পতন: ধরাশায়ী রোহিত। আইপিএল থেকে ছিটকে গেল মুম্বইও। ছবি: এএফপি
দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সঙ্গে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচটা দেখতে দেখতে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, রোহিত শর্মা কোন যুক্তিতে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে আসছেন? ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়ায় পাঁচে নামতে বাধ্য হলেন, এমনটা আমার মনে হয় না। ব্যাটিংয়ের সময় সাবলীলই দেখিয়েছে। রোহিতের ব্যাটিং অর্ডার ঠিকমতো সাজাতে না পারার খেসারত দিতে হল মুম্বইকে। শুধু দিল্লির কাছে ১১ রানে হারার জন্যই নয়, গোটা আইপিএল জুড়ে রোহিতের ভুল জায়গায় ব্যাট করাটা মুম্বইয়ের পক্ষে বিশাল ক্ষতিকারক হয়ে গেল।
সে যাই হোক। আসল কথা হল, এ বারের আইপিএল থেকে মুম্বই ছিটকে যাওয়ায় সব চেয়ে সুবিধে হয়ে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। আইপিএলে মুম্বই বরাবরই কলকাতার বড় গাঁট। এ বারও দু’টো ম্যাচ মুম্বইয়ের কাছে বিশ্রী হেরেছিল কলকাতা। প্লে-অফের প্রথম ম্যাচে সেই মুম্বইকে যে খেলতে হবে না, এটা নিশ্চয়ই কেকেআর শিবিরে স্বস্তি এনে দেবে।
চেন্নাই সুপার কিংস বনাম কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচ শুরুর আগেই বোঝা গিয়েছিল, প্লে-অফের প্রথম লড়াইয়ে নাইটদের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে রাজস্থান রয়্যালস। সেটা মাথায় রেখে বলছি, ইডেনে জিততে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় কলকাতার।
রাজস্থান দলের ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে যিনি প্রধান কারিগর, সেই জস বাটলার ইংল্যান্ড ফিরে গিয়েছেন। নেই বেন স্টোকসও। যদিও এঁদের দু’জনকে ছাড়াই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে হারিয়েছে রাজস্থান, তবু বলব, অজিঙ্ক রাহানেরা পিছিয়েই শুরু করবেন ইডেনে।
তার ওপর রাহানেরা এমন একটা দলের সামনে পড়ছেন, যারা ঠিক সময়ে দারুণ ছন্দ পেয়ে গিয়েছে। এক বার কেকেআর দলটার দিকে তাকান। শুরুতে ঝড় তুলছে ক্রিস লিন-সুনীল নারাইন জুটি। দুই ব্যাটসম্যান এত দ্রুত রান তুলছেন যে, বিপক্ষ প্রথম ছ’ওভারেই হারিয়ে যাচ্ছে ম্যাচ থেকে। তার ওপর মিডল অর্ডারে রবিন উথাপ্পা, দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেলরা তো আছেনই। কার্তিক নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়েছেন ম্যাচ শেষ করে আসার।
বোলিংয়েও ছন্দে রয়েছেন তিন স্পিনার। যাঁদের মধ্যে দু’জন (কুলদীপ যাদব, নারাইন) নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন। কুলদীপ তো আগের ম্যাচে শেষ করেছিলেন রাজস্থানকে। বল হাতে জ্বলে উঠছেন রাসেলও। দেখে মনে হচ্ছে, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে পেরেছেন। ওঁকে দিয়ে এখন চার ওভারই বল করাতে পারেন কার্তিক। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ছেলেটাও ভাল বল করছেন। সব মিলিয়ে রাজস্থানের থেকে অনেক এগিয়ে কেকেআর।
সত্যি কথা বলতে কী, প্লে-অফের বাকি তিনটে দলকে দেখে মনে হচ্ছে না এরা কেউ নাইটদের থামাতে পারে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ পর পর তিনটে ম্যাচ হেরেছে। ওদের বোলিংয়ের যে ধারটা প্রথম দিকে ছিল, সেটা হারিয়ে গিয়েছে। চেন্নাইয়ের ধারাবাহিকতা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। আর রাজস্থানের কথা তো আগেই বলেছি।
প্লে-অফে মুম্বই থাকলে অবশ্য লড়াইটা জমে যেত। কিন্তু রবিবার মুম্বই যে ভাবে হারল, তাতে আমি স্তম্ভিত। দিল্লির রানটা খুব বেশি ছিল না। চার উইকেটে ১৭৪। যার মধ্যে ঋষভ পন্থ একাই করলেন ৪৪ বলে ৬৪। মুম্বইয়ের যা ব্যাটিং, তাতে ওই রানটা অবশ্যই করে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু রোহিত নিজেকে পাঁচ নম্বরে এনে অহেতুক দলের ওপর চাপ তৈরি করলেন। সূর্যকুমার যাদব, ঈশান কিসান, কায়রন পোলার্ডরা নিশ্চয়ই রোহিতের চেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান নন।
মানছি, পিচ একটু মন্থর ছিল। বল ঘুরছিল। কিন্তু তা বলে মুম্বইয়ের ১৬৩ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার যুক্তি নেই। হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। যিনি ভারতীয় দলে নিয়মিত খেলছেন, তিনি কেন এই রকম পরিস্থিতিতে ম্যাচ বার করবেন না? হার্দিক করলেন ১৭ বলে ২৭। বেন কাটিং (২০ বলে ৩৭) প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন। হার্দিক আর একটু উইকেটে থাকলে জিততেও পারত মুম্বই।
তা হলে হয়তো কলকাতার রাস্তা কিছুটা কঠিন হত।