দেওধরে ১২১ বলে ১৫১

মনের বোঝা ঝেড়ে ফেলেই সাফল্য, বলছেন মনোজ

দশ বছরেরও বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট জীবন। তার অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলে ওঠার পর সতীর্থ, আম্পায়ার, গুটিকয়েক ভক্ত ও উপস্থিত সাংবাদিকরা সবাই অভিনন্দন জানালেও ‘তাঁদের’ কারও দেখা পেলেন না মনোজ তিওয়ারি। এ দিন ওয়াংখেড়েতে বসে মনোজের ১২১ বলে ১৫১-র ইনিংসটি দেখলেন জাতীয় নির্বাচকরা। কিন্তু ম্যাচের পর কেউ অভিনন্দন জানাতে আসেননি। এমনকী পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি সাবা করিমও না।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩০
Share:

সেঞ্চুরিকারীকে অভিনন্দন যুবরাজের। রবিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে। ছবি: পিটিআই

দশ বছরেরও বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট জীবন। তার অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলে ওঠার পর সতীর্থ, আম্পায়ার, গুটিকয়েক ভক্ত ও উপস্থিত সাংবাদিকরা সবাই অভিনন্দন জানালেও ‘তাঁদের’ কারও দেখা পেলেন না মনোজ তিওয়ারি। এ দিন ওয়াংখেড়েতে বসে মনোজের ১২১ বলে ১৫১-র ইনিংসটি দেখলেন জাতীয় নির্বাচকরা। কিন্তু ম্যাচের পর কেউ অভিনন্দন জানাতে আসেননি। এমনকী পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি সাবা করিমও না।

Advertisement

রবিবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ে ফোনে ধরা হলে মনোজকে কিছুটা হতাশই শোনাল, “না, ম্যাচের পর আমার সঙ্গে কোনও নির্বাচকের দেখা হয়নি।” তবে এ সব নিয়ে আর ভাববেন না বলেই ঠিক করেছেন এই মুহূর্তে বাংলার সেরা ব্যাটসম্যান। দেওধর ট্রফির সেমিফাইনালে নামার আগে শনিবার বলেছিলেন, “বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার ভাবনা মাঠের বাইরে রেখেই নামব।” রবিবার উত্তরাঞ্চলকে ৫২ রানে হারানোর পর আনন্দবাজারকে বললেন, “শুধু বিশ্বকাপের ভাবনা কেন, নিজের ব্যাটিং ছাড়া অন্য কোনও ভাবনাই এখন আর মাথায় রাখছি না। মানসিকতা পাল্টেই দেখছি ভাল খেলছি।” এর ব্যাখ্যা দিয়ে মনোজ বলেন, “আগে ভাবতাম আমার সমসাময়িকরা অনেক রান করে ফেলল, আমাকেও বড় রান করতে হবে। নিজে রান না পেলে এই ভেবে চাপে পড়ে যেতাম যে, অন্যরা রান করে দিলে কী হবে। এখন আর মনের মধ্যে এ সব বোঝা বয়ে বেড়াই না। এখন শুধু নিজের খেলায় মন দিই। এতেই ধারাবাহিকতা আসছে। গত তিন চার মাসে নিজেকে বদলেই এই ফল পাচ্ছি। ভবিষ্যতেও এ ভাবেই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

ওয়াংখেড়েতে প্রথম দশ-পনেরো ওভারে নামা ব্যাটসম্যানরা সাধারণত বেশ চাপে থাকেন বলের অস্বাভাবিক মুভমেন্টের জন্য। রবিবার ১২ ওভারেই মনোজকে নেমে পড়তে হয় তাঁর দল ৩৩-২ হয়ে যাওয়ার পর। আত্মবিশ্বাসী মনোজ তাও ক্রিজে আসার পর পঞ্চম বলেই স্টেপ আউট করে পরভেজ রসুলকে সোজা গ্যালারিতে ফেলে দেন। পরের বলই মিড অফ দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে। তবু মনোজ বলছেন, শুরুর দিকটা ধরে খেলবেন বলে নেমেছিলেন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের সেরা ইনিংস নিয়ে বলেন, “শুরুতে উইকেট ও বোলারদের পরখ করে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। উইকেটের আর্দ্রতা কমে গেলে যে আমিই বোলারদের শাসন করব, সে বিশ্বাস ছিল। তবু শুরু থেকে বলের মেরিট অনুযায়ী ব্যাট করেছি। মারার বল তো মারবই। তাই শুরুতেই দুটো বড় শট নিলাম। পরের দিকে উইকেটটা শুকনো ও সহজ হয়ে যাওয়ার পর গতি বাড়াই।” ৯৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর একশো থেকে দেড়শোয় পৌঁছতে তার লাগে মাত্র ২৭ বল। সব মিলিয়ে ১৫টি বাউন্ডারি, চারটি ওভার বাউন্ডারি। “ওই সময় পুরো সেট হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল শতকরা একশো ভাগ। ইনিংসটা খুব উপভোগ করেছি,” বললেন মনোজ। জ্বরে কাবু হরভজন সিংহর না খেলাটাও তাঁর কাছে এমন কিছু ব্যাপার নয়। বললেন, “হরভজন বল করলে বিশাল কিছু করত বলে মনে হয় না। ও বোধহয় এখন সেই বিধ্বংসী ফর্মে নেই।”

Advertisement

দেওধর ট্রফির ইতিহাসে সেরা ব্যক্তিগত ব্যাটিং পারফরম্যান্সের তালিকায় দু’নম্বরে থাকবে এই ইনিংস। এক নম্বরে ২০০৪-এ দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যূত্‌ শিবারামাকৃষ্ণনের ১৫৮। কিন্তু জেদের দিক থেকে মনোজেরটাই সেরা কি না, তা নিয়ে তর্ক জুড়তে পারেন বিশেষজ্ঞরা। দলীপ, বিজয় হাজারের পর দেওধর ট্রফিতেও সেঞ্চুরি। সব ক’টাই স্বচক্ষে দেখেছেন নির্বাচকরা। এর পরও তাঁকে ভারতীয় দলের বাইরে বসে থাকতে হবে? প্রশ্ন তুলছে বাংলার ক্রিকেট মহল।

মনোজ অবশ্য এই নিয়ে বেশি কিছু বলতে চান না। শুধু বললেন, “আশা করি সুযোগ পাব। আর এ বার সুযোগ পেলে ভারতীয় দলে নিজের জায়গাটা বোধহয় পাকা করে নিতে পারব।”

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পূর্বাঞ্চল ৫০ ওভারে ২৭৩-৮।
উত্তরাঞ্চল ৪৭.১ ওভারে ২২১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন