য়ুভেন্তাস ২ : মোনাকো ১

গড়াপেটার কলঙ্ক মুছে ফের গৌরবের সামনে য়ুভেন্তাস

দশ বছর আগে তারা যখন ইতালীয় লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে গেল, কে ভেবেছিল আবার এমন স্বপ্নের দিন আসবে? কে ভেবেছিল, তারা এক দিন আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলবে!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০৪:২২
Share:

উল্লাস: ফের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে য়ুভেন্তাস। সেমিফাইনালে মোনাকোকে হারিয়ে আনন্দের লাফ আর্জেন্তাইন ফরোয়ার্ড হিগুয়াইনের। ছবি: এএফপি

দশ বছর আগে তারা যখন ইতালীয় লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে গেল, কে ভেবেছিল আবার এমন স্বপ্নের দিন আসবে? কে ভেবেছিল, তারা এক দিন আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলবে! ফিনিক্স পাখির মতোই যেন ছাইয়ের গাদা থেকে পুনরুত্থান ঘটল তাদের।

Advertisement

তখন য়ুভেন্তাস বলতে ম্যাচ গড়াপেটার কলঙ্ক-বিধ্বস্ত এক দল। একদিকে ২০০৬ বিশ্বকাপ জিতে উঠলেন বুফন, দেল পিয়েরো-রা। আর দেশের ফুটবলে তখনই তাঁদের ক্লাবকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় আছড়ে পড়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলগুলির একটিকে নেমে যেতে হচ্ছে সেরি ‘বি’-তে। ইতালীয় লিগে তখন য়ুভেন্তাস, লাজিও এবং ফিয়োরেন্তিনা— তিনটি দল ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত।

য়ুভেন্তাসকে নেমে যেতে হল দ্বিতীয় ডিভিশনে। সেখানেই শেষ নয়। গড়াপেটায় কলঙ্কিত ক্লাব ছেড়ে চলে গেলেন জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, প্যাট্রিক ভিয়েরা, ফাবিও কানাভারো-র মতো তারকারা। কিন্তু ক্লাব ছেড়ে চলে যাননি বিশ্বকাপজয়ী ত্রয়ী। বুফন, দেল পিয়েরো, মাওরো কামোরানেসি। তাঁরাই ফিরিয়ে আনলেন যুভে-কে।

Advertisement

পরের বছরেই ত্রয়ী ক্লাবকে তুললেন সেরি ‘আ’-তে। ৪২টি লিগ ম্যাচের মধ্যে সে বছর বুফন-রা হেরেছিলেন মাত্র চারটিতে। বুফন বুধবার রাতেও ছিলেন। যখন মোনাকোকে ২-১ হারিয়ে ফের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল য়ুভেন্তাস। প্রথম লেগেই ২-০ এগিয়ে ছিল ইতালীয় ক্লাবটি। সব মিলিয়ে ফল তাদের পক্ষে ৪-১।

মারিও মাঞ্জুকিচ গোল করে এগিয়ে দেন য়ুভেন্তাসকে। ব্যবধান বাড়ান দানি আলভেস। মোনাকোর হয়ে একমাত্র গোলটি করেন কিলিয়ান ব্যাপে। কিন্তু অভাবনীয় কোনও অঘটন ঘটাতে পারেনি মোনাকো।

এ বারের অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে হিগুয়াইনের। তিনি এখন এমনই দুরন্ত ফর্মে যে, সেরাদের সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। দানি আলভেস দারুণ খেললেন মঙ্গলবার রাতে। তিনিই ম্যাচের সেরা। কিন্তু ইতিহাস এবং আবেগের দিক থেকে সেরার ট্রফি পেতে পারেন এক জনই। জানলুইজি বুফন। ‘ওল্ড লেডি’ নামে বিখ্যাত ক্লাবের পুরনো সৈনিক। ৬৮৯ মিনিট ধরে অপরাজিত থেকে যিনি এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম গোল খেলেন মঙ্গলবার। কে বলবে আগামী জানুয়ারিতে তিনি চল্লিশে পা দেবেন!

সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে উচ্ছ্বাস বুফনের।

‘‘নিজের দেখা স্বপ্নে বিশ্বাস রাখতে হবে। স্বপ্ন যেন কখনও ছেড়ে চলে যেতে না পারে,’’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে বলেছেন বুফন। এক হাজার ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। ২০০৩ এবং ২০১৫, দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেও ট্রফি জিততে পারেননি। ‘‘দু’বছর আগে যখন হারলাম, সকলে ভেবেছিল সেটাই আমার শেষ ফাইনাল। কিন্তু আমি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছি,’’ যোগ করছেন তিনি। য়ুভেন্তাসকে ঘরোয়া ফুটবলে ফের সেরা করে তোলার পিছনে ছিলেন আন্তোনিও কন্তে। যিনি এখন চেলসিতে সোনা ফলাচ্ছেন। কিন্তু য়ুভেন্তাস ছেড়ে যখন ইতালির জাতীয় দলের নিতে চলে যাচ্ছেন কন্তে, তাঁর করা একটি মন্তব্যই বাড়তি প্রেরণা হয়ে দাঁড়াল বুফন-দের জন্য। য়ুভেন্তাস ঘরোয়া খেতাব জিতছে। কিন্তু ইউরোপের সেরাদের কাছে হেরে যাচ্ছে কেন? জানতে চাওয়ায় কন্তে বলেছিলেন, ‘‘একটা রেস্তোরাঁয় ভাল খাবার খেতে যদি ১০০ ইউরো লাগে, আপনি ১০ ইউরো খরচ করার কথা ভাবতে পারেন না।’’

ইঙ্গিতটা পরিষ্কার যে, টাকা খরচ করে না বলেই বড় মঞ্চে জিততে পারে না য়ুভেন্তাস।

কন্তের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছেন তাঁর উত্তরসূরি মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি। ‘‘কোচ বদল আমাদের পাল্টে দিয়েছিল। প্রথম দু’মাসের মধ্যেই আমরা প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম, আমরা বিশ্বের সেরা হতে পারি,’’ কন্তেকে পাল্টা কটাক্ষ করে বলেছিলেন জর্জে কিয়েল্লিনি। কয়েক দিন আগে মেসিদের ছিটকে দিয়ে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন কিয়েল্লিনি-রা। এ বার অপেক্ষা রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদের। বুফন কি তৃতীয় বার ভাগ্যবান হবেন?

৩ জুন রাতে কার্ডিফ বলে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন