‘কিংগ কোহালির ধারাবাহিকতাই জয়ের আসল চাবিকাঠি’

সবাই জানে, কোহালি ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, পুল-সহ সব ধরনের ক্রিকেটীয় শটই দুর্দান্ত মারে। কিন্তু শুক্রবার বিরাট দেখিয়ে দিল, ও যে দিন মেজাজে ব্যাট করে সে দিন এ, বি, সি— প্রতিপক্ষের কোনও পরিকল্পনাই খাটে না।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৪৬
Share:

আলিঙ্গন: বিজয়ী বিরাটকে অভিনন্দন পরাভূত এ বি-র। রয়টার্স

আর মাত্র ১৪টা শতরান। আশা করি, যে গতিতে বিরাট কোহালির রথ ছুটছে, তাতে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে লক্ষ্যপূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। সকলেই আশাবাদী হয়ে উঠেছে যে, একদিনের ক্রিকেটে সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের ৪৯ টি শতরানের কৃতিত্ব স্পর্শ করে ফেলবে আর এক ভারতীয় ক্রিকেটার। যার নাম বিরাট কোহালি।

Advertisement

সবাই জানে, কোহালি ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, পুল-সহ সব ধরনের ক্রিকেটীয় শটই দুর্দান্ত মারে। কিন্তু শুক্রবার বিরাট দেখিয়ে দিল, ও যে দিন মেজাজে ব্যাট করে সে দিন এ, বি, সি— প্রতিপক্ষের কোনও পরিকল্পনাই খাটে না। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক এডেন মার্করাম এ দিন কোহালি ক্রিজে আসতেই দু’টো গালি রেখে বন্ধ করতে গিয়েছিল ওর সিঙ্গলসগুলো। কিন্তু বিরাট শিল্পীর মতো ঠিক ফিল্ডারদের মাঝে ফাঁক খুঁজে স্কোরবোর্ডকে সচল রেখেই যাচ্ছিল। এর পরেই মার্করাম এক্সট্রা কভারকে ডান দিকে সরিয়ে বিরাটের ড্রাইভগুলো আটকাতে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও বিরাটের রান নেওয়া আটকাতে পারল না।

ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবাই জানে, ব্যাটসম্যান হাফভলি পেলে ড্রাইভ করবে। শর্ট বল পেলে হুক বা পুল করবে। অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল পেলে স্কোয়ার কাট মারবে। কিন্তু বোলার যখন এই বলগুলো করবে না তখন? তখন স্কোরবোর্ডে ‘ডট’ বল না রেখে কী ভাবে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তা দেখিয়ে দিল শুক্রবার সুপারস্পোর্ট পার্কে বিরাটের ৯৬ বলে ১২৯ রানের ইনিংস। আর এখানেই অন্য ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ফারাক বিরাটের। যার সুবাদে ১০৭ বল বাকি থাকতেই আট উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজ ৫-১ করে ফেলল ভারত। কখনও বিদেশে এত আধিপত্য নিয়ে কোনও সিরিজ জেতেনি ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকায় তো পঁচিশ বছরে এই প্রথম বার সিরিজ জিতল কোনও ভারতীয় দল। ম্যাচের সঙ্গে সিরিজের সেরাও কোহালি। একদিনের সিরিজে ৫৫৮ রান করল ছেলেটা। একটা সিরিজে এতটা দাপট কি আর কেউ দেখাতে পেরেছে? সচিন ছাড়া আর কারও নাম মনে করা যাচ্ছে না।

Advertisement

ভারতীয় ইনিংসের শুরুতেই ‘রাইজিং ডেলিভারি’ সামলাতে না পেরে ফিরেছিল শিখর ধবন (১৮)। রোহিত শর্মাও (১৫) যে শটটা সব থেকে ভাল মারে, সেই ‘আধা হুক আধা পুল’ মারতে গিয়ে বড় রান পায়নি। কিন্তু বিরাট এসে ফের খেলা ধরে নিল। ওর ধারাবাহিকতা দেখে গোটা বিশ্ব মুগ্ধ। প্রত্যেক ইনিংসে রান করার পরেও কী অসম্ভব খিদে নিয়ে প্রত্যেকটা নতুন দিনে! এ দিনই চতুর্থ ভারতীয় হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে নিজের শততম ক্যাচটাও ধরল বিরাট। কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে ব্যাট হাতে বিরাটের অভাবনীয় ধারাবাহিকতা। কী টেস্ট, কী ওয়ান ডে, স্বপ্নের ফর্ম চলছে তো চলছেই।

ছয় ম্যাচের ‘বিরাট’ খতিয়ান।

বছর কয়েক আগে এই বিরাট কোহালিই ইংল্যান্ড থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিল। সেই জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড-দের বয়স বেড়েছে। কিন্তু বিরাট কোহালি রয়ে গিয়েছে বিরাট কোহালিতেই। ফলে এ বার ইংল্যান্ডেও বিরাটের সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে দলটা প্রথম দুই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এ রকম কেঁপে গিয়েছিল, সেই দলটা একদিনের সিরিজে এ রকম দাপিয়ে বেড়াল কী ভাবে?

জোহানেসবার্গে তৃতীয় টেস্ট জিতেই ভারতীয় দল ছন্দটা পেয়ে গিয়েছিল। সেটাই গোটা দলে সঞ্চারিত করেছে বিরাট। ওর আগ্রাসী মানসিকতাও এই সাফল্যের বড় কারণ। সিরিজ ৫-১ করবে বলে শার্দূল ঠাকুর ছাড়া বাকি দল একই রেখেছিল ভারত। কোনও পরীক্ষায় রাস্তাতেই হাঁটেনি। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা দলটা দেখলাম ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি, কাগিসো রাবাডা এবং তবরেজ সামশি-কে বাইরে রেখে নামল। যার অর্থ, ফের ভারতের সামনে হারের সম্মুখীন হয়ে আত্মবিশ্বাসের দফারফা হয়ে যাওয়া। জানা নেই, এক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা নির্বাচকদের অঙ্কটা ঠিক কী! ছিল!

এ ছাড়াও, ভারতের টপ অর্ডারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার কখনও টক্কর দিতে পারেনি একদিনের সিরিজে। বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, শিখর ধবন-দের পাশে একমাত্র ফ্যাফ ডুপ্লেসির একটা শতরান ছাড়া সে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের রান কোথায়?

এ দিনও জোন্ডোর ৫৪ রান ছাড়া বলার মতো কিছু নেই। যুজবেন্দ্র চহালের একটা ফুল লেংথ ডেলিভারি স্কোয়ার কাট করতে গিয়ে যে ভাবে এবি ডিভিলিয়ার্স-এর লেগ স্টাম্প ভেঙে গেল, তা আমাকে অবাক করেছে। আসলে ভারতের রিস্ট স্পিনাররাও এবি-দের আত্মবিশ্বাস শুষে নিয়েছে ব্লটিং পেপার-এর মতো। এ সবের মিলিত প্রয়াসেই সিরিজ ৫-১ করতে পেরেছে বিরাটরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন