বিরাটের ক্যাচটা ফেলে জীবন দুঃস্বপ্ন হয়ে গিয়েছে

আরসিবি ম্যাচটা শেষ হয়ে গেল। এখন সামনে যা ট্র্যাভেলিং রয়েছে, এ বার আইপিএলে এখনও পর্যন্ত অতটা ঘুরতে হয়নি আমাদের। বৃহস্পতিবার কানপুরে ম্যাচ গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে। তা কানপুর পৌঁছতে প্রথমে কলকাতা থেকে ফ্লাইটে করে যাচ্ছি পটনা। সেখান থেকে আবার ফ্লাইট নিয়ে লখনউ।

Advertisement

গৌতম গম্ভীর

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। শহর ছাড়ছেন গম্ভীর। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

আরসিবি ম্যাচটা শেষ হয়ে গেল। এখন সামনে যা ট্র্যাভেলিং রয়েছে, এ বার আইপিএলে এখনও পর্যন্ত অতটা ঘুরতে হয়নি আমাদের। বৃহস্পতিবার কানপুরে ম্যাচ গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে। তা কানপুর পৌঁছতে প্রথমে কলকাতা থেকে ফ্লাইটে করে যাচ্ছি পটনা। সেখান থেকে আবার ফ্লাইট নিয়ে লখনউ। তার পর গাড়িতে করে কানপুর। ব্যক্তিগত ভাবে এত বেশি ট্র্যাভেল করাটা আমার একেবারেই খারাপ লাগে না। টিমমেটদের সঙ্গে থাকলে বেশ মজা হয়। সোমবারের ওই ফলাফলের পর মনে হয় হোটেল রুমে বন্দি থাকার চেয়ে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানোটা অনেক ভাল। একসঙ্গে থাকলে অন্তত একে অন্যের সান্নিধ্যটা উপভোগ করা যায়। না হলে তো সেই ডিভিডি প্লেয়ার, প্লে-স্টেশন, বই বা অলস বিছানার উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।

Advertisement

তবে একসঙ্গে ট্র্যাভেল করার একটা খারাপ দিক হল, আমাকে ফের টিম আর কোচেদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। যেটা আমার পক্ষে খুব কঠিন। কেন জানি না, বিরাট কোহালির ক্যাচ ফেলাটাকে কিছুতেই মন থেকে মুছতে পারছি না। টিমের কেউ আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করবে না যাতে আমার নিজেকে খলনায়ক বলে মনে হয়। তবু আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে, এখান থেকে কী ভাবে এগোব। ওটাই তো সোমবারের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তখন বিরাট আউট হয়ে গেলে আমরা যে সুযোগটা খুঁজছিলাম, সেটা পেয়ে যেতাম। এ ধরনের মুহূর্ত হল অনেকটা আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শো-এ জামাকাপড় নিয়ে গণ্ডগোল হওয়া। যা এমনিতে খুব সহজ, নিয়ন্ত্রণে থাকার মতো জিনিস। কিন্তু ঝামেলাটা গোটা বিশ্বের সামনে হয়ে যায়।

পরিষ্কার মনে আছে, আমরা বল করার সময় সারাক্ষণ প্রচণ্ড ফোকাস করছিলাম। দেখলাম বলটা আমার দিকে আসছে। সোজা এসেও পড়ল আমার হাতে, কিন্তু তার পর কোনও ভাবে ফসকে গেল। এত বড় একটা ম্যাচ, ইডেন ফুলহাউস, বিপক্ষের এত বড় একজন ব্যাটসম্যানের ক্যাচ, আর সেটাই কি না আমি ফেলে দিলাম! ক্রিকেটার হিসেবে এ রকম পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নে আসে। কিন্তু তখন অন্তত আবার ঘুমিয়ে পড়া যায় নিজেকে এটা বলে যে, ওটা খারাপ স্বপ্ন ছিল মাত্র। জানেন, সোমবার রাত থেকে এই দুঃস্বপ্নটাই আমার জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনও ভাল প্লেয়ারের মতো বিরাটও ওই ভুলটার জন্য আমাদের দিয়ে খেসারত দিইয়ে ছাড়ল।

Advertisement

ম্যাচটায় আমাদের বোলিং বিশেষ ভাল হয়নি। ১৮৩-র স্কোর দুর্লঙ্ঘ্য ছিল না জানি। তবু আমরা আরসিবি-কে আরও চ্যালেঞ্জ করতে পারতাম। আমরা ধারাবাহিক ভাবে লেংথ মিস করে গিয়েছি। যার জন্য বেশ কয়েক বার পরিকল্পনাগুলোও ঠিকঠাক কাজে লাগানো যায়নি। প্রচুর শর্ট বল করা হয়েছে। সূক্ষ্ম যে সব বৈচিত্র একজন ব্যাটসম্যানকে চমকে দিতে পারে, সেগুলো আমরা দেখাতে পারিনি। তবু বলছি, আমি খুব চিন্তিত নই। কারণ আমাদের ড্রেসিংরুমে যথেষ্ট প্রতিভা রয়েছে। ইডেনের পিচ নিয়ে কোনও রকম ব্যাখ্যায় যাব না। পিচ নিয়ে আমরা কী ভেবেছি, তা-ও বলব না। কারণ আমি মনে করি, চ্যাম্পিয়ন টিমের যে কোনও পরিবেশে জেতার ক্ষমতা থাকা উচিত।

এ বছর আইপিএলের টিআরপি বা সাধারণ জনপ্রিয়তা নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না। তবে আমার মনে হয় এই আইপিএলটা অন্যতম ইন্টারেস্টিং আইপিএল। প্লে-অফের বাকি তিনটে জায়গার জন্য লড়ছে পাঁচটা টিম। যা থেকে বোঝা যায় প্রতিভার বিচারে টিমগুলো কতটা গায়ে গায়ে। আর টুর্নামেন্টে কোন মানের ক্রিকেট খেলা হয়। এ বার কোন টিম শেষ ধাক্কাটা দিতে পারবে, সেটাই দেখার। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, আরসিবি, মুম্বই, গুজরাত আর কেকেআর সবাই একই পরিস্থিতিতে। পরের চার-পাঁচটা দিন আমাদের সবার জন্য প্রচণ্ড চাপের। সেই চাপটা কে সবচেয়ে ভাল নিতে পারে, সেটাই আসল।

তবে একটা ব্যাপার। প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি নিষ্ঠুর। একরোখা ভাবে জয়ের জন্য লড়ার ক্ষেত্রেও। তবু আশা করব, সোমবার আমি যেমন করলাম, সে রকম সহজ ক্যাচ আর কেউ ফেলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন