মগ্ন: মঙ্গলবার অনুশীলনে সনিকে নির্দেশ কোচ খালিদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গল গতবার আপনাকে ছেঁটে ফেলেছিল। রবিবার তো আপনার সামনে প্রতিশোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ? মঙ্গলবার সকালে অনুশীলনের পর প্রশ্ন শুনে খালিদ জামিলের মুখ লাল হয়। কিছুটা কঠিনও। তবে জবাব আসে নির্বিষ, ‘‘আমি ও সব নিয়ে ভাবি না। খেলা তো আমার সঙ্গে হবে না। হবে মোহনবাগানের সঙ্গে। আমার ব্যক্তিগত কোনও লক্ষ্য নেই। দলের পজিটিভ রেজাল্ট চাই।’’
প্রতিপক্ষের কোচ বিদেশি হলে কি একটু বেশি চাপ থাকে? ‘‘আমার কাছে স্বদেশী, বিদেশি সব কোচই ভাল। ইস্টবেঙ্গল ভাল দল। ওদের কোচও ভাল।’’ এনরিকে এসকুয়েদা এসে যাওয়ায় তো ইস্টবেঙ্গলের শক্তি বেড়েছে। মানছেন? ‘‘এনরিকের খেলা দেখেছি। ভাল খেলোয়াড়। তবুও আমরা ভাল ফল চাইছি।’’
মোহনবাগান কোচ হয়ে আসার পরে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করছেন খালিদ। কিন্তু পুরোপুরি বদলালেন কই। সকাল দশটায় অনুশীলন থাকলেও সাড়ে সাতটার মধ্যে ক্লাবে চলে আসছেন আগের মতোই। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে লুকিয়ে পড়ছেন না বা পালিয়ে যাচ্ছেন না।
দেরিতে প্রার্থনায় আসার জন্য কিংসলে ওবুমেনেমেকে কড়া মেজাজ দেখালেও, অনুশীলনের সময় তাঁকে পিঠও চাপড়ে দিচ্ছেন। গতবারের মতো রাগ দেখিয়ে একেবারে ব্রাত্য করছেন না কোনও ফুটবলারকে। ইস্টবেঙ্গলে থাকার সময় পরমর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে গুরুত্ব দিতেন না খালিদ। এ দিন দেখা গেল সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করছেন ম্যাচ নিয়ে।
আসলে লাল-হলুদ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পরে প্রায় দশ মাস ক্লাব কোচিং থেকে দূরে ছিলেন খালিদ। সেটাই সম্ভবত কলকাতার ফুটবলের আবহ সম্পর্কে ‘শিক্ষা’ দিয়েছে আইজলকে আই লিগ এনে দেওয়া কোচকে। তার কিছুটা হলেও প্রতিফলন ঘটছে এখন। মনের মধ্যে যে আগুন বা বিদ্বেষই থাক, তা ছাইচাপা দিয়ে রাখছেন। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, ডার্বি জিতে কলকাতায় নতুন জন্ম চাইছেন সনি নর্দেদের কোচ। দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কাদের খেতাব জয়ের আশা কার্যত নেই। তবুও আই লিগের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে ফুটবলারদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছেন তাঁদের কোচ। এতটাই যে, ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের মন্ত্র দিচ্ছেন, ‘‘আমরা পাঁচজন মিলে গোল রুখব, পাঁচ জন মিলে গোল করব। তাতে সাফল্য আসবে।’’
ইস্টবেঙ্গলে থাকার সময় তাঁর একটা ‘গুমঘর’ ছিল (লাল-হলুদে খালিদের ঘরকে ওই নামেই ডাকা হত)। সেখানে পছন্দের ফুটবলারদের ডেকে কথা বলতেন। বাকিদের ব্রাত্য করে রাখতেন। এ দিন দেখা গেল সনি নর্দের সঙ্গে আলোচনার কিছুক্ষণ পরই ইউতা কিনয়োয়াকি, ওমর এলহুসেইনি, আজহারউদ্দিন মল্লিকের মতো মাঝমাঠের ফুটবলারদের নিয়ে মাঠেই তাঁকে সভা করতে। এই পর্বের পর দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা, সনিদের ডেকে নিয়ে গিয়ে পরামর্শ দেওয়া। প্রতিটি আলোচনার পর সেই চার-পাঁচজনকে বল ছাড়া ‘শ্যাডো ট্রেনিং’। এক ফুটবলার বলছিলেন, ‘‘ডার্বিতে রক্ষণ জমাট রাখার নানা ফর্মুলা দিচ্ছেন আমাদের কোচ। যা আগে হত না।’’
এ দিনের অনুশীলনে দেখা গেল কর্নার ও ফ্রি কিকে গোল করা ও গোল রোখার উপর জোর দিচ্ছেন খালিদ। বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সেট পিস খুব ভাল। ডিকার (লালরিন্দিকা রালতে) কর্নার ও ফ্রি কিক থেকে ওরা গোল পাচ্ছে।’’ প্রায় দেড় বছর পরে সনি নর্দে নামছেন ডার্বিতে। সব চেয়ে বড় কথা পুরো সুস্থ দল পাচ্ছেন খালিদ।