দু’দশকেরও বেশি সময় ‘ব্লু আর্মি’-দের রক্ষণ সামলেছেন তিনি। চেলসি রক্ষণের সেই বিশ্বস্ত সেনাপতি জন টেরি অবশেষে রবিবার তাঁর বুট জোড়া তুলে রাখলেন আলমারিতে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে রবিবার ঘরের মাঠে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সান্ডারল্যান্ড। সেই ম্যাচেরই প্রথমার্ধে ২৬ মিনিটের মাথায় টেরিকে তুলে নেন চেলসি কোচ আন্তোনিও কন্তে। টেরির জার্সি নম্বর ২৬। তাই ম্যাচের ছাব্বিশ মিনিটেই তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই পদ্ধতি নিয়েছিল চেলসি। চোখের জল মুছতে মুছতে যখন রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তখনই চমক। চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো অধিনায়ককে ‘গার্ড অব অনার’ দিতে তখন মাঠেই সারি বেধে দাঁড়ান দাভিদ লুইজ-অ্যাজাররা।
আবেগঘন সেই স্ট্যামফোর্ডে ব্রিজ তখন চোখের জলে ভাসছে। টেরির পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামার জন্য সাইড লাইনের ধারে দাঁড়ানো গ্যারি ক্যাহিলের মুখও থমথমে। তাঁকেই অধিনায়কের বাহু-বন্ধনী পরিয়ে দিয়ে সমর্থকদের দিকে হাত নেড়ে বিদায় জানান। চোখ মুছতে মুছতে মাঠ পরিক্রমা করেন। তার পর বেঞ্চে গিয়ে বসেন টেরি। তাঁর আগে কোচ আন্তোনিও কন্তেকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। যা দেখে আবেগমথিত হয়ে পড়েন বিপক্ষ সান্ডারল্যান্ডের ফুটবলাররাও। দশর্কদের সঙ্গে তাঁদেরও দেখা যায় টেরির উদ্দেশে করতালি দিয়ে সম্মান জানাতে। চেলসি সমর্থকরা তখন তুলে ধরেছেন একের পর এক ব্যানার। সেই ব্যানারের কোনওটায় লেখা, ‘থ্যাঙ্ক ইউ পর এভরিথিং’।
আরও পড়ুন: সুনীল না থাকার ফাইনালে বেঙ্গালুরুর নায়ক বিনীত
বিজয়ী: ইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফি-উৎসব চেলসির।
কোনওটায় জ্বলজ্বল করছে, ‘জন টেরি— ক্যাপ্টেন, লিডার, লেজেন্ড’। ১৯৯৫ সাল থেকে বাইশ বছরের খেলোয়াড় জীবনে চেলসিকে পাঁচ বার ইপিএল ও এফএ কাপ চ্যাম্পিয়ন করেছেন টেরি। অধিনায়ক হিসেবে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। চেলসির হয়ে সর্বমোট যোলোটি ট্রফি জিতেছেন রক্ষণের এই দুর্ভেদ্য প্রহরী। এ দিনের ম্যাচের আগেই সমর্থকদের উদ্দেশে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন টেরি। যেখানে বলা ছিল, ‘‘গত বাইশ বছর ধরে আপনারা যে অকুণ্ঠ সমর্থন করে গিয়েছেন আমাকে তা কোনও দিন ভোলার নয়। জীবনের সেরা প্রাপ্তি আপনাদের ভালবাসা। যখন পারফরম্যান্স ভাল হয়নি বা হতাশ হয়ে পড়েছি, তখন আপনাদের সমর্থনই ভাল খেলতে অনুপ্রাণিত করেছে।’’ এখানেই শেষ হয়নি ভক্তদের জন্য টেরির ভাষণ। তাঁর কথায়, ‘‘চোদ্দ বছর বয়সে যখন চেলসির জার্সি গায়ে পেশাদার ফুটবলার-জীবন শুরু হয়েছিল, তখন ভাবতে পারিনি এতদূর যাব। ফুটবল খেলে যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছি তা আপনাদের জন্যই।’’
ম্যাচে যদিও সান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে ৫-১ শেষ করল চেলসি। এই প্রথম ইপিএলে তিরিশটি ম্যাচ জিতে নতুন নজির গড়ল কন্তের দল। খেলার পরেই টেরির হাতে ইপিএল ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। মাঠে হাজির ছিলেন টেরির দুই সন্তান ও স্ত্রী। মাঠ ছাড়ার আগে টেরির বিদায়কালীন মন্তব্য, ‘‘আজকের দিনে দুঃখ, আনন্দ, হাসি, কান্না—সব মিশে গিয়েছে। তার মধ্যেও আনন্দটা একটু বেশি। কারণ হাতে ইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবসর নিতে পারছি।’’