দ্রোণাচার্য: আইজলে ফুটবলার তৈরি করার কাজে মগ্ন জহর।
গত মরসুমে আই লিগে অবনমন বাঁচাতে পারেনি আইজল এফসি। ডেম্পো, সালগাওকর দল তুলে নেওয়ায় শেষ মুহূর্তে আই লিগ খেলার সুযোগ পায় তারা। সেই আইজলই এই মুহূর্তে খেতাবের অন্যতম দাবিদার। ঘরের মাঠে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত তারা।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু এফসি-র মতো দলকে পিছনে ফেলে ১৪ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে আইজল! অথচ দল গড়তে এক কোটি টাকাও খরচ করেননি ক্লাব কর্তারা!
অবিশ্বাস্য সাফল্যে রহস্য কী?
খালিদ জামিলের কোচিংয়ে চলতি আই লিগে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করলেও আইজল উত্থানের নেপথ্যে এক বাঙালি কোচের মস্তিষ্ক! তিনি, মোহনবাগানের প্রাক্তন গুরু জহর দাস। গত দু’বছর ধরে মিজোরামই তাঁর ঠিকানা। আইজল এফসি-র সভাপতি রবার্ট রয়তে মিজোরাম থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমাদের মোট সাতটি অ্যাকাডেমি আছে। তার মধ্যে মিজোরামেই ছয়টি। একটি অ্যাকাডেমি আমরা গড়েছি ত্রিপুরায়। প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারদের খুঁজে বার করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জহর দাসকে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আই লিগে আইজলের হয়ে যারা খেলছে, তাদের অধিকাংশই অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছে। আমাদের দর্শন খুব পরিষ্কার— স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়ে কম খরচে দল গড়ব। প্রধান লক্ষ্য প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনা।’’
গত মরসুমে জহর দাসের কোচিংয়েই আই লিগে খেলেছিল আইজল। উঠেছিল ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও। কিন্তু এই মরসুমে তিনি পুরোপুরি ফুটবলার গড়ার কাজে মগ্ন। জহর বলছিলেন, ‘‘মিজোরামের ছোট-বড় সকলেরই ফুটবলের প্রাথমিক জ্ঞান আছে। কিন্তু ওরা হীনমন্যতায় ভুগত। দায়িত্ব নিয়ে আমি প্রথমেই ওদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলাম।’’ কী ভাবে? তিনি বললেন, ‘‘সিনিয়র ও জুনিয়র দু’দলের ফুটবলারদেরই বিভিন্ন ধরনের কাহিনি শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করতাম। বলতাম, মাঠে যখন নামবে মনে করবে, তোমরাই সেরা। বিপক্ষে কে খেলছে তা নিয়ে ভাববে না। আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পেতেই ওরা সকলের সমীহ আদায় করে নিয়েছে।’’ কিন্তু সিনিয়র দলের দায়িত্ব ছাড়লেন কেন? আইজল অ্যাকাডেমির প্রধান কোচ বলছেন, ‘‘আমি তো ছোটদের নিয়ে কাজ করতেই ভালবাসি।’’
আইজলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত কলকাতার দুই প্রধানের চাণক্যও। মোহনবাগানের সঞ্জয় সেন বলছিলেন, ‘‘গত দু’বছর ধরেই আইজল অসাধারণ খেলছে। কোচ খালিদ জামিল এ বছর খুব ভাল কাজ করছে। একঝাঁক স্থানীয় প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের পাশাপাশি জয়েশ রানে, আশুতোষ মেটা-র মতো অভিজ্ঞদের নিয়ে এসেছে। এতে দলের ভারসাম্য অনেক বেড়েছে।’’ আর ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ব্যাখ্যা, ‘‘আইজলের ফুটবলাররা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে। যে কোনও দলকে ওরা হারানোর ক্ষমতা রাখে।’’