হগির বার্তা আর ম্যাঞ্চেস্টারের জয় না থাকলে আরও নালিশ করতাম

গত বারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর অধিনায়ক আবার কলম ধরলেন আনন্দবাজারের জন্য। নাইট সংসারের সব হালহকিকত জানাচ্ছেন গৌতম গম্ভীর। গত বারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর অধিনায়ক আবার কলম ধরলেন আনন্দবাজারের জন্য। নাইট সংসারের সব হালহকিকত জানাচ্ছেন গৌতম গম্ভীর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

দুই মেজাজে দুই নাইট। ব্র্যাড ও মর্নি

এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতে পারে না। ১৩ এপ্রিল, ফসল কাটার মরসুম শুরুর দিন একটা খবর দেখলাম। অসময়ের বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উত্তরপ্রদেশের ফয়জাবাদের চাষীদের লজ্জাজনক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। বিপর্যস্ত চাষীরা ৬৩ টাকা, ১০০ টাকার চেক নিয়ে দাঁড়িয়ে— ছবিগুলো দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে টিভিতে খবর দেখছিলাম। ওদের এক জন বলে উঠল, ‘‘জয় জওয়ান, জয় কিষান কথাটা বদলে করে দেওয়া উচিত যে কিষান, সে হয়রান।’’

Advertisement

খাঁটি কথা। ব্যাপারটা রাজনৈতিক ভাবে দেখবেন না। কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের প্রতি একটু সংবেদনশীল হওয়া উচিত। ভুলে যাবেন না, এটা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বছর।

১৩ এপ্রিল আবার আমাদের কেসি কারিয়াপ্পার জন্মদিন। শুনলাম হোটেলে আমাদের টিম রুমে একটা ছোটখাটো কেক কাটার উৎসব হয়েছে। তার পর সবাই সবার মুখে প্রচুর কেক মাখিয়েছে আর একে অন্যকে সুইমিং পুলে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের ড্রেসিংরুমে কী ধরনের মজা হয়, ছেলেরা ভালই বুঝিয়ে দিয়েছে তরুণ কারিয়াপ্পাকে।

Advertisement

গেইল, ডে’ভিলিয়ার্সদের বিরুদ্ধে তরুণ কারিয়াপ্পাকে খেলানো নিয়ে তর্ক হচ্ছিল। আমি কিন্তু তরুণদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে ওদের পাশে থাকার নীতি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তরুণ ক্রিকেটারের অভিষেকটা হয়তো কঠিন হল। কিন্তু ওর প্রথম আইপিএল উইকেট যে এবি ডে’ভিলিয়ার্স, সেই তথ্যটা ওকে কত আত্মবিশ্বাস দেবে ভেবে দেখুন।

সন্ধেবেলা চুপিচুপি টিম রুমে ঢুকে পড়েছিলাম। কারিয়াপ্পার জন্মদিনের পার্টিটা কত লাগামহীন হয়েছে, দেখব না? সবে অনুসন্ধান শুরু করেছি, হঠাৎ চোখে পড়ল টিম রুমের দেওয়াললিখন। বার্তাটা পড়ে হাসতে হাসতে পেট প্রায় ফেটে যাচ্ছিল— মর্নি, ম্যাচ জেতায় ক্যাচ। আরসিবির বিরুদ্ধে ওর ক্যাচ ফস্কানো নিয়ে ঠাট্টা আর কী! বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, লম্বা দক্ষিণ আফ্রিকানের জন্য এই বার্তাটা লিখে রেখেছিল আমার অজি টিমমেট ব্র্যাড হগ। ওকে থামিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন। তবে মর্নিকে যা চিনি, তাতে হগির কথাটা ও হালকা ভাবে নেবে না। ক্রিকেটটা ওর কাছে গর্বের বিষয়।

হগির ওই বার্তা ছাড়াও টিম রুমে কাটানো সময়টুকু জলে যায়নি। প্লে-স্টেশনে একটু ফুটবল খেললাম। সুনীল নারিনকে একেবারে গো-হারান হারালাম। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে দেখলাম ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে ৪-২ হারাতে। আরসিবির বিরুদ্ধে হারের ক্ষতটা ইউনাইটেডের জয় সারিয়ে দিল, সেটা বলব না। তবু কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখটা ভুলে গিয়েছিলাম। বলা ভাল, ম্যান ইউ জেতার পর আমার নালিশ করাটা অনেক কমে গিয়েছিল।

যাই হোক, মেয়েদের ডাবলসে এক নম্বরে পৌঁছনোর জন্য সানিয়া মির্জাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। ওয়েল ডান সানিয়া! ভারতে মেয়ে হয়ে জন্মানো সহজ নয়। খেলাধুলোয় দারুণ কিছু করা তো আরওই কঠিন। নিন্দুকেরা হয়তো এর পরেও সানিয়ার সিঙ্গলস রেকর্ড তুলে ধরবেন। কিন্তু সেটা বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। মেয়েদের টেনিসকে সানিয়া কী দিতে পারেনি, সেটা না ভেবে ও কী কী দিয়েছে, এক বারের জন্য অন্তত সেটা সেলিব্রেট করা যায় না?

আমার পরিবার সোমবারই বাড়ি ফিরে গেল, তাই কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে ডিনার করছিলাম। ব্যাটের মান থেকে টিম হোটেলে খাবারের অসম্ভব দাম— কিছুই আলোচনা থেকে বাদ দিইনি। হঠাৎ করে প্রয়াত অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিচি বেনোর প্রসঙ্গ উঠল। একটা কথা ভাবছি, জানি না সেটা আদৌ বাস্তবসম্মত কি না। প্রয়াত মিস্টার বেনোর সম্মানে ওই ঘিয়ে রঙের জ্যাকেটটা তুলে রাখা যায় না? কী বলেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন