রেকর্ড গড়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াল ভারত

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যেন ভাবা হয় মণীশ-বুমরাহকে

শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ঘরের মাঠে টানা ১৯ ওয়ান ডে জয়ের রেকর্ডটা আর হতে দিল না ছেলেটা। যাকে আমি সাত-আট বছর আগে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে মণীশ পাণ্ডের দাপট তখন অবাক করার মতোই ছিল। সেই দাপট যেন ফিরে দেখলাম সিডনির মাঠে।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

ব্যাট হাতে লজ্জা বাঁচালে মণীশ: ৮১ বলে ১০৪।

শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ঘরের মাঠে টানা ১৯ ওয়ান ডে জয়ের রেকর্ডটা আর হতে দিল না ছেলেটা। যাকে আমি সাত-আট বছর আগে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে মণীশ পাণ্ডের দাপট তখন অবাক করার মতোই ছিল। সেই দাপট যেন ফিরে দেখলাম সিডনির মাঠে। শনিবার। আর সেই দাপটেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে রেকর্ড রান তাড়া করে সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ নেমে যাওয়া আটকাল ভারত।

Advertisement

আর একজনকে দেখে অবাক হলাম শনিবার। কে বলবে ছেলেটা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে? জসপ্রীত বুমরাহ। যেমন ডিসিপ্লিনড বোলিং, তেমনই পারফেকশন। অস্ট্রেলিয়ার তাবড় ব্যাটসম্যানদের বল করার সময় যে নার্ভাসনেস থাকার কথা, তা একেবারেই ওর মধ্যে দেখা গেল না। পরপর কয়েকটা অসাধারণ ইয়র্কার যা দিল, তা দেখার মতো। এটাই আইপিএলের সুফল। আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা, যারা আইপিএলে খেলে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামার আগেই তারা আন্তর্জাতিক তারকাদের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলে। তাই বিদেশের মাঠে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও ওরা কিন্তু ঘাবড়ে যায় না। স্বাভাবিক পারফরম্যান্সই দেখাতে পারে।

জসপ্রীতকেও সে রকমই দেখলাম। গত চারটে ম্যাচে ভারতীয় বোলিংয়ের যে রকম দুর্দশা দেখা গিয়েছে, তার পর গুজরাতের এই ছেলেটার পারফরম্যান্স যেন মরুদ্যানের মতো দেখাল। আগের চেয়ে এদিনের বোলিং পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও ভাল। ফিল্ডিংও তাই। তাতেও অস্ট্রেলিয়া ৩৩০ তুলে ফেলল। আসলে ফিল্ড রেস্ট্রিকশন-এর যে নতুন নিয়ম এসেছে, সেই নিয়মের জন্যই ওয়ান ডে-তে তিনশোর উপর রান ওঠা আর তা তাড়া করে জেতাটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তা বলে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কৃতিত্বকে এতটুকু খাটো করছি না। শনিবারও ভারত অসাধারণ ব্যাটিং করল। আগের ম্যাচগুলোতে যে জায়গাটায় সমস্যা হচ্ছিল, তা হল ফিনিশারের অভাব। ধোনি যে কাজটা করত। ধোনির একটা ব্যাড প্যাচ চলছে। তাই ও সেটা করতে পারছে না। ধোনি না পারলে যে কেউই পারবে না, তা তো ঠিক নয়। শনিবার সিডনিতে মণীশের ৮১ বলে ১০৪-এর ইনিংসটা বুঝিয়ে দিল। ধারণাটা ঠিক নয়। মণীশ আসলে এ রকমই ব্যাটসম্যান, মারকুটে।

Advertisement

জানি না ওর এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা কেমন থাকবে। তবে যদি থাকে, এবং বিশ্বকাপে ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপটা যদি এ রকম দাঁড়ায়— শিখর ধবন, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানে, মণীশ পাণ্ডে ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, তা হলে প্রতি ম্যাচে রান বড় রান দেখা যেতেই পারে। টি-টোয়েন্টিতে আবার যুবরাজ সিংহ ও সুরেশ রায়না ঢুকছে। ওদের দিনে ওদের চেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান আর কেউ আছে বলে মনে হয় না। সুতরাং নির্বাচকদের ও টিম ম্যানেজমেন্টকে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, বিশ্বকাপে কাদের ছেড়ে কাদের শেষ পর্যন্ত নেওয়া হবে ভেবে।

আগামী পাঁচ মাস ভারতের কোনও ওয়ান ডে অ্যাসাইনমেন্ট নেই। এ বার পুরোটাই টি-টোয়েন্টিতে ঠাসা। সামনেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি টোয়েন্টি সিরিজ। দেশে ফিরে শ্রীলঙ্কা। তার পর এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ বার লড়াইটা অন্য রকম। দলে কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ঢুকছে। রায়না, যুবরাজদের সঙ্গে নেহরা, হরভজন। আর এই তরুণরা তো রয়েছেই। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশ্রণে এই দলটা বোধহয় আরও ভাল এবং আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারত ওয়ান ডে-র তুলনায় ভাল খেলবে। যার ইঙ্গিত পাওয়া গেল শনিবার সিডনিতে। এই জয় থেকে তো টি-টোয়েন্টিতে মনস্তাত্বিক সুবিধা পাবে ভারত। আশা করি টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে ধোনিরা। উপমহাদেশে ফিরে এলে তো স্বাভাবিক নিয়মেই ভারত হয়তো ভাল খেলবে।

তাই ওয়ান ডে সিরিজের ফলটা পিছনে ফেলে ভারতকে নিয়ে এখন পজিটিভ ভাবনা ভাবা যেতেই পারে।

ধোনি বলেন

মণীশ আজ যে ইনিংসটা এখানে খেলল, সেটা ওকে আরও ১০-১৫টা ম্যাচে খেলার সুযোগ করে দেবে। নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হতে দেওয়ার জন্য এ ক’টা ম্যাচ প্রয়োজন।

বুমরাহের বোলিং ভুললেও চলবে না। দুর্দান্ত বোলিং করে গেল। নিজের প্রথম ম্যাচে শুরুতে নতুন বলে, তার পরে মাঝের ওভারে আর ডেথে, ব্যাটসম্যানদের উপর ক্রমাগত চাপ রেখে গেল। ওর বোলিং অ্যাকশনটা অদ্ভুত। এবং তার সঙ্গে বৈচিত্রও আছে। এই ধরনের বোলারদেরই বেশি করে এখন দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন