আটচল্লিশ ঘণ্টাও পেরোল না, মহানাটকীয় মোড় নিল শেন ওয়ার্ন বনাম স্টিভ ওয় বিতর্ক। বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক যে শুধু মহাবিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন তা-ই নয়, ক্যাপ্টেন স্টিভের হয়ে ব্যাট ধরলেন তাঁর দুই তৎকালীন সতীর্থ ম্যাথু হেডেন এবং জাস্টিন ল্যাঙ্গারও।
দিন দুয়েক আগে ওয়ার্ন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন স্টিভকে নিয়ে। বলে দিয়েছিলেন যে, স্টিভের মতো স্বার্থপর ক্রিকেটার তিনি নাকি আর দেখেননি। কিংবদন্তি লেগস্পিনারের রাগের মূল কারণ ছিল, ’৯৯ সালে এক টেস্টে তাঁকে বাদ দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে স্টিভের নেমে পড়া। ওয়ার্নের বোমা নিয়ে স্টিভ প্রথম প্রথম কিছু বলতে না চাইলেও শুক্রবার পাল্টা দিলেন। বলে দিলেন, তিনি ক্যাপ্টেন হিসেবে নিজের কাজটা করেছিলেন।
‘‘শুধু শেন কেন, ‘তোমাকে খেলাতে পারছি না’ কথাটা যে কাউকে বলাই খুব সহজ ছিল না। অ্যাডাম ডেল বা গ্রেগ ব্লিওয়েট কাউকে বলাই সহজ ছিল না। অথচ কথাটা অনেককেই বলতে হয়েছে। বলতে হয়েছে যে, তুমি ম্যাচটায় বসছ। খেলছ না,’’ এ দিন এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলে দেন স্টিভ। সঙ্গে আরও যোগ করেন, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে এটা কঠিনতম কাজ। কিন্তু তার জন্যই তো ক্যাপ্টেন। লোকে তো আশা করবে যে অধিনায়ক টিমের কথা ভেবে কঠিন সব সিদ্ধান্ত নেবে। একজন ক্যাপ্টেনকে সময় সময় সেটা করতে হয় আর তাকে প্রস্তুতও থাকতে হয় যে সবাই তাকে পছন্দ করবে না।’’
শুধু স্টিভ নন, ওয়ার্নকে পাল্টা দিতে নেমে পড়লেন হেডেন-ল্যাঙ্গারও। এক সময়ের ভয় ধরানো ওপেনিং জুটি স্টিভের পাশে খোলাখুলি দাঁড়িয়ে দু’পক্ষের বিভাজনও স্পষ্ট করে দিলেন। এমনিতে ওয়ার্ন বনাম স্টিভ টানাপড়েন নতুন নয়। জল্পনা সত্যি হলে, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ থেকেই তা চলত। কেউ ছিলেন স্টিভের পাশে, কেউ ওয়ার্নের। হেডেন-ল্যাঙ্গার প্রকাশ্যে নেমে গেলেন। নিজের কলামে হেডেন লিখেছেন, ‘স্টিভ নিয়ে শেনের যা মতামত, আমার ঠিক তার উল্টো। আমার ঠাকুমা বলতেন যে, তোমার সঙ্গে যে যেমন ব্যবহার করবে তুমিও তার সঙ্গে ঠিক তাই করবে। আর আমি পরিষ্কার বলতে পারি যে, স্টিভ সব সময় আমাকে সমর্থন জুগিয়ে যেত।’ হেডেন আরও লিখেছেন, ‘স্টিভ সবাইকে বিশ্বাস জোগাত। কারণ ও নিজে বিশ্বাস করত যে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আমার মতে, স্টিভ অস্ট্রেলীয় খেলাধুলো দুনিয়ার এক রত্ন।’ ল্যাঙ্গার আরও চাঁছাছোলা, আরও ঝাঁঝালো। ‘‘ওয়ার্ন স্টিভকে স্বার্থপর বলছে? আমি তো বলব স্টিভের মতো স্বার্থহীন ক্রিকেটার আমি আর দেখিনি। ও অ্যালান বর্ডার বা রিকি পন্টিংয়ের মতো যে চারিত্রিক ভাবে কঠিন শুধু নয়, অসাধারণ একজন অধিনায়কও,’’ ওয়ার্নকে শুনিয়ে দিয়েছেন ল্যাঙ্গার। শেষে আরও খোঁচা, ‘‘ব্যাগি গ্রিনের ভ্রাতৃত্ব নিয়ে আমরা এত কথা বলি। খুব বেশি লোক সেই সম্মানটা পায় না। আমরা তাই সেটাকে সিরিয়াসলি নিই। আর যতটুকু আমি জানি এটা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ধরন নয় যে, যাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে এত সুন্দর সব সময় কেটেছে, তাদের নিয়ে সমালোচনা করব। যদিও সমালোচনাটা এখানে হচ্ছে একতরফা। সোজাসুজি বলছি, ওয়ার্নির কথায় আমি অসম্ভব হতাশ।’’
যুদ্ধের ‘রাউন্ড টু’-এ পৌঁছে ওয়ার্ন কী করেন, নতুন কী বলেন, সেটাই এখন আগ্রহের।