দাপট: আড়াই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কোহালিরা। পিটিআই
ধ্রুপদী ক্রিকেট ধ্বংস হচ্ছে আইপিএলের সৌজন্যে। এই কথাটা যাঁরা বলেন, তাঁদের কাছে কুলদীপ যাদব একটা প্রহেলিকা।
এই মুহূর্তে ক্রিকেটে বিশ্বে সব ধরনের পর্যায় মিলিয়ে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের নাম যেমন বিরাট কোহালি। তেমনই সীমিত ওভার ও টেস্ট মিলিয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বত্রাস স্পিনারের নাম কুলদীপ যাদব। যাঁর উঠে আসা আইপিএল থেকেই।
বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের সাফল্য এসেছিল এই কুলদীপের হাত ধরেই। শনিবার টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের নজির গড়া জয়টাও এল কুলদীপের পাঁচ উইকেটের সৌজন্যেই (৫-৫৭)। চায়নাম্যান এই রিস্টস্পিনারের ঘূর্ণির ফাঁদে পড়েই ধ্বসে যায় ফলো অন করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস। মাত্র ৫০.৫ ওভারে ১৯৬ রানে অলআউট হয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। দেশের মাটিতে ভারতের শততম টেস্ট জয় স্মরণীয় হয়ে থাকল কুলদীপের সৌজন্যে। ইনিংসে টেস্ট জেতার ক্ষেত্রে এটি ভারতের সব চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। ইনিংস ও ২৭২ রানে টেস্ট জিতল ভারত।
এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে তিন ধরনের ফর্ম্যাটে বিরাট কোহালি ও কে এল রাহুল অপরিহার্য। ঠিক তেমনই বোলার হিসেবে কুলদীপ। এ দিনের পারফরম্যান্সের পরে তিনটি ফর্ম্যাটেই পাঁচ উইকেট পাওয়া হয়ে গেল উত্তরপ্রদেশের এই স্পিনারের।
বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অনেক বড় স্পিনার দাপাচ্ছেন। ইয়াসির শাহ (পাকিস্তান), ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা), আদিল রশিদ (ইংল্যান্ড), যুজবেন্দ্র চহাল (ভারত) সেই তালিকায় আসবেন। কিন্তু এঁদের সকলকেই ব্যাটসম্যানরা পড়ে নিতে পারেন। কিন্তু কুলদীপের বলের রহস্য এখনও অজানা ব্যাটসম্যানদের কাছে।
প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার ভগবৎ চন্দ্রশেখরের মতোই কুলদীপের সংগ্রহে এমন কিছু ‘ডেলিভারি’ রয়েছে, যা খেলা যায় না। ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানও আউট হয়ে যেতে পারেন যে কোনও মুহূর্তে।
আরও পড়ুন: লাল বলে বিশেষ প্রস্তুতিতেই সফল, বলছেন কুলদীপ
চায়নাম্যান বা লেগস্পিনাদের বড় সমস্যা হল দু’টো। এক, প্রতি ওভারে দু’একটা ‘লুজ়’ বল ফেলা। যা শর্ট বল বা ফুলটস হতে পারে। দুই, নিখুঁত লাইন ও লেংথ বজায় রাখা। কিন্তু কুলদীপ এই দুই সমস্যা থেকেই মুক্ত। প্রতি ওভারে একটা-দু’টো ‘শর্ট বল’ বা ফুলটস কুলদীপ করেন না। ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকেই জানি, এটা কুলদীপ রপ্ত করেছেন অবসর সময়ে নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করে। তাই লাইন ও লেংথেও এত নিখুঁত।
গত এক বছরে ভারতীয় দলের কুলদীপের পারফরম্যান্স দেখার পরে বলব, আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারত অধিনায়ক বিরাটের তুরুপের তাস হতে চলেছেন কুলদীপ যাদব। সেখানে ওঁর সফল হওয়ার সম্ভাবনা আশি শতাংশ। কেন? অস্ট্রেলিয়ার পিচে বাউন্স থাকবে। কুলদীপ কিন্তু ‘ছোট বল’ (শর্ট বল) করেন না বললেই চলে। অফস্টাম্পের উপর থেকে লেগ স্পিন করায়। একই ভাবে গুগলিটাও ঠিক একই জায়গায় দেন। ফলে ব্যাটসম্যান ধন্দে পড়ে যান। এটাই হল কুলদীপের মাহাত্ম্য। বাউন্সি পিচে কুলদীপের এই ধরনের বল অস্ট্রেলিয়াতেও ত্রাস সঞ্চার করবে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে।