গড়াপেটার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি ম্যাক্সওয়েলের।
কিছু দিন আগেই ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ‘আল জাজ়িরা’ টিভি-র একটি তদন্তমূলক তথ্যচিত্র। যেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল, ২০১৭ সালে রাঁচীতে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট এবং চেন্নাইয়ে ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্টে স্পট ফিক্সিং করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে আরও দেখানো হয়, অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এক ব্যক্তি বেশ কয়েক জন অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড ক্রিকেটারের নাম করেছেন, যাঁরা নাকি ওই স্পট ফিক্সিং কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
নাম না করলেও ওই তথ্যচিত্রে যে দুই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তাঁদের এক জন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বলে কেউ কেউ মনে করেছেন। সব চেয়ে আশ্চর্য হল, স্বয়ং ম্যাক্সওয়েলই বলেছেন, যে সময়টার কথা ওই তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, সে সময় তিনিই ক্রিজে ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার এক রেডিওয় দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘‘ওখানে কারও নাম নেওয়া হয়নি ঠিকই, কিন্তু যে সময়টার কথা বলা হয়েছে, তখন আমিই ক্রিজে ছিলাম। তা ছাড়া যে ক্রিকেট সরঞ্জাম দেখানো হয়েছে, তা ওই ম্যাচে একমাত্র আমিই ব্যবহার করেছিলাম। আর কেউ নয়। এই ব্যাপারটা কিন্তু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
এর পরে প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরেই ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘‘ওরা (আল জাজ়িরা) যদি কোনও নাম নেয়, তা হলে কিন্তু বড় ঝামেলায় পড়ে যাবে।’’ আইসিসি বা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তরফে এখনও ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনও কথা বলা হয়নি। কিন্তু ওই তথ্যচিত্রের একটা বিশেষ অংশ তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল। যা দেখেই চটেছেন ম্যাক্সওয়েল।
রাঁচীর ওই টেস্টে শুধু খেলাই নয়, সেঞ্চুরিও করেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তিনি বলেছেন, ‘‘অভিযোগটা শোনার পরে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। আঘাতও পেয়েছিলাম।’’ ওই টেস্ট নিজের পারফর্ম্যান্সের জন্য এত দিন স্মরণীয় হয়েছিল এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের কাছে। কিন্তু সেই স্মৃতিতে কালো দাগ পড়াটা মানতে পারছেন না ম্যাক্সওয়েল। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই টেস্ট ম্যাচ ঘিরে আমার অনেক সুখস্মৃতি আছে। এখনও মনে আছে, সেঞ্চুরি পাওয়ার পরে স্টিভ স্মিথকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম। সেই ম্যাচকে ঘিরে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে খারাপ তো লাগবেই।’’
স্পট ফিক্সিংয়ের এই অভিযোগ নিয়ে তা হলে কী বলবেন? ম্যাক্সওয়েল পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, ‘‘এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আমার ক্রিকেট জীবনের একটা সেরা মুহূর্তে এই ভাবে দাগ লাগানোটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা পুরোপুরি অনৈতিক।’’
অস্ট্রেলিয়ার এই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান বলে দিচ্ছেন, ‘‘এর চেয়ে খারাপ আর একটা কাজই করতে পারত ওরা। আমাদের ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ের গায়ে কালি ছেটানো। আমার ক্রিকেট জীবনে এই দু’টোই সেরা মুহূর্ত।’’ ম্যাক্সওয়েল পরিষ্কার বলছেন, তিনি এতটা বোকা নন যে টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার পরে সেটা ওই ভাবে নষ্ট করবেন। ‘‘আমি জানি না, ওরা কার নাম করেছে। তবে আমার সম্পর্কে যদি বলা হয়ে থাকে, তা হলে একটা কথাই বলব। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য আমি দিন রাত পরিশ্রম করেছি। দলে ফিরে এসে এ রকম একটা হাস্যকর কাজ করে নিজের ক্রিকেট জীবন কেউ অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে?’’
ম্যাক্সওয়েল এও বলছেন, এর আগে অনেক বারই সন্দেহজনক কোনও ঘটনা দেখলে তিনি সেটা আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখাকে জানিয়ে দিয়েছেন। যে রকম ঘটনা আইপিএল এবং আরও কয়েকটি টি-টোয়েন্টি লিগে ঘটেছে। ম্যাক্সওয়েলের মন্তব্য, ‘‘আমি দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারদের কাছে সব সময় স্বচ্ছ থেকেছি। আইপিএল খেলার সময়েও। যখনই খেলতে গিয়ে কিছু সন্দেহজনক মনে হয়েছে, তখনই ওদের সঙ্গে বসেছি। যাতে কখনও কোনও কিছুর সঙ্গে আমি জড়িয়ে না পড়ি।’’
আল জাজ়িরার ওই অভিযোগ নিয়ে আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখা তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে সাহায্য করছে ইংল্যান্ড, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডও। যে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে না।