আর কী করতে হবে মনোজ-দিন্দাদের

এর পরও যদি ভারতীয় নির্বাচকদের নোটবুকে মনোজ তিওয়ারি ও অশোক দিন্দার নাম না ওঠে, তা হলে বুঝতে হবে, ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে সত্যিই দুর্নীতির কালো মেঘ জমা হয়েছে। বুধবার দেওধর ট্রফির ফাইনাল যে ভাবে জেতাল মনোজ-দিন্দারা, তাতে ওদের প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসম্ভব। মনোজের ৭৫-এর ইনিংসটা যেমন পূর্বাঞ্চলকে লড়াই করার জায়গায় আসতে সাহায্য করল, তেমন দিন্দার প্রথম স্পেলের তিনটে উইকেটই পশ্চিমাঞ্চলকে হারের ইঙ্গিত দিয়ে দেয়।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

এর পরও যদি ভারতীয় নির্বাচকদের নোটবুকে মনোজ তিওয়ারি ও অশোক দিন্দার নাম না ওঠে, তা হলে বুঝতে হবে, ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে সত্যিই দুর্নীতির কালো মেঘ জমা হয়েছে।

Advertisement

বুধবার দেওধর ট্রফির ফাইনাল যে ভাবে জেতাল মনোজ-দিন্দারা, তাতে ওদের প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসম্ভব। মনোজের ৭৫-এর ইনিংসটা যেমন পূর্বাঞ্চলকে লড়াই করার জায়গায় আসতে সাহায্য করল, তেমন দিন্দার প্রথম স্পেলের তিনটে উইকেটই পশ্চিমাঞ্চলকে হারের ইঙ্গিত দিয়ে দেয়। শেষে সূর্যকুমার যাদবকে ফিরিয়ে দেওধর ট্রফিটা নিশ্চিত করল দিন্দা। ম্যাচের সেরার পুরস্কারটা তাই একেবারে যথাযথ লোকের কাছেই গিয়েছে। এ বার দেখার নির্বাচকরা ওদের জন্য কী রেখেছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের জন্য ৩০ জনের প্রাথমিক দল বাছতে বসার কথা। এই দলে মনোজ-দিন্দারা থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। ঋদ্ধিমানেরও অবশ্যই এই দলে থাকা উচিত। কিন্তু এ তো গেল ৩০ জনের দল। ১৫ জনের দলেও কি মনোজ বা দিন্দা জায়গা পাবে? আসল প্রশ্ন এটাই।

Advertisement

আমার মন বলছে মনোজের অবশ্যই পাওয়া উচিত। মনোজকে বিশ্বকাপে কেন নিয়ে যাওয়া হবে না? বিশ্বকাপে যদি আট জন বা ন’জন ব্যাটসম্যান নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে মনোজ অবশ্যই তার মধ্যে থাকবে। বিশেষ করে ও এখন যে ফর্মে আছে, তার পর তো বটেই। কিন্তু আমি বাস্তববাদী, আবেগে ভাসতে রাজি নই।

পনেরো জনের দল বাছার ক্ষেত্রে নির্বাচকেরা কি পুরো স্বাধীনতা পাবে? দলে ঢোকার ক্ষেত্রে মনোজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অম্বাতি রায়ডু। কারও কারও যুক্তি হতেই পারে যে, মনোজের এই ফর্ম ঘরোয়া ক্রিকেটে। রায়ডু সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, সেঞ্চুরি করছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মাঠেও কি মনোজ এই ফর্ম দেখাতে পারবে? ধরে রাখতে পারবে এই ধারাবাহিকতা?

চাইলে অবশ্য পূর্বাঞ্চলের নির্বাচক পাল্টা যুক্তি দিতে পারে। যেমন, কোন উইকেটে কেমন মানের দলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছে রায়ডু, সেটা একবার খতিয়ে দেখা উচিত। তা ছাড়া মনোজের ব্যাটিংয়ের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছে, সেই আত্মবিশ্বাসটা তো ওর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াতেও যাবে। তার কি কোনও প্রভাবই পড়বে না ওর ব্যাটিংয়ে? এক জন ব্যাটসম্যান সেরা ফর্মে থাকা অবস্থায় যদি সুযোগ না পায়, তা হলে কবে পাবে?

অবশ্য জানি না, বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের দল বাছাইয়ে নির্বাচকরা কতটা স্বাধীনতা পাবে এবং তাতে কতটা স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। তবে এই দুটোই যদি থাকে, তা হলে মনোজের বিশ্বকাপে অবশ্যই খেলা উচিত।

দিন্দাকে নিয়ে কয়েক জনকে বলতে শুনেছি, ছেলেটার ধারাবাহিকতার অভাব আছে। তাদের আমি বলতে চাই, দিন্দা যে দিন ফর্মে থাকবে, সে দিন কিন্তু একাই বিপক্ষকে শেষ করে দেবে। আরও একটা কথা বলতে চাই। দিন্দার চেয়ে ভাল ডেথ বোলার শামি ছাড়া ভারতে আর কে আছে বলুন তো? ভারতের প্রধান সমস্যা তো ডেথ বোলিংই। সেটা কিন্তু উমেশ, বরুণ বা ইশান্ত এখনও ঠিকঠাক করে উঠতে পারছে না। নতুন বলেও কিন্তু এখন ভাল করছে দিন্দা। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সটা অবশ্যই ওকে সাহায্য করবে।

মানছি, মনোজের মতো ধারাবাহিকতা দিন্দা এখনও দেখাতে পারেনি। কিন্তু মনোজ তো স্বপ্নের ফর্মে আছে। শুধু দেওধর ফাইনালই নয়, গত চারটে ওয়ানডে ম্যাচেই মনোজ যে দাপট নিয়ে ব্যাট করে গিয়েছে, তা এক কথায় অসাধারণ।

আমাদের রঞ্জি অভিযান শুরুর আগে বাংলার এই দুটো ছেলের ফর্ম কোচ হিসেবে আমাকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত করছে। এ দিন শুরুতেই ৩৭ রানের মধ্যে দিন্দা তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরই ওরা প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায়। তাই ২৭০ রান তাড়া করতে গিয়ে সব সময় চাপে ছিল। যে চাপ থেকে মনোজের পূর্বাঞ্চল আর ইউসুফ-রায়ডুদের বেরোতে দেয়নি।

ব্যাট-বলের যুগলবন্দি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পূর্বাঞ্চল ৫০ ওভারে ২৬৯-৮ (মনোজ ৭৫, বিপ্লব ৬০),

পশ্চিমাঞ্চল ৪৭.২ ওভারে ২৪৫ (কেদার ৯৭, দিন্দা ৪-৩৩)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন