শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সেই চেনা-জানা পিচ কি হারিয়ে গেল? রীতিমতো ব্যাটসম্যানদের ফেলছে ধাঁধায়। এশিয়া কাপ আসরে প্রথম দিন থেকেই যেন ব্যাটসম্যানদের জন্য মাইন বসানো হয়েছে পিচে! আর সেই পিচে হাসছেন বোলাররা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের স্কোর ছিল ১৬৬। এখনও পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। নবাগত সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পেস বোলাররা পর্যন্ত ভয় পাইয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের। তাদের বিপক্ষে ১২৯ রানে থেমেছে শ্রীলঙ্কা। সেখানে বাংলাদেশের স্কোর ১৩৩। সবুজ পিচে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পেসারদের গর্জনটা আরও একটু বেশিই দেখল দর্শক! চার-ছক্কা দেখতে এসে দর্শক দেখল পেস গর্জন। দেখা গেল ভারতের পেস আক্রমণে ৮৩ রানে পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে নেয়ার দৃশ্য। ৮৪ রান চেজ করতে এসে ভারত হারাল ৫ ব্যাটসম্যানকে। ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে মোহাম্মদ আমিরের ভয়ংকর এক স্পেল নিয়ে শুরু হয়ে গেল জল্পনা। এমন পিচকে পার্থ ভেবে উৎফুল্লই হচ্ছেন পেস বোলাররা। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তাই আজ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও তাই দু’দলের পেস লড়াইটা দেখার অপেক্ষায় সবাই। ধর্মশালায় সম্ভাব্য পেস ফ্রেন্ডলি পিচে টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে হবে বলেই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটকে সেরকম তৈরি করা হয়েছে।সময়ের সেরা পেস অস্ত্র যখন মজুত বাংলাদেশ দলে, তখন তাঁদের উপর ভরসা
রেখেই এমন পেস ফ্রেন্ডলি পিচই তৈরি করা হয়েছে। মাশরাফি, তাসকিন, আল-আমিনের সঙ্গে হালের সেনশেসন মুস্তাফিজুর। বৈচিত্রপূর্ন পেস অ্যাটাক বলতে যা বোঝায় সে সব রসদই যেন পেয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়েও বাংলাদেশের এমন পেস অ্যাটাক কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গাকে। অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেই আতঙ্কের কথাই শুনিয়েছেন তিনি, ‘‘আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের বোলিং আক্রমন দারুণ। আমরাও তার জন্য প্রস্তুত। তাদের বোলিং ফেস করতে আমাদের প্রস্তুতিও সারা।’’ বাঁ হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুরের বল কাছ থেকে দেখেননি মালিঙ্গা। তবে টেলিভিশন আর ভিডিও ক্লিপিংসে মুস্তাফিজুরের অদ্ভুত সব কাটার, শ্লোয়ার, ইয়র্কার দেখে মুগ্ধ তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই বাঁ হাতি তরুণ পেস বোলারকে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সম্পদ বলেও ব্যাখ্যা করতে দ্বিধা নেই মালিঙ্গার, ‘‘মুস্তাফিজুর শুধু বাংলাদেশেরই সম্পদ নন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরও সম্পদ বটে। সে সত্যিই দারুন বল করছে।’’
সাড়ে তিন মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন মালিঙ্গা আমিরশাহির বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং বোলিংয়ে (৪/২৬) শ্রীলংকাকে জিতিয়েছেন প্রথম ম্যাচে। যেভাবে তাঁর ইয়র্কারে বিদ্ধস্ত হয়েছে প্রতিপক্ষ তাতে আজ শ্রীলংকা নয়, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিপক্ষ মালিঙ্গা। আমিরশাহির বিপক্ষে ৫১ রানের জয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া বাংলাদেশ দল আজ বড় স্কোরের দিকে তাকিয়ে। উপর্যুপরি দু’ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের অপবাদ ঘুঁচিয়ে আজ তেতে উঠবে ব্যাটসম্যানরা, সে বার্তাই দিয়ে গেছেন টপ অর্ডার সাব্বির রহমান। ‘‘প্রথম ম্যাচ হারের পর আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা কমে গিয়েছিল। আমিরাতের সঙ্গে খুব ভালো ভাবে জিতেছি বলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। যেহেতু বোলিং বিভাগ ভাল করছে তাই কিভাবে ব্যাটিংয়ের এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারি, সে চিন্তাই করছি। আমরা চাই স্কোর ১৭০-১৯০ করতে। তাহলে বোলাররা রিল্যাক্সড হয়ে বোলিং করতে পারবে। এটাই আমাদের ফোকাস থাকবে।’’ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ ম্যাচে জয় মাত্র একটি। সেটা ২০১২ সালে এই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। ৪ টি মুখোমুখি লড়াইয়ের চারটিতেই হার। শ্রীলংকার বিপক্ষে আজ জিতলে ফাইনালের পথে এক পা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ দল। ২০১২’র এশিয়া কাপে শ্রীলংকাকে হারানোর সেই সুখস্মৃতি থেকে টনিক নিতে পারেন মাশরাফিরা।
আরও খবর
ঢাকায় বসে ধর্মশালার অনুশীলন করছেন মাশরফিরা