মেসি ম্যাজিকে দ্বিমুকুট বার্সার

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগেই কি শনিবার সেরা গোলটা করে ফেললেন লিওনেল মেসি? না কোপা দেল রে-তে ‘মেসি ম্যাজিক’ ফাইনালের স্রেফ একটা ট্রেলার ছিল? গোটা সিনেমাটা এখনও বাকি? উত্তর খুঁজতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে ফুটবল বিশ্বে। কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনার দাপটে জয়, ২৭তম কোপা দেল রে ট্রফি জয়ের রেকর্ড, মরসুমের দ্বিতীয় ট্রফি, বার্সার বিখ্যাত এমএসএন-এর (মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার) আগুনে ফর্ম, সব প্রত্যাশামতই হল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০৪:১৬
Share:

প্রথম গোলের পর মেসি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগেই কি শনিবার সেরা গোলটা করে ফেললেন লিওনেল মেসি? না কোপা দেল রে-তে ‘মেসি ম্যাজিক’ ফাইনালের স্রেফ একটা ট্রেলার ছিল? গোটা সিনেমাটা এখনও বাকি?
উত্তর খুঁজতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে ফুটবল বিশ্বে। কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনার দাপটে জয়, ২৭তম কোপা দেল রে ট্রফি জয়ের রেকর্ড, মরসুমের দ্বিতীয় ট্রফি, বার্সার বিখ্যাত এমএসএন-এর (মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার) আগুনে ফর্ম, সব প্রত্যাশামতই হল। কিন্তু ম্যাচে মেসির জোড়া গোলের প্রথমটা যে ভাবে এল তাতে ফুটবল বিশ্ব ফের আক্রান্ত মেসি ম্যানিয়ায়।
প্রায় মাঝমাঠ থেকে ডান প্রান্ত ধরে পাঁচজন অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের প্লেয়ারকে টপকে গোলপোস্টের প্রায় ১০ গজ দূর থেকে শট। মেসির ম্যাচের প্রথম গোল ঠিক এ ভাবেই আসে। যার পর প্লেয়াররা তো বটেই স্টেডিয়ামের দর্শকরাও প্রথমে বিস্ময়ের ঘোর কাটাতে পারেননি। বার্সা কোচ লুই এনরিকে তো ম্যাচের শেষে বলেছেন, ‘‘আমরা মেসিকে চিনি। প্র্যাকটিসে প্রত্যেকদিন ওর উপস্থিতিটা উপভোগ করি। আর এই ম্যাচে প্রথম যে গোলটা ও করল ওটা অন্য গ্রহের।’’

Advertisement

এখানেই শেষ নয়। মেসির পর বার্সার গোল উৎসবে যোগ দেন নেইমার। ম্যাচ শেষের মিনিট পনেরো আগে মেসির দ্বিতীয় গোল। পরে বিলবাওয়ের ইনাকি সান্ত্বনার গোল পেলেও ততক্ষণে বার্সার মরসুমের দ্বিতীয় ট্রফি জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে কাতালান সমর্থকদের বার্লিনে আগুনে মেসিকে দেখার আশাও।

শুধু বিস্ময় নয়, কোপা দেল রে ফাইনালে ছিল বিতর্কও। নেইমারকে নিয়ে। ম্যাচের শেষ দিকে নেইমার এক অ্যাথলেটিক ডিফেন্ডারকে কাটাতে গিয়ে বল ফ্লিক করেন। দু’পায়ে বলটা সেই ডিফেন্ডারের মাথায় উপর থেকে ছুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিলবাওয়ের প্লেয়াররা নেইমারকে ঘিরে ধরেন। দ্রুত বার্সা ক্যাপ্টেন জাভি, যাঁর আবার এটাই ক্লাব জার্সিতে শেষ ম্যাচ ছিল, নেইমারকে সেখান থেকে সরিয়ে না নিয়ে গেলে বড় ঝামেলা হতে পারত।

Advertisement

ম্যাচের পর এ ভাবে বল কাটানোর চেষ্টা করার জন্য প্রবল সমালোচিত হন নেইমার। বার্সা কোচ বলেন, ‘‘এটা স্পেনে না হলেও ব্রাজিলে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিলবাওয়ের ফুটবলারদের জায়গায় আমি থাকলেও একই প্রতিক্রিয়া হত।’’ বিলবাওয়ের কোচ আর্নেস্টো ভালভের্দে আবার বলেছেন, ‘‘ওদের সমর্থকরাও কিন্তু ব্যাপারটা ভাল ভাবে নেয়নি। ম্যাচটা শেষ হয়ে গিয়েছে। ওরা জিতে গিয়েছে। আর আমরা বিপক্ষকে সম্মান দিতে জানি। তবে এটা ঠিক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুই যে শিখতে হচ্ছে কী বলব!’’

খোঁচা বা বিলবাও প্লেয়ারদের সমালোচনা, বিদ্রুপ অবশ্য নেইমারকে রুখতে পারেনি। সাও পাওলোর ‘ওয়ান্ডার কিড’ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজের খেলার স্টাইল বদলাবেন না। ‘‘অনেকের রাগ হতেই পারে। কিন্তু আমার খেলার স্টাইল এটাই। বহু বছর ধরে এই স্টাইলেই তো খেলে আসছি। তাই কেউ রেগে গেল কি না তাতে আমার খেলার স্টাইল বদলাবে না।’’

বার্সার কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে আরও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ঘরোয়া লিগ জয়ের ট্রফির হ্যাটট্রিক শনিবার বার্লিনে হচ্ছেই। কেন না দু’সপ্তাহ আগে লা লিগা আর শনিবার কোপা দেল রে জিতে বার্সার দ্বিমুকুটের মতো জুভেন্তাসও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। সেরি এ জেতার পাশাপাশি কোপা ইতালিয়াও তাদের দখলে। তাই বার্সার সামনে যেমন ২০০৯-এর পর প্রথম স্প্যানিশ ক্লাব হিসেবে ফের ত্রিমুকুট জয়ের রেকর্ড গড়ার সুয়োগ, তেমনই জুভেন্তাসের সামনেও ইতিহাস গড়ার হাতছানি। ইতালির ক্লাবদলের মধ্যে চার বছর আগে শুধু ইন্টার মিলানের যে নজির রয়েছে।

গোটা ফুটবল বিশ্ব মেসি উৎসবে শনিবার গা ভাসালেও জুভেন্তাস বোধহয় ব্যতিক্রম ছিল। এ রকম দুর্ধর্ষ ফর্মের মেসিকে কী ভাবে আটকানো যায় সেই চিন্তাই নিশ্চয়ই এখন ঘুরছে কার্লোস তেভেজদের মাথায়।

মঞ্চ প্রস্তুত, আবহও। এ বার অপেক্ষা শুধু ফাইনালের। মেসি ম্যানিয়ায় ফুটবল বিশ্ব ক্রমশ আসক্ত হয়ে পড়ছে যে!

ছবি: এএফপি, রয়টার্স, টুইটার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন