সেরা সময়ের গ্লিসন। (ইনসেটে) শেষ বয়সে দেখাচ্ছেন কেমন ছিল তাঁর রহস্য গ্রিপ।-ফাইল চিত্র
অদ্ভুত অ্যাকশনের জন্য তাঁর নামটাই এক সময় হয়ে গিয়েছিল, ‘ফোল্ডেড ফিঙ্গার স্পিনার’। ডান হাতের মধ্যমা মুড়িয়ে নিয়ে গ্রিপ করতেন বল। মুথাইয়া মুরলীধরনের ‘দুসরা’ বা অশ্বিনের ‘ক্যারম বল’-এর বহু আগে ‘বিস্ময় স্পিনার’ তকমা পেয়েছিলেন। সেই জন গ্লিসন মারা গেলেন এ দিন। অস্ট্রেলীয় স্পিনারের বয়স হয়েছিল আটাত্তর বছর।
১৯৬৭ থেকে ’৭২-এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া হয়ে ২৯ টেস্টে ৯৩ উইকেট নিয়েছিলেন গ্লিসন। গড় ৩৬। পরে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটে প্রশাসক হিসাবেও ছিলেন কিছু দিন। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছ’বছরেই ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন অদ্ভুত অ্যাকশনের জন্য। নিজে যা নিয়ে বলতেন, ‘‘আমার হাত থেকে বলটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বেরোত, আসলে লেগস্পিন কিন্তু দেখলে মনে হবে অফস্পিন। বলতে পারেন মোটামুটি একটা রিভার্স রংওয়ান।’’
এমন বিচিত্র অ্যাকশন কয়েক দশক পর দেখা গিয়েছিল দিলীপ মেন্ডিসেরও। গ্লিসনের অনুপ্রেরণা অবশ্য ছিলেন পঞ্চাশের দশকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র পাঁচটা টেস্ট খেলা স্পিনার জ্যাক ইভারসন। ইভারসনই প্রথম আঙুল মুড়ে বল গ্রিপ করে ধন্ধে ফেলা শুরু করেছিলেন ব্যাটসম্যানদের। যাঁর সম্পর্কে গ্লিসন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘১৯৫১ সালে স্পোর্টিং লাইফ পত্রিকায় প্রথম ইভারসনের গ্রিপের ছবি দেখি। সেই সময় বিভিন্ন গ্রিপ নিয়ে আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। প্রথমে টেনিস বলে ওই গ্রিপটা প্র্যাকটিস শুরু করি। দেখি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই পারছি।’’
সেরা সময়ের গ্লিসন।
সেই গ্রিপই শেষ পর্যন্ত ট্রেড মার্ক হয়ে ওঠে গ্লিসনের। খাতায় কলমে যাঁর নামের পাশে লেখা থাকত, লেগব্রেক গুগলি বোলার। ষাটের দশকের গোড়ায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে গ্লিসন নিয়মিত উইকেট পেতে শুরু করেন ব্যাটসম্যানদের অপার বিস্ময়ের পাত্র হয়ে উঠে। সেই সময়েই অ্যাডিলেডে নেটে তাঁর বোলিং দেখে পছন্দ হয় তৎকালীন নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান স্বয়ং ডন ব্যাডম্যানের। যিনি নিজে ব্যাটিং ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকেও পর পর গ্লিসনের দু’টো বল কোথায় যাচ্ছে বুঝে উঠতে পারেননি। এর পরেই টেস্ট টিমের হয়ে নিজের প্রথম ব্যাগি গ্রিন টুপি অর্জন করেন।
ইদানীং শরীর ভাল যাচ্ছিল না গ্লিসনের। সেই অসুস্থতা থেকেই নিউ সাউথ ওয়েলসে নিজের বাড়ির কাছে ট্যামওয়ার্থ হাসপাতালে মৃত্যু। যে খবর এ দিন প্রথম জানান প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্যাপ্টেন ইয়ান চ্যাপেল। বলেন, ‘‘ক’দিন আগেই জনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। নিজের অসুস্থতার সঙ্গে যেন আপস করে নিয়েছিল ও। আমাকে বলেছিল, বেশি দুশ্চিন্তা করো না, আমি ঠিক আছি।’’ চ্যাপেল জানান, গ্রিসন শুরুটা করেছিলেন উইকেটকিপিং দিয়ে। সঙ্গে চলত টেবল টেনিস বলে স্পিন করানোর চেষ্টা। ‘‘সেই থেকেই অসাধারণ ফিঙ্গার স্পিনার হয়ে উঠেছিল জন,’’ বলেছেন চ্যাপেল।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান জেমস সাদারল্যান্ড শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‘ওর বিচিত্র গ্রিপ দিয়ে ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ক্রিকেট অনুরাগীদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিল জন। ওর অভিনব স্কিল আর ব্যাটসম্যানকে বোকা বানানোর ক্ষমতার জন্য ক্রিকেট বিশ্বে জন অমর হয়ে থাকবে।’’