উদ্বেগ? কুম্বলে দেখে নিচ্ছেন ঋদ্ধির হাত। বিশাখাপত্তনমে মঙ্গলবার।
যত কাণ্ড বিশাখাপত্তনমে!
বলিউডের যে কোনও অ্যাকশন ছবি বা টেলি সোপের টানটান করা মুহূর্তর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে বিরাট কোহালির সংসারের সারা দিনের নাটক।
সময়: মঙ্গলবার সকাল।
লোকেশন: ভিজিয়ানগরমের পিভিজি রাজু এসিএ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে কর্নাটক ড্রেসিংরুম।
নির্বাচকদের প্রধান এমএসকে প্রসাদ সোজা গিয়ে কে এল রাহুলকে বলেন, ‘‘উঠে পড়ো, তোমাকে এখনই বিশাখাপত্তনম রওনা হতে হবে। ইন্ডিয়ান টিম তোমাকে আজকের প্র্যাকটিসেই চাইছে।’’
দুই শহরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটারের মতো। এটুকু আসতে আর কতই বা সময় লাগবে? বড়জোর দেড়ঘণ্টা। টেস্ট দল ডাকছে যেখানে, সেখানে তো যেতেই হবে। কিটব্যাগ গুছিয়ে সোজা হোটেলে ফিরে সেখান থেকে ব্যাগপত্তর নিয়ে উঠে পড়লেন গাড়িতে।
একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচের মাঝখানেই কোনও ক্রিকেটারকে এ ভাবে জাতীয় দলে ডেকে নেওয়া, এমন ঘটনা বিরল। তাঁর রঞ্জি দল কর্নাটক অবশ্য তখন রাজস্থানকে হারানোর সব ব্যবস্থা ততক্ষণে করেই ফেলেছে। আর রাহুলের ভূমিকাও মোটামুটি শেষ। ফিল্ডিং করা ছাড়া তাঁর আর তখন কোনও কাজ ছিল না। তাই দলের সতীর্থরা তাঁকে প্রায় ঠেলে পাঠিয়ে দেন। সঙ্গে শুভেচ্ছা।
সময়: মঙ্গলবার দুপুর।
লোকেশন: বিশাখাপত্তনমে ভারতীয় টিম হোটেল।
টিমের প্র্যাকটিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। বিরাট কোহালিদের টিম বাস হোটেল ছাড়ার ঠিক আগেই রাহুলের গাড়ি হুশ করে ঢুকে পড়ল টিম হোটেলে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা তখন একে একে হোটেলের লবিতে নামছিলেন প্র্যাকটিসে যাওয়ার জন্য। বাসও তৈরি ছিল। ঠিক তখনই আগমন অ্যাকশন হিরোর।
রাজস্থানের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসে ৭৬ ও ১০৬ করার পর যে তিনি তৃতীয় টেস্টে ভারতীয় দলে ফিরবেন, এমন জল্পনা চলছিলই। কিন্তু এ ভাবে যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁকে রঞ্জি দলের ড্রেসিংরুম থেকে প্রায় তুলে আনা হবে, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। আসলে রাজকোটে কোনওমতে করা ড্রয়ে গৌতম গম্ভীরের ২৯ ও শূন্যর স্কোর ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট খুব একটা ভাল ভাবে নেয়নি বলেই জানা গেল। প্রথমে তাই মনে হচ্ছিল, বিশাখাপত্তনমে ঘূর্ণি উইকেটে ইংরেজ স্পিনত্রয়ীকে সামলাতে বোধহয় তড়িঘড়ি রাহুলকে নিয়ে আসার এই উদ্যোগ। কিন্তু সময় গড়াতে উঠে এলো নতুন এক থিওরি।
প্র্যাকটিসে নামার আগে ভারতীয় কোচ অনিল কুম্বলের সাংবাদিক বৈঠকে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে গেল। যখন কুম্বলে বললেন, ‘‘আমরা রাহুলকে প্রথম এগারোয় চাইছি। সেই কারণেই তো ওকে ওকে আনা হল। আর যখন ও টিম থেকে খুব একটা দূরে নেই, তখন ওকে পাওয়ার সুযোগটা ছাড়ি কেন?’’ রাহুলের চোট কী অবস্থায়, তা দেখার জন্য এনসিএ-র ফিজিওকেও পাঠানো হয়েছিল তাঁর কাছে। তিনিও পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়ায় আরও এই ‘অপারেশন কে এল রাহুল’ চালানো হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। শান্তশিষ্ট সৈকতনগরী বিশাখাপত্তনমের মেজাজের সঙ্গে যেটা খুব একটা মানানসই নয়।
কিন্তু নাটকটা যে এখানেই শেষ হয়ে গেল না, পিকচার আভি বাকি হ্যায়, সেটা বোঝা গেল দুপুরে ভারতীয় দল প্র্যাকটিসে নামার পর।
সময়: মঙ্গলবার বিকেল।
লোকেশন: এসিএ-ভিডিসিএ স্টেডিয়াম।
নেটে না গিয়ে কোহালিরা এ দিন মাঠেই ফিজিক্যাল ও ফিল্ডিং ড্রিল করেন। তার আগে একটু ফুটবল খেলা। কিন্তু ফুলহাতা প্র্যাকটিস শার্ট, ফুল লোয়ার ও লাল জুতো পায়ে যাকে এ সব কিছু থেকেই দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল, তিনি ঋদ্ধিমান সাহা। যদিও অপশনাল ছিল এ দিনের প্র্যাকটিস। কিন্তু ঋদ্ধি ইন্ডিয়া টিমের সঙ্গে মাঠে এসে প্র্যাকটিস করলেন না, এমন ঘটনা কখনও দেখা গিয়েছে বলে মনে করতে পারা গেল না।
লোকেশ রাহুলের ফুটবলচর্চা। দর্শক বিরাট কোহালি।
বঙ্গ মিডিয়াকুলে জল্পনা শুরু হয়ে গেল। তা হলে কি ঋদ্ধিমান সাহার চোট রয়েছে?
জল্পনাটা উস্কে দিল একটা নয়, দু-দুটো ঘটনা। এক, মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঋদ্ধির কাছে যখন মাঝে মাঝে বল আসছিল, তখন তিনি তা বাঁ হাত দিয়ে ছুড়ে ফেরাচ্ছিলেন। ডান হাত একেবারে ব্যবহার করছিলেন না। আর দুই, দলের ফিজিও প্রায়ই ঘুরেফিরে এসে ঋদ্ধির ডানহাতের তালু ও আঙুল দেখছিলেন। একবার অনিল কুম্বলেকেও দেখা যায় ঋদ্ধির ডান হাত দেখে কী যেন বলছিলেন তাঁকে।
দলীয় সূত্রের খবর, ঋদ্ধির এ দিন মাঠে আসার কথা নাকি ছিল না। তিনি মাঠে এসেছিলেন নিজের ইচ্ছেয়। বুধবারও প্র্যাকটিস করতে পারবেন কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তাঁর চোটটা আসলে কী, কতটা গুরুতর— তা কোনও ভাবেই জানা গেল না। প্রেস কনফারেন্স ছাড়া ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের কথা বলায় বোর্ডের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই ঋদ্ধির সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলারও উপায় নেই। ফলে তাঁকে নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়ল।
সকালে ও দুপুরে রাহুল-পর্ব আর বিকেলে ঋদ্ধি-পর্বর মধ্যে অনেকে সম্পর্ক খোঁজারও চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। তা হলে কি ঋদ্ধির জায়গায় কিপিং গ্লাভসে অভ্যস্ত হওয়ার জন্যও তড়িঘড়ি ডেকে আনা হল কে এল রাহুলকে? গম্ভীর নয়, তা হলে কি ঋদ্ধির পরিবর্ত হিসেবে দ্বিতীয় টেস্টে নামতে দেখা যেতে পারে রাহুলকে? বুধবারের প্র্যাকটিস শুরু হওয়ার আগে অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্ধ্র ক্রিকেট প্রশাসনে যিনি প্রায় সিএবি-র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো, সেই প্রাক্তন ভারতীয় কিপার ও জাতীয় নির্বাচক প্রধান এমএসকে প্রসাদ বিকেলে স্টেডিয়াম চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা শুনে একটু ব্যাকফুটে গিয়ে খেললেন, ‘‘আমি না ব্যাপারটা ঠিক জানি না। এই তো কিছুক্ষণ আগেই এলাম ভিজিয়ানগরম থেকে। এটা ইন্ডিয়া টিমের ভেতরের ব্যাপার। ওরাই বলতে পারবে।’’ তবে প্রাক্তন উইকেটকিপার হিসেবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কিপার হিসেবে সাহা রাহুলের চেয়ে অনেক এগিয়ে।’’ কিন্তু দেশের সেরা উইকেটকিপারের যদি চোট থাকে, তা হলে তো তাঁর সহজলভ্য বিকল্পকেই খেলাতে হবে।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস