উদ্বেগ: শেষ দিনে বাংলাকে জিততে গেলে করতে হবে আরও ৩০৪ রান। চিন্তায় মনোজ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বাংলা বনাম দিল্লি? না কি অশোক ডিন্ডা বনাম দিল্লি? ম্যাচ যত এগোচ্ছে, এই প্রশ্নটি যেন ততই জোরাল শোনাচ্ছে। মঙ্গলবার ইডেনে ২০১৯ সালের প্রথম দিনই পাঁচ উইকেট নিয়ে বছর শুরু করলেন ডিন্ডা। কিন্তু তাঁর প্রাপ্তির সঙ্গে তাঁর দলের পারফরম্যান্স মিলিয়ে দেখলে হয়তো এই কৃতিত্ব চোখে পড়বে না। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০ ওভার বল করেছেন বঙ্গ পেসার। ৮৮ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট। বাকি বোলারেরা তাঁর এই পরিশ্রমের যোগ্য মর্যাদা দিতে পারলেন কি?
বাংলার থেকে প্রথম ইনিংসে ২০ রানে এগিয়ে দিল্লি। দ্বিতীয় ইনিংসে নীতীশ রানার দলের রান ৩০১। মনোজ তিওয়ারিদের সামনে ৩২২ রানের পাহাড়-সমান লক্ষ্য। যা ছয় পয়েন্টের আশাকে ম্লান করে দেওয়ার আশঙ্কা জাগিয়েছে। দিনের শেষ তিন ওভারে ১৮ রান যোগ করেন বাংলার দুই ওপেনার। শেষ দিন ৩০৪ রান তাড়া করে ছয় পয়েন্ট তুলে আনা কতটা কঠিন হতে পারে, তা হয়তো অনুমান করতে পারছেন দলের প্রত্যেকেই। কিন্তু আস্থা হারাচ্ছেন না ডিন্ডা। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘‘এই ম্যাচ জিতবই। আমার ধারণা, ১৫ ওভার আগেই এই ম্যাচ বার হয়ে যাবে।’’
যে পিচে প্রথম দুই ইনিংসে দু’দল ২৫০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি, সেই পিচে তৃতীয় দিন কী ভাবে এত রান উঠল? নেপথ্যে দিল্লির দশম উইকেটের জুটি— সুবোধ ভাটি ও কুলবন্ত খেজরোলিয়া। ২২১ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর থেকে বোর্ডে ৮০ রান যোগ করেন দিল্লির দুই পেসার। মাত্র ৬১ বলে ঝোড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে গেল দিল্লির শেষ জুটি। ৮০ ওভার শেষে দিল্লির রান ছিল ছয় উইকেটে ২০০। ১৬ ওভারের মধ্যেই ১০১ রান যোগ করলেন বিপক্ষ টেলএন্ডাররা। দুই টেলএন্ডার ব্যাটসম্যান মিলে মারেন সাতটি ছয়। সুবোধই মারেন ছ’টি। ৫৩ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬২ রান করে মনোজদের কঠিন প্রশ্নপত্র হাতে ধরিয়ে
গেলেন তিনি।
বোলার হয়েও, সাবলীল ব্যাটিং করে গেলেন সুবোধ। কারণ, ক্লাব ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ওপেন করেন। সেখান থেকেই নতুন বল সামলানোর শিক্ষা। গত বছর গোয়া লিগ খেলতে গিয়ে একটি ম্যাচে ৫৭ বলে ২০৭ রান করেছিলেন সুবোধ। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘‘এ রকম ইনিংস আগেও খেলেছি। ব্যাট করার সময় কিছু মাথায় থাকে না। উইকেটের বল পেলে ডিফেন্ড করি। বাইরের বল পেলে উড়িয়ে দিই। আই এই পিচে ব্যাট করতে কোনও সমস্যাও
হচ্ছিল না।’’
ডিন্ডা জানিয়েছেন, দিল্লির শেষ জুটির বিরুদ্ধে যে পরিকল্পনা তাঁদের ছিল, তা কাজ করেনি। টেলএন্ডারদের আক্রমণ না করে বাউন্ডারি লাইনে আট ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে শর্ট বল করার রণনীতি নিয়েছিল বাংলা দল। একটি স্লিপ, কিপার ও বোলার ছাড়া প্রত্যেকেই ছিলেন বাউন্ডারি লাইনে। ‘‘সবাইকে পিছিয়ে শর্ট বল করার কারণ ছিল। শেষের দিকের ব্যাটসম্যানকে বাউন্সার দিলে তাঁর ব্যাটের উপরে লেগে ক্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,’’ বক্তব্য ডিন্ডার। কিন্তু এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিন্ডা বল করতে পারলেও মুকেশ কুমার পারেননি। কারণ, ডিন্ডার মতো গতি তাঁর নেই। অনায়াসে তাঁর বল গ্যালারির উদ্দেশে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন সুবোধ। তবুও ইয়র্কার দিতে নারাজ বাংলার দ্বিতীয় পেসার। হয় শর্ট বল, নয় পায়ের সামনে থেকে সুইং করানোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেন মুকেশ। এমনকি নিজের ২৩তম ওভার বল করতে এসে ১৯ রান দিয়ে গেলেন মুকেশ। শেষে ডিন্ডাকেই এই জুটি ভাঙতে হয় রান আউট করে।
অফস্পিনার আমির গনির পরিকল্পনাও বোঝা গেল না। স্পিনার হয়েও তাঁর ১১তম ওভারে দু’টি ওয়াইড বল করলেন গনি। সেই ওভারে ১৫ রান দেন তরুণ অফস্পিনার। ব্যাটসম্যান মারছে দেখেও নির্দ্বিধায় ফ্লাইট করালেন। লং-অন ও মিড-উইকেট বাউন্ডারি থেকে বল কুড়িয়ে আনতে থাকলেন ফিল্ডারেরা।
যে ব্যাটিং গত সাত ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ, তাদের হাতেই এখন বাংলার স্টিয়ারিং।