শাস্তিই সুয়ারেজকে আরও ভয়ঙ্কর করেছে

এল ক্লাসিকোয় সুয়ারেজের গোলটা টিভিতে দেখার পর হঠাত্‌ই মনে ভেসে উঠল ১৯৮৯ সাল। সে বার মাঠে একটা বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার শাস্তি হিসেবে ৫০ দিন আমিও সাসপেন্ড ছিলাম। ফিরে এসে প্রথম ম্যাচে শুরু থেকেই কিছু করে দেখানোর তাগিদ কাজ করছিল। ম্যাচটায় শেষমেশ আমার গোলেই জিতেছিল মোহনবাগান।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

ড্রেসিংরুমে বার্সার ত্রিমূর্তি। সুয়ারেজ, মেসি ও নেইমার। ছবি: ফেসবুক।

বার্সেলোনা-২ : রিয়াল মাদ্রিদ-১

Advertisement

(ম্যাথিউ, সুয়ারেজ) (রোনাল্ডো)

এল ক্লাসিকোয় সুয়ারেজের গোলটা টিভিতে দেখার পর হঠাত্‌ই মনে ভেসে উঠল ১৯৮৯ সাল।

Advertisement

সে বার মাঠে একটা বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার শাস্তি হিসেবে ৫০ দিন আমিও সাসপেন্ড ছিলাম। ফিরে এসে প্রথম ম্যাচে শুরু থেকেই কিছু করে দেখানোর তাগিদ কাজ করছিল। ম্যাচটায় শেষমেশ আমার গোলেই জিতেছিল মোহনবাগান। তাই অনেকের চেয়ে এই অধম একটু বেশিই জানে শত সমালোচনায় দীর্ণ কোনও ফুটবলারের গোলে যখন তার টিম জেতে তখন সেই প্লেয়ারের কতটা আনন্দ হয়! ফুটবলগ্রহে লুই সুয়ারেজ যদি একটা আস্ত বঙ্গোপসাগর হয়, তা হলে আমি পাড়ার একটা ছোট জলাশয়ের বেশি কিছু নই। কিন্তু একটুআধটু ফুটবল খেলার সুবাদে নিজের কথাটা বললাম, সুয়ারেজের মনের যন্ত্রণা উগরে কিছু করার একটা বাড়তি তাগিদ বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ মহাযুদ্ধেও দেখলাম বলেই।

উরুগুয়ান স্ট্রাইকারের উপর দিয়ে কী ঝড়-ই না গিয়েছে গত এক বছরে! বিশ্বকাপ থেকে নির্বাসন। তার পর বার্সেলোনায় আসা। সেখানেও শুরুতে ছন্দ পাচ্ছিল না বলে স্পেনের সাংবাদিকরা লিখতে শুরু করে দিয়েছিল, ও শরীরে মেদ বাড়িয়ে ‘বেলুন’ হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে সুয়ারেজ কোন একটা ম্যাচে নাকি ফের বিপক্ষ ফুটবলারকে কামড়েছে বলেও খবর করেছে। কিন্তু গত মরসুমে ইপিএলের হায়েস্ট স্কোরার স্পেনে এসে যখনই মাঠে নেমেছে তখনই বার্সার জন্য নিজেকে নিংড়ে দিয়েছে। মনে পড়ছে, লা লিগার প্রথম এল ক্লাসিকো। যেটা ছিল নির্বাসন কাটিয়ে ওর অভিষেক ম্যাচ। নেইমারের গোলে এগিয়ে গিয়েও রিয়ালের ঘরের মাঠে ১-৩ হেরে ফিরেছিল বার্সা। একমাত্র গোলটা নেইমার করেছিল কিন্তু সুয়ারেজের ক্রস থেকেই।

সোমবারই আনন্দবাজারে পড়লাম জয়টাকে নিজের অস্তিত্বের জন্যই জরুরি মনে করে সুয়ারেজ। আগের রাতেই এল ক্লাসিকোয় ওর জয়ের গোলে সেই তাগিদই স্পষ্ট। এক বার চোখ বুজে গোলটা মনে করুন। রিয়াল ডিফেন্স ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। সুয়ারেজ কিন্তু শান্ত মাথায় দ্বিতীয় পোস্টে বলটা প্লেসিং করে দিয়ে গেল। আক্ষরিক অর্থেই ক্লিনিক্যাল ফিনিশ যাকে বলে। মেসি-নেইমারের সঙ্গে সুয়ারেজ-- বার্সেলোনার ‘বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল’। যারা স্বমহিমায় থাকলে যে কোনও প্রতিপক্ষেরই সলিল সমাধি হতে পারে। যেমন হল রবিবার রাতে।

তবে এনরিকের ওই ভয়ঙ্কর ত্রিভুজের সঙ্গে পাল্লা দিতে রিয়াল কোচ আন্সেলোত্তির হাতেও ছিল বিবিসি (বেল-বেঞ্জিমা-ক্রিশ্চিয়ানো)। যাদের গতি মেসিদের চেয়ে কিছুটা বেশিই দেখলাম। প্রথমার্ধটা রিয়াল যে ছন্দে খেলছিল তাতে মনে হচ্ছিল অ্যাওয়ে থেকেও তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরবে হয়তো। বেলের গতি আর মদরিচের স্কিমিং দু’চোখ ভরে দেখছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় গোলটা খাওয়ার পরেই পেপে-মার্সেলোদের রক্ষণ কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। শেষ তিন ম্যাচেই দেখলাম শেষের দিকে গিয়ে কেমন খেই হারিয়ে ফেলছে রিয়াল রক্ষণ।

সব শেষে এক জন ফুটবল অনুরাগী হিসেবে আমি খুশি, একই ম্যাচে রোনাল্ডো দর্শনীয় গোল করল, আবার মেসিও জিতল। রিয়ালের ১-১ করার গোলটা রোনাল্ডো যতটা ভাল করেছে, ততটাই অনবদ্য ভাবে ওকে বার্সা বক্সে ব্যাকহিলে ফাইনাল পাসটা বাড়িয়েছিল বেঞ্জিমা। বিবিসি-র আংশিক ঝলক ওই সময়ই দেখতে পেলাম। তবে এল ক্লাসিকো জিতে বার্সেলোনা লা লিগা ঘরে তোলার দিকে আরও এগিয়ে গেল। রোনাল্ডোদের চেয়ে এই মুহূর্তে চার পয়েন্টে এগিয়ে মেসিরা। দশটা ম্যাচ অবশ্য বাকি। এবং ফুটবলে কখন কী হয় কে জানে! বছরের শুরুতে কেউ কি জানত মেসি, নেইমারের পাশে কামড়-কাণ্ডে দীর্ণ সুয়ারেজও এ রকম ঝলমল করবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন