নতুন তারা: শেখ ফৈয়জের সামনে এখন নতুন লক্ষ্য। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁর স্বপ্ন ছিল স্ট্রাইকার হওয়ার। তাই আদর্শ ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের কোচ কলিন টোলের পরামর্শে উইংহাফ পজিশনে খেলতে শুরু করেন। তাতেও অবশ্য গোল করতে ভুলে যাননি। তিনি, শেখ ফৈয়জ। দু’ম্যাচে তিন গোল করে ৩৬ বছর পর মহমেডানকে কলকাতা লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। অথচ একটা সময় বুট কেনারও সামর্থ ছিল না হাওড়ার মাকরদহের বছর বাইশের ফৈয়জের!
রবিবার বারাসত স্টেডিয়ামে সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার হাতে নিয়ে ফৈয়জ বললেন, ‘‘আমার বাবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে আতর বিক্রি করে কোনও মতে সংসার চালাতেন। কিন্তু প্রবল দারিদ্রের মধ্যেও কখনও আমার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেননি বাবা-মা। সব সময় প্রেরণা জুগিয়েছেন।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘বুট কেনার জন্য সংসার খরচের টাকাও বহুবার আমার হাতে তুলে দিতে দু’বার ভাবেননি ওঁরা।’’
ফৈয়জের ফুটবল শুরু মৌরি স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখান থেকেই নির্বাচিত হন বাংলার বি সি রায় ট্রফির দলে। তার পরেই ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে ফৈয়জের জীবন। বি সি রায় ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বছর পাঁচেক আগে গোয়ায় সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পান তিনি। কলিন টোলের কোচিংয়ে কাতারে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন ফৈয়াজ। ভারতীয় দলে খেলার সুবাদেই গত বছর চাকরি পান রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে। তাতে সংসারের আর্থিক সংকট কিছুটা দূর হলেও ফৈয়জ তৃপ্ত নন। তাঁর স্বপ্ন সুনীলের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলা।
কয়েক মাস আগেই অবশ্য আদর্শ ফুটবলারের সঙ্গে খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ফৈয়জের। মহমেডানের সতীর্থ মনবীর সিংহের সঙ্গে তিনিও ডাক পেয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলের শিবিরে। ফৈয়জের কথায়, ‘‘আমরা চার জন ডাক পেয়েছিলাম। কিন্তু একমাত্র মনবীরই চূড়ান্ত দলে সুযোগ পায়।’’
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই টিভিতে মরিশাসের বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মনবীরের অভিষেক দেখেছেন ফৈয়জ। আর সেটাই যেন তাঁকে আরও উদ্বুদ্ধ করছে ভাল খেলার জন্য। বলছিলেন, ‘‘মনবীরের জন্য গর্ব হচ্ছে। এ বার আমাকেও জাতীয় দলে খেলতে হবে।’’
ফৈয়জের স্বপ্ন কি পূরণ হবে? রবিবার বারাসত স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক জো পল আনচেরি বললেন, ‘‘অবশ্যই। তবে তার জন্য ফৈয়জকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’