খোলা মাইক্রোফোনের সামনে দিয়েগোর সেমসাইড

মেসিকে ব্যক্তিত্বহীন বলে ইউরোয় আগমন মারাদোনার

শিরোনামটা কি করা যায়? ইতিহাসের মিলনমঞ্চে নতুন বিতর্কের জন্ম? নাকি ইউরোর প্যারিসে আচমকা সন্ত্রাস-হানা? দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা মুখ খুলেছেন যখন, যে কোনও একটা ভেবে নেওয়া যেতে পারে!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

প্যারিসে মুখোমুখি মারাদোনা-পেলে।

শিরোনামটা কি করা যায়? ইতিহাসের মিলনমঞ্চে নতুন বিতর্কের জন্ম? নাকি ইউরোর প্যারিসে আচমকা সন্ত্রাস-হানা?

Advertisement

দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা মুখ খুলেছেন যখন, যে কোনও একটা ভেবে নেওয়া যেতে পারে!

ইউরোর দামামার মধ্যে ফুটবলের দুই চলমান কিংবদন্তির মুখোমুখি দেখা হওয়া। দেখা হয়ে যাওয়া আবার প্যারিসেই, যেখানে আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ইউরোপের ফুটবল-মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিংবদন্তিদের আলিঙ্গন, ফুটবলের ইতিহাসে দু’জনের দু’জনকে জড়িয়ে ধরার স্বর্ণ-ছবি, চিরকালীন বৈরিতার দেওয়াল টুকরো করে আড্ডায় মত্ত হয়ে যাওয়া— একজন ফুটবল-প্রেমিকের কাছে এর চেয়ে ভাল রোম্যান্টিক মধুচন্দ্রিমা আর কী হতে পারে? লোকে জানে, পেলে আর মারাদোনা মানে অবিরাম তুলনা। লোকে জানে, পেলে আর মারাদোনা মানে চিরশ্রষ্ঠের তাজ নিয়ে সর্বকালীন দ্বৈরথ। লোকে এটাও জানে যে, পেলে-মারাদোনা দুর্লভ আড্ডায় বসে পড়া মানে ঘুরেফিরে কোনও এক লিওনেল মেসি অতি অবশ্যই সেখানে ঢুকে যেতে পারেন।

Advertisement

শুধু সামনের মাইক্রোফোনটা যে খোলা থাকবে কে জানত!

আবার মাঠে নেমে পড়লেন ফুটবলের রাজপুত্র। প্যারিসে এক প্রদর্শনী ম্যাচে মারাদোনা। ছবি: এএফপি।

মেসি নিয়ে মারাদোনার মনোভাব দু’বছর আগের মারাকানা কাপ ফাইনালের পর থেকেই যে পাল্টাচ্ছিল, তা কারও অজানা নয়। মেসিকে কেন সেরা ফুটবলারের ট্রফি দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন দিয়েগো। কিন্তু তাই বলে এ ভাবে? এত মারাত্মক আক্রমণে?

মারাদোনা কি না মেসিকে সরাসরি ব্যক্তিত্বহীন বলে দিলেন!

বৃহস্পতিবার প্যারিসে ফাইভ-আ-সাইড ম্যাচে পেলে ইলেভেন বনাম মারাদোনা ইলেভেন মুখোমুখি হয়েছিল। সেখানে আড্ডার সময় পেলে আচমকাই মারাদোনাকে জিজ্ঞেস করেন, মেসি নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত মতামতটা কী? মাইক্রোফোন যে সামনে খোলা, তাঁর কথাবার্তা যে স্পষ্ট সাংবাদিককুল থেকে আমজনতা শুনতে পাচ্ছে, মারাদোনা সম্ভবত খেয়াল করেননি। সোজা বলে দেন, মেসি মানুষ হিসেবে খুব ভাল। কিন্তু ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই।

শিকাগোয় মেসিকে নিয়ে ভক্তদের টানাটানি।

‘‘আরে, ওর তো ভাল লিডার হওয়ার মতো মশলাই নেই। ওর কোনও ব্যক্তিত্ব নেই। নেতা হিসেবে ওকে ভাবা যায় না,’’ বলে ফেলেন মারাদোনা। দ্রুত পেলে তাতে ঢুকে পড়েন। বলে দেন, ‘‘বুঝলাম। তবে ঠিকই বলেছো। ও আমাদের মতো নয়। আমি যখন সত্তরে কাপ জিতেছিলাম, কী সব প্লেয়ার ছিল ব্রাজিলে। রিভেলিনহো, গার্সন, টোস্টাও।’’ বলে-ট়লে ফুটবলসম্রাট আবার জুড়ে দেন, ‘‘আমার তো এই আর্জেন্তিনাকে ভালও লাগে না। পুরোটাই মেসির উপর নির্ভর করে থাকে। আর দিয়েগো, তুমি যখন বলছ মেসি ভাল প্লেয়ার। কোনও সন্দেহ নেই যে ও সত্যি ভাল। কিন্তু এটাও ঠিক যে ওর কোনও ব্যক্তিত্ব নেই!’’

পেলে খোঁচা মেরেছেন। তিনি ব্রাজিলীয়, ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার ফুটবল-সম্পর্ক কেউ বিচার করলে, ব্যাপারটা অনুচিত ঠেকলেও অস্বাভাবিক লাগবে না। কিন্তু তাই বলে মারাদোনা? ফুটবল-বিশ্বে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে যে, আর্জেন্তিনার দুই শ্রেষ্ঠর মধ্যে কী এমন ঘটল যে, মারাদোনা পেলেকে এটা বলে দেবেন? যে পেলে নিয়ে এক সময় মুখ খুলে গরমাগরম শিরোনাম সৃষ্টিই কিংগ দিয়েগোর মনের মতো কাজ ছিল! এটাও বলাবলি চলছে যে, মেসি বিশ্বকাপ এখনও না জিততে পারেন। কিন্তু দেশকে টানেন না, পুরনো সেই বদনাম এখন আর তাঁকে দেওয়া যায় না। ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনা যে কাপ ফাইনাল খেলেছিল, খেলেছিল লিও-র জন্যই। বিশেষ করে গ্রুপ পর্বে। আর্জেন্তিনা যখন গোল পেতে বারবার এলএম টেনের দিকে তাকিয়ে থেকেছে। তা হলে?

প্যারিসের ফাইভ-আ-সাইড টুর্নামেন্টে কম তারকা খেলেননি। ফ্রান্সের ক্ল্যারেন্স সিডর্ফ, ডেভিড ত্রেজেগুয়ে। ইংল্যান্ডের রিও ফার্দিনান্দ, স্পেনের ফের্নান্দো হিয়েরো, ফুটবলের অতীত তারকারা কম কেউ ছিলেন। কিন্তু শেষে গিয়ে আর কেউ থাকলেন না। পেলে— তাঁকে পর্যন্ত বিশ্বজোড়া আলোচনায় দ্বিতীয় স্থানেই সন্তুষ্ট থাকতে হল।

সবই, ফুটবলের সেই বিখ্যাত পাঁচ ফুট চারের এক ছোট্ট সেমসাইডে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন