সম্মান: এক অনুষ্ঠানে ঝুলন গোস্বামীর হাতে জার্সি তুলে দিল কাশ্মীরের ইক্রা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
হার না মানা দুই কন্যার অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের কাহিনি!
এক জন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলে নিজেকে অপরিহার্য প্রমাণ করেছেন। তিনি, ঝুলন গোস্বামী। আর এক জন এখন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। তিনি, ইক্রা রসুল। কী আশ্চর্য মিল বাংলার ঝুলন ও অশান্ত কাশ্মীরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ইক্রার জীবন কাহিনিতে।
নদিয়া জেলার চাকদহে ছেলেদের ক্রিকেট দলেও সেরা বোলার ছিলেন ঝুলন। কিন্তু একটা মেয়ে ছেলেদের সঙ্গে খেলবে, মেনে নিতে পারেনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। ফলে প্রতি পদে বাধা। তা ছাড়া ঝুলনের বাবা-মাও চাইতেন, লেখাপড়া করেই বড় হোক মেয়ে। কিন্তু ঝুলন হার মানেননি। চাকদহ থেকে রোজ ভিড় ট্রেনে চড়ে দক্ষিণ কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে অনুশীলন করতে আসতেন তিনি। ভারতীয় দলের হয়ে ঝুলনের অভিষেক হয় চেন্নাইয়ে ২০০২ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে। তার আট দিনে পরে লখনউয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই প্রথম টেস্টে নামেন।
ঝুলনের মতোই ম্যাচ উইনার ইক্রাকে ছাড়া মাঠে নামার কথা ভাবতেই পারত না বারামুল্লার ছেলেরা। অথচ ছেলেদের দলে ইক্রার খেলা নিয়েই যত সমস্যা। শেষ পর্যন্ত সমাধানসূত্র যা বেরোল, তা হল— হিজাব পরেই বল করতে হবে ইক্রাকে। তাতেও অল্প দিনের মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীর দলে জায়গা করে নেয় ইক্রা। তার পর ট্রায়ালের মাধ্যমে আদিত্য স্কুল অফ স্পোর্টসে সুযোগ পেয়ে কলকাতায় আগমন। আর ইক্রার ট্রায়াল নিয়েছিলেন মহিলাদের ওয়ান ডে-তে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ঝুলন। এখানেই শেষ নয়। কাশ্মীরি তরুণীর মেন্টরও তিনি।
আরও পড়ুন:শেষ টেস্টে জাডেজার বদলি হওয়ার দৌড়ে অক্ষর
সোমবার দুপুরে এক মঞ্চে দুই প্রজন্মের দুই ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে হারের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও শৈশবের সেই যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারেননি ঝুলন। বললেন, ‘‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বন্ধুরাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওরা বলেছিল, ঝুলনকে ছাড়া আমরা খেলব না।’’ সেই সঙ্গে ভারতীয় দলের সেরা বোলার জানিয়ে দিলেন, নিউজিল্যান্ডে ২০২১ বিশ্বকাপেও খেলতে চান তিনি। বললেন, ‘‘পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফিটনেস ধরে রাখতে চাই। দিন দশেকের মধ্যেই অনুশীলন শুরু করে দেব।’’ ঝুলনের আশা, মহিলাদের আইপিএলও দ্রুত শুরু হবে ভারতে।
মঞ্চে ঝুলনের সংবর্ধনা যখন চলছে, তখন অ্যাকাডেমির অন্যান্য ক্রিকেটার সঙ্গে বসেছিল বছর ষোলোর ইক্রা। বিরাট কোহালি, মহম্মদ আমের ও ঝুলনের ভক্তকে পরে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হল। অভিভূত ইক্রা বলছে, ‘‘ঝুলনদিদির মতো ভারতের হয়ে খেলাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’ ইক্রার স্বপ্ন কি সফল হবে? ঝুলন বললেন, ‘‘ওর প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু সফল হওয়ার জন্য ইক্রাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’