ডার্বি মাতিয়ে দিল রাজগঞ্জের ছেলে

ফুটবলার হবেন এই স্বপ্ন ছিল ছোটবলা থেকেই। রাজগঞ্জের মাঠে যে ছেলেটা পায়ে বল নিয়ে দৌড়ত। শনিবার আইলিগের ডার্বির পরে রা়জগঞ্জের সেই ছেলের নামই এখন শোনা যাচ্ছে সমর্থকদের মুখে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০০
Share:

ফুটবলার: ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের ভরসা মনোজ। নিজস্ব চিত্র

ফুটবলার হবেন এই স্বপ্ন ছিল ছোটবলা থেকেই। রাজগঞ্জের মাঠে যে ছেলেটা পায়ে বল নিয়ে দৌড়ত। শনিবার আইলিগের ডার্বির পরে রা়জগঞ্জের সেই ছেলের নামই এখন শোনা যাচ্ছে সমর্থকদের মুখে। মোহনবাগানের আক্রমণের সামনে সেই ছেলেটাই দাঁড়িয়েছিল। যাঁর ক্লিয়ারেন্স থেকে তাক লেগেছে ক্রীড়াপ্রেমীদের। জলপাইগুড়ি রাজগঞ্জের সেই ছেলে মনোজ মহম্মদ এখন হয়ে উঠেছে আইলিগে লাল হলুদের অন্যতম তারকা।

Advertisement

গরিব পরিবারের ছেলে মনোজের এই উঠে আসার লড়াই বেশ কঠিন। ২০১০ সালে ইস্টবেঙ্গল রাজগঞ্জ ওয়েলফেয়ার ফুটবল অ্যাকাডেমি চালু হলে সেখানে সুযোগ পায় মনোজ। তখন মনোজ রাজগঞ্জ এনএম হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বাবা জামাল মহম্মদ হাটে মনিহারি দোকান করে কোনও রকমে সংসার চালান। মনোজ ছাড়াও তাঁর আরও দুই মেয়ে রয়েছে। বছর তিনেক মারা যান মনোজের বাবা। তারপর থেকে দোকানের ভার নেন মা মঞ্জু বেগম। অনেক কষ্টে চলে সংসার। তবুও মনোজের খেলা বন্ধ হতে দেননি তিনি।

পরিবারের কথা বলেও মনোজ ডার্বি ম্যাচের জয় উৎসর্গ করতে চান তাঁর এক সময়ের কোচ উত্তম চক্রবর্তীকে। যে স্কুলে মনোজ পড়েছে সেই রাজগঞ্জ এমএন হাই স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক এবং ইস্টবেঙ্গল রাজগঞ্জ ওয়েলফেয়ার ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ ছিলেন তিনি। এখন অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই রয়েছেন।

Advertisement

এ দিন মনোজ বলেন, ‘‘বাস থেকে নেমেই উত্তম স্যারকে ফোন করব। আমি আজ যতটুকু এগিয়েছি তার পিছনে স্যারের অবদান অনেক। তাঁকেই এই ম্যাচ উৎসর্গ করতে চাই।’’

এ দিন দু’বছর বাদে ডার্বিতে মোহনবাগানকে হারাল ইস্টবেঙ্গল। শেষ হারিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। এ দিন লাল-হলুদের এই সাফল্যের পিছনে অন্যতম মনোজ। অভিষেক ম্যাচেই তাঁর পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত ইস্টবেঙ্গল রাজগঞ্জ ফুটবল অ্যাকাডেমির কর্মকর্তা সৌমিক মজুমদার, রবীন মজুমদারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘ওর দিক দিয়েই আক্রমণের চেষ্টা হচ্ছিল। কিন্তু সবুজ মেরুনের দিপান্দা ডিকা এবং হেনরি কিসেক্কাকে রুখে দিয়েছে এ দিন লাল হলুদের অন্যতম ডিফেন্ডার মনোজ।’’

মনোজের দুই দিদি জ্যোৎস্না এবং রোশেনারা খাতুনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এ দিন মাঠে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন মনোজের জামাইবাবু মেহবুব আলম।

মাঠ থেকে ফিরে আসার পরে ফোনে দুই দিদির সঙ্গেই কথা হয়েছে মনোজের। দু’জনেই খুশি। দিদিরা জানায়, ও অনেক কষ্ট করেছে খেলার জন্য। ও যেন সফল হয়। ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র দলের কোচ রঞ্জন চৌধুরী উত্তরবঙ্গে এসে ট্রায়াল ক্যাম্প করার সময় দেখেন মনোজকে। কলকাতায় নিয়ে যান ২০১৬ সালে। ইস্টবেঙ্গল জুনিয়র দলে শুরু হয় তাঁর অনুশীলন। গত বছর অনূর্ধ্ব ১৮ আই লিগে লাল হলুদের অধিনায়ক ছিলেন মনোজ। সে বার লাল হলুদ রানার্স হয়। রাজগঞ্জের বাসিন্দা সুরজিৎ দাস, উত্তম দাসরা মনোজের খেলার ভক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন