বিরাটের সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকেও এল না জয়!

বিরাট কোহালিই শুধু খেলবেন! প্রতি ম্যাচে সেঞ্চুরিও করবেন! গুয়াহাটিতে ১৪০, বিশাখাপত্তনমে অপরাজিত ১৫৭-র পরে এ বার পুণেতেও ১০৭। গত দশটি আন্তর্জাতিক ম্যচে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ছয়।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

পুণে শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

সফল: ফিরে এসেই চার উইকেট বুমরার। শনিবার পুণেতে। এএফপি

ছোটবেলায় একটা লাঠি ও লাঠির গোছার সেই গল্প নিশ্চয়ই অনেকেরই শোনা। একটা লাঠি ভাঙা সহজ, কিন্তু লাঠির গোছা ভাঙা অসম্ভব। শনিবার পুণেয় প্রমাণ হল, ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। একা বিরাট কোহালিকে ভাঙা কঠিন, তাঁর দলকে নয়।

Advertisement

বিরাট কোহালিই শুধু খেলবেন! প্রতি ম্যাচে সেঞ্চুরিও করবেন! গুয়াহাটিতে ১৪০, বিশাখাপত্তনমে অপরাজিত ১৫৭-র পরে এ বার পুণেতেও ১০৭। গত দশটি আন্তর্জাতিক ম্যচে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ছয়। একটি ৯৭-সহ হাফ সেঞ্চুরি তিনটি। কিন্তু দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের ওপর ভরসা করা যায় কি না, সেটাই প্রশ্ন।

বিশ্বকাপের আট মাস আগে দেখা যাচ্ছে, সেনাপতি বিরাট এতটাই এগিয়ে যাচ্ছেন যে, তাঁর ফৌজ রয়ে যাচ্ছে অনেক পিছনে। বিরাট হয়ে পড়ছেন একা। বিশ্বের ন’নম্বর ওয়ান ডে টিমকে হারাতেও তখন কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। তিন দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমুদ্র উপকুলে যে ট্রেলার দেখিয়েছিল, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে একটু উপরে উঠে শনিবার পুণেয় আসতেই জেসন হোল্ডাররা পুরো সিনেমাটা দেখিয়ে দিলেন। ফলাফল ভারতের ৪৩ রানে হার। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ এখন ১-১।

Advertisement

শনিবার পাটা উইকেটে ২৮৩ রান তাড়া করতে গিয়েও সেই বিরাটই ভরসা হয়ে ওঠেন ভারতীয় দলের। বিরাটের ১০৭ ও অতিরিক্ত ৬ রান বাদ দিলে যে ১২৭ রান পড়ে থাকে, সেটা বাকি দশজনের। খেলাটা যেখানে ক্রিকেট, সেখানে উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কেউ তাঁকে সাহায্য না করলে কি ম্যাচ জেতা যায়? মার্লন স্যামুয়েলস তাঁর স্টাম্প ছিটকে দেওয়ার পরে ভারতও ম্যাচ থেকে ছিটকে গেল। কোহালি যখন আউট হন, তখন দলের স্কোর ২২০-৭। শেষে আর ২৪০-এর বেশি এগোতে পারল না ভারত।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের শেষদিকে ম্যাচের সেরা অ্যাশলি নার্সের ২২ বলে তোলা ৪০ রানটাই তফাৎ গড়ে দেয়। বুমরা দশ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে চার উইকেট নিলেও ভুবনেশ্বর তাঁর শেষ ওভারে একটা ছয় ও তিনটি চার-সহ ২১ রান দিয়ে ফেলেন। শেষ ওভারে কেমার রোচের ক্যাচ ফেলে বাউন্ডারিও দিয়ে দেন তিনি। ৩৫ বলে ৫০-এর জুটি গড়েন নার্স ও রোচ। ম্যাচের শেষে এই ছোট রানটাই বিরাটদের কাছে সব চেয়ে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না অধিনায়ক। সঙ্গে যে কেউ ছিলেন না!

ম্যাচের পরে তা স্বীকারও করে নেন বুমরা। বলেন, ‘‘৩৫ ওভার পর্যন্ত আমরা ভালই বল করেছি। কিন্তু শেষ দিকে প্রচুর রান দিয়ে ফেলি। সেটাই তফাৎ গড়ে দেয়। ভুবি শুরুটা ভালই করেছিল। কিন্তু শেষে মার খেয়ে যায়। এ রকম মাঝে মাঝে হয়। দিনটা খারাপ যায়। ওরাও ভাল ব্যাটিং করেছে, সেটাও তো মানতে হবে। পরের ম্যাচগুলোতে আরও ভাল প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে আমাদের।’’

ঘরের মাঠে বিরাটের শেষ পাঁচ ওয়ান ডে ইনিংস ১২১, ২৯, ১১৩, ১৪০ ও অপরাজিত ১৫৭। শেষ ১৬টি ওয়ান ডে ইনিংসের মধ্যে তাঁর আটটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। ১৪৫৫ রান। বাকিরা তাঁর ধারে কাছেও আসেন না। পুণের মাঠে সেঞ্চুরি ছিল না তাঁর। এ বার এই মাঠেও সেঞ্চুরির মাইলফলক পুঁতে দিয়ে গেলেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু দলকে জেতাতে পারলেন না।

এমসিএ স্টেডিয়ামের পাটা উইকেটেও রোহিত শর্মা প্রচন্ড চাপে! প্রথম ওভারেই জেসন হোল্ডার তাঁর মিডল স্টাম্প ছিটকে দেন। নার্সের সোজা বল সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ-র ফাঁদে পড়েন শিখর ধওয়ন। ওয়ান ডে-তে এই নিয়ে ১৫ বার অফস্পিনারকে উইকেট দিয়ে এলেন ধওয়ন। রোগটা আর সারল না। আগের ম্যাচে বিরাটের সঙ্গে বড় জুটি গড়া রায়ডু লাইন ভুল করে বোল্ড হয়ে যান। পরের বলেই ফ্যাবিয়েন অ্যালেন তাঁর ক্যাচ ফেলে ‘গোল্ডেন ডাক’ (প্রথম বলেই আউট) হওয়া থেকে বাঁচান ঋষভ পন্থকে। বেশিক্ষণ টেকেননি তিনিও। যেন আউটের মিছিল। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে এ সব সহ্য করতে হচ্ছিল বিরাটকে।

স্টাম্পের পিছনে যতটা উজ্জ্বল লেগেছিল ধোনিকে, স্টাম্পের সামনে কিন্তু ততটাই ফিকে। ১১ বলে মাত্র সাত রান করলেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতেই পারলেন না। স্টাম্পের পিছনে ধরা পড়ে যান। এই বছরে ১২টি ওয়ান ডে ইনিংস খেলে ২৫২ রান করেছেন ধোনি। ব্যাটিং গড় ২৫.২০। স্ট্রাইক রেট এ বছর ৬৮.১০। এর আগে যা বরাবরই থেকেছে ৭৫-এর ওপর। ব্যাট হাতে সময় যে খারাপ যাচ্ছে, এই পরিসংখ্যানেই তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট।

ধোনি ফিরে যাওয়ার সময় ভারত তখনও জয় থেকে ৯০ রান দূরে। বিরাট-ভরসাতেই ছিল ভারত। কিন্তু তিনি আউট হতেই সব শেষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন