এক মার্টিন ইহলোকে না থেকেও টিমের মধ্যে প্রবল ভাবে আছেন। মিশে আছেন টিমের ধমনীতে, শিরা-উপশিরায়। কাপ যুদ্ধের ঢক্কানিনাদ শুরু হয়ে গেল। আসল টুর্নামেন্ট শুরু হতে পাঁচ দিনও বাকি নেই। কিন্তু কোথায়, এখনও তো সেই মার্টিনকে ভুলতে পারলেন না রস টেলররা!
অন্য মার্টিন অবশ্যই ইইলোকে এবং ব্ল্যাক ক্যাপস সংসারে সশরীরে উপস্থিত। ধারে, ভারে, প্রভাবে। টিমের অধিনায়ক তিনি না হতে পারেন, কিন্তু অলিখিত লিডার বলতে তো তাঁকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছে না নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসন আছেন। শনিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে যিনি ৩৯ বলে ৬৩ করে ভারত ম্যাচের আগে নিজ-ফর্মের নমুনা রেখে গেলেন। কেকেআরের নতুন তারকা কলিন মুনরো, তিনি থাকবেন। রস টেলর মোক্ষম সময়ে তিনি এখনও রূপকথার সৃষ্টি করে দিতে পারেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্টের কারও কারও সঙ্গে কথা শুনলে মনে হবে, টি-টোয়েন্টি পৃথিবীর এত হিরে-জহরত একসঙ্গে তাঁদের টিমে আছেন ঠিকই। কিন্তু কাপ-জয়ের স্বপ্নের দিকে তাঁরা হাঁটছে একজনের হাত ধরে। ‘গাপ্পি’ মার্টিনের হাত ধরে।
রস টেলরদের টুইটার হ্যান্ডল চেক করলে, পিতাসম ক্রো-র মৃত্যুর খবর শুনে তাঁদের ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলার কাহিনি শুনলে বোঝা যাবে। টিম আগাম বলছে না যে, বিশ্বকাপ আমরা ক্রো-র জন্য জিতব। কিন্তু বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রো-র সম্মানে যে ভাল কিছু করার অদম্য ইচ্ছে কাজ করবে, সেটা বলা হল বেসরকারি ভাবে। আর সরকারি ভাবে হ্যামিল্টনের তরুণ অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টিনার এ দিন বলে গেলেন, “ওঁর মৃত্যু এখনও আমাদের কাছে দগদগে ঘা।”
মার্টিন ক্রো এবং মার্টিন গাপ্টিলের কথা হচ্ছে।
প্রথম মার্টিন, কাপ-যুদ্ধে উইলিয়ামসনদের অদৃশ্য মোটিভেশন। যাঁর উদ্দেশ্যে টিমের তরফ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনটা করা হচ্ছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে। যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে হাতে কালো আর্ম ব্যান্ড পরে নামবে গোটা টিম।
দ্বিতীয় মার্টিন, এক কথায় ব্রেন্ডন ম্যাকালাম-উত্তর মিস্টার নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট! কায়মনোবাক্যে টিম যাঁর সাম্প্রতিক ভয়ঙ্কর ফর্মের ‘আনইন্টারাপটেড সার্ভিস’ প্রার্থনা করছে।
দুপুরের ওয়াংখেড়েতে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্টের একজন বলছিলেন যে, মার্টিন ক্রো এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাঁকে ভুলতে চাইলেও ভোলা সম্ভব নয়। শোনা গেল, অকল্যান্ডে গত কাল প্রয়াত কিংবদন্তির শেষকৃত্যে টিমের কারও কারও যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু কেউ যায়নি এক আশ্চর্য কারণে। মৃত্যুপথযাত্রী ক্রো নাকি বলে গিয়েছিলেন যে, কাপ প্রস্তুতির মধ্যে যদি তাঁর কিছু একটা হয়ে যায়, টিম যেন সে সব ফেলে না আসে! টিমের ফোকাস কিছুতে নষ্ট হোক, ক্রো নাকি চাননি।
ক্রো-র নির্দেশ মেনেছে নিউজিল্যান্ড। যায়নি। বরং এই মুম্বইয়ে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু আবেগও চেপে রাখতে পারেনি। রস টেলরদের টুইটার হ্যান্ডল চেক করলে, পিতাসম ক্রো-র মৃত্যুর খবর শুনে তাঁদের ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলার কাহিনি শুনলে বোঝা যাবে। টিম আগাম বলছে না যে, বিশ্বকাপ আমরা ক্রো-র জন্য জিতব। কিন্তু বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রো-র সম্মানে যে ভাল কিছু করার অদম্য ইচ্ছে কাজ করবে, সেটা বলা হল বেসরকারি ভাবে। আর সরকারি ভাবে হ্যামিল্টনের তরুণ অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টিনার এ দিন বলে গেলেন, “ওঁর মৃত্যু এখনও আমাদের কাছে দগদগে ঘা।”
যে ঘা-তে তারা প্রলেপ খুঁজছে আর এক মার্টিনের ব্যাটকে সামনে রেখে। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আর নেই। বলা হচ্ছে, তাঁর দায়িত্বটা অনেকটা যাবে গাপ্টিলের উপর। গত বিশ্বকাপে ভাল ফর্মে ছিলেন। মাস কয়েক আগে শ্রীলঙ্কাকে একা হাতে শেষ করেছেন। তাঁর ৩০ বলে ঝোড়ো ৯০ কে ভুলেছে? টিম বলছে, ২০১৫-র শেষ থেকে যে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংটা তিনি করে চলেছেন, সেটা নাকি শুধু দরকার। “ব্রেন্ডন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ছিল। ও যে ব্যাটিংটা করত, সেটা প্রভাবে বিশাল দাঁড়াত। তবে আমাদের মার্টিন গাপ্টিল আছে। যে একবার চলতে শুরু করলে আমাদের আর কিছু ভাবতে হবে না। তা ছাড়া ওর অভিজ্ঞতাও প্রচুর,” বলে গেলেন স্যান্টনার। বুঝিয়ে যে, বিশ্বকাপ লক্ষ্যে টিমের মধ্যে দুই মার্টিনের ভূমিকাটা কী হবে।
আর হ্যাঁ, শুরুতে বলা হয়নি। একটা যোগসূত্র। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের সময় নিজের কলামে মার্টিন ক্রো একটা কথা লিখেছিলেন। বর্তমান নিউজিল্যান্ড টিমের দু’জনকে নিয়ে। লিখেছিলেন, ‘টু সনস আই নেভার হ্যাড।’ যে দুই সন্তানের একজনের নাম খুব সহজ।
মার্টিন গাপ্টিল!