মেহুলি ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
ফাইনাল রাউন্ডে যখন তিনি শেষ গুলিটা ছুড়তে যাচ্ছেন, সোনা প্রায় হাতের মধ্যে। .৬ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। বাঙালির হাত ধরে অলিম্পিক্স পর্যায়ে একটি সোনা আসবে, এই স্বপ্ন যখন সবে দানা বাঁধতে শুরু করেছে, তখনই বিপর্যয়। শুটিং দুনিয়ার প্রায় সবাইকে স্তম্ভিত করে শেষ শটে মাত্র ৯.১ পয়েন্ট স্কোর করে যুব অলিম্পিক্সে সোনা হাতছাড়া করলেন বাঙালি মেয়ে। ২৪৮ পয়েন্ট স্কোর করলেন তিনি। সোনা জিতলেন ডেনমার্কের স্টেফানি গ্রুন্ডসোয়ি (২৪৮.৭ পয়েন্ট)।
পদক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ফোনে রীতিমতো হতাশ শুনিয়েছে মেহুলির গলা। কোনও রকমে বলতে পেরেছেন, ‘‘ভাবতে পারছি না, কী ভাবে শেষ শটটা এত খারাপ হল।’’
বিশ্বাস করতে পারছেন না মেহুলির প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকারও। সোমবার রাতে বুয়েনস আইরসে মেহুলির ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্ট শুরু হওয়ার পরেই অনলাইনে চোখ রেখেছিলেন জয়দীপ। যখন শেষ রাউন্ড শুরু হচ্ছে, ধরে নিয়েছিলেন সোনা আসছে। ‘‘শেষ রাউন্ডে .৬ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা মানে বিশাল ব্যাপার। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম সোনা আসছে। এমনকি আমার কাছে অভিনন্দনবার্তাও আসতে শুরু করে। কিন্তু বিরাট অঘটন ঘটে গেল। মেহুলি যে ৯.১ পয়েন্ট স্কোর করবে, কেউ ভাবতে পারেনি। কত বছর যে ও এত কম স্কোর করেছে, মনে করতে পারছি না।’’ ছাত্রীর মতোই এ দিন হতাশ তাঁর প্রশিক্ষকও। ভারত ছাড়ার আগে মেহুলি বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আমি সব সময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার। এখানেও তাই করব। আমার প্রস্তুতিটাও ভাল হয়েছে। আশা করি, যুব অলিম্পিক্সে ভাল ফলই করতে পারব।’’ এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলে ছিলেন না মেহুলি। এর পরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে লড়াই করে হেরে যান। তার পরেই ছিল এই যুব অলিম্পিক্স। যেখানে পদকই ছিল কমনওয়েলথ গেমসে রুপোজয়ীর মেহুলির পাখির চোখ। ফাইনালের আগের রাতে একটু নার্ভাসই ছিলেন মেহুলি। ফোন করে সে কথা বলেন জয়দীপকে। কোচ চেষ্টা করেছিলেন, শুটিং থেকে মনটা একটু ঘুরিয়ে দেওয়ার। জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘আমি ওকে মনে করিয়ে দিই, সোমবার মহালয়া। শুভ দিনে ভাল কিছু নিশ্চয়ই করতে পারবি।’’
ফাইনাল রাউন্ডে একটা সময় চার নম্বরে নেমে এসেছিলেন মেহুলি। সেখান থেকে চলে এসেছিলেন সোনা জয়ের একেবারে কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না। তবে সোনা ফস্কালেও যুব অলিম্পিক্সে নিজের ছাপ রেখে যেতে সফল বাংলার মেহুলি।