রানির মন্ত্রে ‘মর্দানি’ চালিয়ে যাবেন কণিকা

জো ডর গয়া, সমঝো মর গয়া। ডরনা মানা হ্যায়। ডর কে আগে জিত হ্যায়। বুধবার সন্ধে সাতটা। দত্তপুকুর হাটখোলার শ্বশুরবাড়িতে খাটের উপর বসে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন কণিকা বর্মন। মঙ্গলবারের মোহনবাগান-বিএনআর ম্যাচের সেই রেফারি। যাঁর প্রতি জেমসের কুৎসিত আচরণে সোচ্চার ময়দান।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

জো ডর গয়া, সমঝো মর গয়া। ডরনা মানা হ্যায়। ডর কে আগে জিত হ্যায়।

Advertisement

বুধবার সন্ধে সাতটা। দত্তপুকুর হাটখোলার শ্বশুরবাড়িতে খাটের উপর বসে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন কণিকা বর্মন। মঙ্গলবারের মোহনবাগান-বিএনআর ম্যাচের সেই রেফারি। যাঁর প্রতি জেমসের কুৎসিত আচরণে সোচ্চার ময়দান।

কণিকার পৃথিবীতে কিন্তু জেমসের আচরণ এখন অতীত। বরং জন্মদিন আর ননদের বাড়ির মনসাপুজো নিয়েই কেটে গেল তাঁর সারা দিন।

Advertisement

জেমসকে কি ক্ষমা করে দিলেন? প্রথমে কিছু বলতেই চাইছিলেন না। অনেক চাপাচাপির পরে উত্তর, “মাঠে তিনটে দল থাকে। দু’টো দল খেলে। তৃতীয় দলটা আমাদের, রেফারিদের। ম্যাচটা যখন নব্বই মিনিট খেলিয়ে শেষ করেছি, তখন ব্যাপারটা ওখানেই শেষ।” ফের প্রশ্ন করতে হল, জেমস ও রকম কুশ্রী অঙ্গভঙ্গি করার পর মানসিক ভাবে সাময়িক ব্যাকফুটে চলে যাননি? কার্ড দেখিয়ে বের করে দিলেন না কেন? গ্রিন পুলিশে কর্মরত কণিকা এ বার ঈষৎ কড়া দৃষ্টি হেনে বললেন, “কেন কার্ড দেখাইনি, সে জবাব আপনাকে দিতে দায়বদ্ধ নই। আর মানসিক ভাবে ব্যাকফুটে? আমার পকেটে কার্ড ছিল। ওটাই আমাকে চার্জড রাখে। আর ওটা ন্যায্য পেনাল্টি। ভুল যখন করিনি, ভয় পাব কেন?” একটু থেমে সংযোজন, “ওঁর আচরণ খারাপ লেগেছে। তবে এটা খেলারই অঙ্গ। আশা করব, আগামী দিনে উনি নিজেকে শুধরে নেবেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে আর যাই হোক রেফারিং করা যায় না।”

ততক্ষণে পাড়া ভেঙে পড়েছে দত্তপুকুর হাটখোলার কালীবাড়িতে। যাদের বেশির ভাগের সঙ্গেই রোজ সকালে পাড়ার মাঠে দাপটের সঙ্গে ফুটবল খেলেন এই সাহসী বঙ্গকন্যা। মঙ্গলবার তাঁরাও দেখেছেন ‘বৌদির’ সাহস। সদ্য বিবাহিত কণিকা ও সব পাত্তা না দিয়ে বরং ফের বলতে শুরু করলেন, “জীবনের একটাই লক্ষ্যমোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে বাঁশি মুখে নামা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে চাই।”

মঙ্গলবার জন্মদিন ছিল। ম্যাচ শেষ করে বাড়ি ফিরে শাশুড়ি, দুই ননদ, স্বামী দীপক দাস এবং বাড়ির সকলের সঙ্গে মেতেছিলেন সেলিব্রেশনে। সকাল হতেই পরিবারের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন মছলন্দপুরে বড় ননদের বাড়ির মনসাপুজোয়। রাতে বাড়ি ফিরে খবরের কাগজে একটু চোখ বুলিয়ে পড়তে বসে গেলেন এ বারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

বারাসত, দত্তপুকুর, কামদুনিসেই বৃত্ত, যেখানে দিনের আলো চলে গেলেই অজানা আশঙ্কা নিয়ে চলাফেরা করেন মহিলারা। সাহস, জোশ সব ভেঙেচুরে যায় অনেকের। সেখানে মাঠ এবং মাঠের বাইরে এতটা ডাকাবুকো ইমেজের রহস্য কী? প্রশ্ন শুনেই স্বামী দীপক দাস ইশারা করেছিলেন মুখ না খুলতে। কণিকা বরং স্বামীকেই কড়া চোখে হলুদ কার্ড দেখিয়ে বললেন, “চুপ করে থাকলে চলবে? রুখে দাঁড়াতে হবে তো! তা হলেই মহিলারা মাথা তুলে চলতে পারবে।”

এটা অবশ্য কণিকার কথা নয়। এটা তাঁকে যিনি বলেছেন তিনি সপ্তাহ কয়েক আগেই শহরে এসে কণিকাকে দিয়ে গিয়েছেন ‘মর্দানি’ মেডেল।

কে তিনি? মুম্বইয়ের জনৈক আইপিএস অফিসার শিবানী শিবাজি রায়। থুড়ি, রানি মুখোপাধ্যায়। কয়েক দিন আগে শহরে এসে কণিকাকে যিনি বলে গিয়েছেন, “মহিলাদের জন্য তোমার মতো বাঙালি মর্দানিকেই চাই।”

মাঠেও বাঁশি মুখে সেই ‘মর্দানি’ দেখাতেই দত্তপুকুরের শ্বশুরবাড়িতে ধীরে ধীরে বাড়ছেন এই বাঙালি গৃহবধূ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন