সনি যে দিন ‘শত্রু’

আমি ভাল খেললে মনে মনে কলকাতাও খুশি হবে

দিয়েগো ফোরলান যখন রবীন্দ্র সরোবর ছেড়ে বাসে উঠছিলেন, খুব বেশি হলে দু’-একটা মোবাইল ক্যামেরা ঝলসে উঠল। রাস্তার দু’ধারে জমে ওঠা ভিড়ের মধ্যে কোনও উন্মাদনা দেখা গেল না! কিন্তু সোনালি চুলের লোকটা স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে বেরনো মাত্র সেই চেনা শব্দব্রহ্ম— ‘‘সনি, সনি, সনি...’’।

Advertisement

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

প্র্যাকটিসে সনির মেজাজ। সোমবার। ছবি: উৎপল সরকার

দিয়েগো ফোরলান যখন রবীন্দ্র সরোবর ছেড়ে বাসে উঠছিলেন, খুব বেশি হলে দু’-একটা মোবাইল ক্যামেরা ঝলসে উঠল। রাস্তার দু’ধারে জমে ওঠা ভিড়ের মধ্যে কোনও উন্মাদনা দেখা গেল না!

Advertisement

কিন্তু সোনালি চুলের লোকটা স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে বেরনো মাত্র সেই চেনা শব্দব্রহ্ম— ‘‘সনি, সনি, সনি...’’।

লেকের রাস্তার দু’ধারের ভিড়টা পরিষ্কার বলে দিচ্ছিল, ছয় বছরের পুরনো বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের জন্য নয়, ময়দানের অতিপরিচিত নায়ককে বরণ করতেই অপেক্ষা করছিল শহরের ফুটবলজনতা।

Advertisement

কিছুক্ষণ আগে প্র্যাকটিসের জন্য মাঠে ঢোকার সময় আবার অন্য গল্প। বাস থেকে সনি নামতেই খুদে সইশিকারিরা ঘিরে ধরল মুম্বই সিটি এফসি-র মোহনবাগানি তারকাকে। সইয়ের আবদার মেটাতে মেটাতে সনি টিমমেটদের থেকে এতটাই পিছিয়ে পড়েছিলেন যে, বাইরে আর কোনও ফুটবলার নেই ভেবে রবীন্দ্র সরোবরের গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সনি তাতেও যেন এতটুকু বিচলিত নন। হাইতি ফরোয়ার্ডকে ঘিরে কলকাতার আবেগ কী রকম নিজেও তো ভাল জানেন!

ম্যাচের আগে আপনাকে ঘিরে এই উন্মাদনা কিন্তু মঙ্গলবার খে‌লার সময় গ্যালারিতে থাকবে না! আপনার বিপক্ষ কলকাতার সমর্থনেই গলা ফাটাবে মাঠ। প্রশ্নটা শুনে প্রথমে হেসে ফেললেন সনি। তার পরে বললেন, ‘‘সেটাই তো স্বাভাবিক। আর আমি পেশাদার ফুটবলার। যখন খেলি, এ সব ভাবি না। তবে এটাও ঠিক, কলকাতায় খেলতে এলে সব সময় ভাল করার একটা অনুপ্রেরণা পাই। আর দেখবেন, কাল আমি ভাল খেললে কলকাতার অনেকেও কিন্তু মনে মনে খুশি হবেন।’’

আইএসএল শেষ হলে ফের কলকাতা! আবার মোহনবাগান জার্সিতেই নিশ্চয়ই আই লিগে দেখা যাবে আপনাকে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে গেলেন সনি। শুধু বললেন, ‘‘আমি এখন মুম্বই দলের ফুটবলার। তাই আই লিগ বা অন্য ক্লাব নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’ তবে সনি তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে আশাবাদী হতেই পারেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। বাগান কোচ সঞ্জয় সেন বা তাঁর সহকারী শঙ্করলাল চক্রবর্তীর সঙ্গে ফোনে সনির নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে খবর।

এবং শুধু কী শহরের সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা? মঙ্গলবারের ম্যাচে ফোরলানের থেকে সনিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কলকাতার কোচ জোসে মলিনা-ও। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘সনি আর ওদের আর্জেন্তাইন প্লেয়ার দিফেদেরিকো একটু অন্য ধরনের ফুটবলটা খেলে। তাই ওদের উপর আমাকে নজর রাখতেই হবে। আর ফোরলানের বয়স এখন সাঁইত্রিশ।’’

সনিকে আটকাতে নাকি তাঁর ডিফেন্ডারদের আলাদা ভাবে স্ট্র্যাটেজিও বুঝিয়ে দিয়েছেন মলিনা। এটিকের স্প্যানিশ কোচ মুম্বইয়ের সব খেলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম লেগে হিউম-দ্যুতিরা যখন খেলেছিলেন, তখন সনি তাঁর দেশের হয়ে খেলতে ব্যস্ত ছিলেন। ফিরতি লেগে তাই বাড়তি সতর্ক মলিনার কলকাতা। প্রীতম কোটাল যেমন বললেন, ‘‘সনির সঙ্গে একই ক্লাব টিমে খেলি। তাই জানি ও কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আমরা বাড়তি সতর্ক থাকবই।’’

সনি আবার পাল্টা এগিয়ে রাখছেন আটলেটিকোকে। বললেন, ‘‘এটিকে খুব ভাল খেলছে। এখনও কোনও ম্যাচ হারেনি। ওদের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হবে না।’’ পাশাপাশি আবার চোট সারিয়ে ফোরলান টিমে ফেরায় মুম্বইয়ের শক্তি বেড়েছে বলে দাবি করছেন সনি। ‘‘ফোরলানের মতো প্লেয়ারের পাশে খেলতে পারাটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পেয়েছিল। অথচ একেবারে মাটির মানুষ। মাঠের মধ্যে বা বাইরে অসাধারণ। ও দলে থাকলে আমরা অনেক বেশি উদ্দীপ্ত থাকি।’’

আইএসএলের মাঝে আবার হয়তো হাইতির হয়ে খেলতে যেতে হবে সনিকে। ৯ নভেম্বর ফরাসি গায়ানার বিরুদ্ধে ক্যারিবিয়ান কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচ রয়েছে সনির দেশের। এই মুহূর্তে অবশ্য সনির মাথায় শুধুই মুম্বইকে সেমিফাইনালে তোলার চিন্তা। বললেন, ‘‘প্রথম দু’বার আমরা সেমিফাইনাল যেতে পারিনি। এ বার সেটাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।’’

আই লিগে সনি গোল করলে উচ্ছ্বাসে ভেসে যান বাগান সমর্থকেরা। তাঁরাই হয়তো মঙ্গলবার প্রার্থনা করবেন, সনি যেন আজ গোল না পান! আর সনির নিজের প্রার্থনা? ‘‘কলকাতা আমার চেনা শহর। তাই এখানে গোল করে মুম্বইকে জেতাতে পারলেও দারুণ ভাল লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন