয়নি স্প্যানিশদের। ম্যাচ শেষে এক টিভি কমেন্টেটর বলছিলেন, সাদা জার্সি পরে নামলে স্পেন ব্যর্থ হয়। একজন ফুটবল কোচ হিসেবে আমি বলব, সংস্কার নয়। তিকিতাকার সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ল কন্তের ট্যাকটিক্যাল আক্রমণে।
বিদায় রুনিদের
আইসল্যান্ডের কাছে ১-২ হেরে ইউরো থেকে ছিটকে গেল ইংল্যান্ড। প্রথমে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ওয়েন রুনি। যার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিআক্রমণে ১-১ করেন সিগার্ডসন। তবে এখানেই শেষ নয়। ম্যাচের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটল ১৮ মিনিটে। যখন আইসল্যান্ডকে ২-১ এগিয়ে দেন সিগথোর্সন। শেষ আটে আইসল্যান্ডের সামনে ফ্রান্স।