অশালীন জেমসকে গ্রেফতারের দাবি

ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই ক্ষুব্ধ যে দাবি তুলে দিয়েছেন, “এখনই গ্রেফতার করা হোক ওই বিদেশি ফুটবলারকে। ও যা করেছে সেটা তো ধর্ষণের হুমকির মতোই। সব মেয়েদের অপমান।” “আমি ওই টিমের কোচ হলে তখনই জেমসকে তাড়িয়ে দিতাম। ওকে অভিবাসন দফতর এখনই গ্রেফতার করে দেশ থেকে বার করে দিক,” মেয়ে রেফারির সামনে নাইজিরিয়ান ফুটবলারের অশালীন অঙ্গভঙ্গীর ছবি বুধবারের আনন্দবাজারে দেখে পি-কের মতোই তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ‘ডায়মন্ড কোচ’ অমল দত্ত।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

দত্তপুকুরের কণিকা যখন গৃহবধূ। বাগান ম্যাচের ২৪ ঘন্টা পরেও বুঝিয়ে দিলেন তিনি কতটা অবিচলিত। ছবি: উৎপল সরকার

ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই ক্ষুব্ধ যে দাবি তুলে দিয়েছেন, “এখনই গ্রেফতার করা হোক ওই বিদেশি ফুটবলারকে। ও যা করেছে সেটা তো ধর্ষণের হুমকির মতোই। সব মেয়েদের অপমান।”

Advertisement

“আমি ওই টিমের কোচ হলে তখনই জেমসকে তাড়িয়ে দিতাম। ওকে অভিবাসন দফতর এখনই গ্রেফতার করে দেশ থেকে বার করে দিক,” মেয়ে রেফারির সামনে নাইজিরিয়ান ফুটবলারের অশালীন অঙ্গভঙ্গীর ছবি বুধবারের আনন্দবাজারে দেখে পি-কের মতোই তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ‘ডায়মন্ড কোচ’ অমল দত্ত।

অভিযুক্ত ফুটবলার যে দলের সেই বিএনআরের প্রাক্তন স্পোর্টস অফিসার তথা বিখ্যাত প্রাক্তন ডিফেন্ডার অরুণ ঘোষও জেমসের জঘন্য আচরণে হতবাক। “লজ্জা হচ্ছে রেল টিমের একজন ফুটবলারের আচরণ দেখে। আমাদের অফিসের উচিত ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”

Advertisement

ময়দানের পোড় খাওয়া কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের চাঁচাছোলা মন্তব্য, “কোথা থেকে এই বিদেশিরা আসে কে জানে। ধর্ষণ, ড্রাগ-সহ নানা অসামাজিক কাজে এরা জড়িয়ে পড়ছে বারবার। মেয়েদের সম্মান করতে জানে না। জেমস যা করেছে তা অমার্জনীয় অপরাধ। ওকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক আইএফএ। পুলিশের হাতে তুলে দিক।”

মঙ্গলবার কলকাতা লিগে মোহনবাগান-বিএনআর ম্যাচে পেনাল্টির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে রেফারি কণিকা বর্মনের দিকে তেড়ে যান এনডুরেন্স জেমস। সামনে মেয়ে রেফারি দেখেও ন্যক্কারজনক আচরণ করেন। সেই ছবি আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। ঝুঁটি বাধা নাইজিরিয়ান ফুটবলারকে গ্রেফতার করে দেশ থেকে বিতাড়ন করার দাবি উঠেছে, পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতেও উত্তাল ফুটবল মহল। কারণ শুধু মাত্র একজন মহিলা রেফারির প্রতি একজন ফুটবলারের বিশ্রী আচরণ হিসাবে এই ঘটনাকে দেখতে নারাজ ময়দান। বরং সামগ্রিক ভাবে মেয়েদের হেনস্তার শিকার হিসাবেই দেখছেন সবাই। ময়দানের সঙ্গে যুক্ত মেয়ে ক্রীড়াবিদরা দাবি তুলেছেন বাড়তি নিরাপত্তারও।

তিরিশ বছরেরও বেশি ফুটবলার ও কোচ হিসাবে ময়দানে রয়েছেন কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার। পুরো ঘটনায় এতটাই ক্ষুব্ধ যে বলে দিলেন, “একজন মেয়ে রেফারি কড়া হাতে ছেলেদের বড় ম্যাচ খেলাচ্ছেন দেখে যেমন গর্ব হচ্ছে, তেমনই ভয় লাগছে ময়দানে আমরা অনেক মেয়ে তো সারাদিন কাজ করি।” ‘অজুর্ন’ শান্তি মল্লিকের মন্তব্য, “ভাবছি যুবভারতীর মধ্যেই এই অবস্থা! বাইরে কী হবে? আইএফএ মেয়েদের ফুটবল লিগ নিয়ে গিয়েছে বেলঘরিয়ায়। সেখানে কোনও নিরাপত্তাই নেই মেয়েদের। মেয়েদের নিরাপত্তা খেলার মাঠে আরও বাড়ানো দরকার।” ময়দান ছাড়িয়ে জেমসের কুকীর্তির ছবি আলোড়ন ফেলেছে অন্য মেয়ে ক্রীড়াবিদদের মধ্যেও। তিরন্দাজ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “মাঠের মধ্যেই সবার সামনে একজন পুরুষ কণিকার সঙ্গে এ রকম দৃষ্টিকটু আচরণ করছে দেখে অবাক হচ্ছি। এরা বাইরে কী করতে পারে ভেবে ভয় হচ্ছে।”

কুন্তলা-দোলা-শান্তিরা নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা জানানোর আগেই অবশ্য প্রকাশিত ছবি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের মহিলা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বললেন, “নতুন আইনে যা আছে তাতে মেয়েদের উদ্দেশ্য করে খারাপ কথা বা বিসদৃশ আচরণ কিন্তু হেনস্থার পর্যায়ে পড়ে। যা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। রেফারি কণিকার সঙ্গে ওই ফুটবলারের যে ছবি দেখেছি তা কিন্তু অপরাধের মধ্যেই পড়ে। আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।” জানা গিয়েছে, আইএফএ এবং রেফারি সংস্থা কী ব্যবস্থা নিয়েছে জেমসের বিরুদ্ধে তা জানতে চেয়ে চিঠি দিচ্ছে মহিলা কমিশন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি রেলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দেওয়ার পর ছুটে এসেছিলেন বিএনআরের অনেক ফুটবলারই। ঘিরেও ধরেছিলেন কণিকাকে। কেউ তর্জনী উঁচিয়ে শাসাচ্ছিলেন। কেউ চিৎকার করছিলেন। যা সাধারণত ময়দানে রেফারিদের ঘিরে হয়েই থাকে। কিন্তু সামনে মেয়ে রেফারি দেখে পরে অন্যরা সতর্ক হলেও জেমস হননি। এর আগে গত শুক্রবার মহমেডান-টালিগঞ্জ ম্যাচেও চতুর্থ রেফারি ছিলেন কণিকা। সেখানেও এক মহমেডান কর্তা তাঁকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। রেফারি এবং ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টে সে কথা আছে। কিন্তু জেমসের মঙ্গলবারের আচরণের কথা নিজের রিপোর্টে লেখেননি কণিকা।

কেন লেখেননি? রেফারি সংস্থার সচিব উদয়ন হালদার বললেন, “কণিকা তো বলল, জেমস পেটের দিকে আঙুল দেখাচ্ছে বলে কিছু করেনি।” আনন্দবাজারের বুধবারের প্রকাশিত ছবি কিন্তু অন্য কথা বলছে। হতে পারে পুলিশে চাকরি করেন বলেই ঝামেলা বাড়াতে চাননি কণিকা। আবার অনেকে বলছেন, ময়দানে রেফারিং করতে হবে বলে কড়া রিপোর্ট লেখার ঝুঁকি নেননি শিলিগুড়ির মেয়ে। সিআরএ সচিব কিন্তু বললেন, “কণিকাই প্রথম মেয়ে রেফারি, যে বড় ম্যাচ খেলাচ্ছে। কর্তা বা ফুটবলারদের আচরণ তাই ঠিক থাকা দরকার। আর মেয়ে রেফারিদের নিরাপত্তাও কিন্তু বাড়ানো হোক।”

জেমসকে শাস্তি দিতে পারে যে সংস্থা সেই রাজ্য ফুটবল সংস্থার কর্তারা কী বলছেন? সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “রিপোর্ট হাতে পাই তার পর যা বলার বলব।” কিন্তু প্রকাশিত ছবি দেখেও তো এর আগে নানা কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে আইএফএ? এ বার কেন তা করছেন না? রাজ্য সংস্থার সচিব বললেন, “দেখছি।”

উৎপলবাবুরা কী ‘দেখেন’ তার দিকে লক্ষ রাখছে পুরো ময়দান। রাজ্য ফুটবল সংস্থা সত্যিই নখদন্তহীন হয়ে পড়েছে কি না তা প্রমাণের জন্য যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এক বিদেশি— এনডুরেন্স জেমস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন