জুটিতে লুটি। শুক্রবার বারাসতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মোহনবাগান-৩ (কাতসুমি-২, ডুডু)
বিএনআর-০
তিন দিন আগে সবুজ-মেরুন জার্সিতে মাঠে নেমেই বাগানে ফুল ফুটিয়েছিলেন ডুডু ওমাগবেমি।
শুক্রবার রেলের উপর আছড়ে পড়ল জাপানি বোমা! কাতসুমির জোড়া গোলে বিএনআর-বধ।
ডুডু-কাতসুমি যুগলবন্দির দৌরাত্ম্যে মোহনবাগানের ১২৫ বছরের উৎসব যেন চব্বিশ ঘণ্টা আগেই বারাসত থেকে শুরু হয়ে গেল! থরে-থরে সবুজ-মেরুন পতাকা, ফুটবলারদের ছবির সঙ্গে ড্রাম আর কাঁসরে উপচে পড়া গ্যালারিতে খুশির জোয়ার। যে রেলকে পড়শি ইস্টবেঙ্গল হাফডজন গোল দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই সত্তর মিনিট পর্যন্ত গোল নেই। তীব্র টেনশনে ভুগতে ভুগতে তিন গোল! জয়ের আনন্দটা তাই যেন একটু বেশিই।
কলকাতা লিগের ডার্বি গুটিগুটি এগিয়ে আসছে। ডুডুর সঙ্গে কাতসুমির বোঝাপড়ায় গোল হচ্ছে। চলতি লিগে মোহনবাগান যে আটটা গোল করেছে সেগুলো তো ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এই দুই নাইজিরিয়ান আর জাপানিই।
বাগানে বিদেশিদের ঝাঁঝের মাঝে অবশ্য আলো ছড়াতে শুরু করেছেন দুই তরুণ বঙ্গসন্তান— আজহারউদ্দিন মল্লিক এবং সুমন হাজরা। দু’জনেরই এ দিন সবুজ-মেরুন জার্সিতে অভিষেক ম্যাচ ছিল। গোল না পেলেও ডুডুর মতোই বিপক্ষের গোলে টানা হানা দিয়ে গেলেন হুগলির আজহার। সাই থেকে এ বছরই মোহনবাগানে সই করেছেন তিনি। আর সাইড ব্যাকে মুর্শিদাবাদের সুমনের খেলা দেখার পর উচ্ছ্বসিত বাগান কোচ সঞ্জয় সেনও। ‘‘সুমন দারুণ ফুটবলার। ওর ফোকাস ঠিক থাকলে অনেক দূর যাবে। আর আমি চেয়েছিলাম আজহার আজ গোল পাক। গোল না পেলেও ও কিন্তু পজিটিভ ফুটবল খেলে গেল।’’
ছ’ম্যাচ খেলে বিএনআরের পয়েন্ট এক। এ হেন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে মোহনবাগানের তিন পয়েন্ট পাওয়াটা প্রত্যাশিত ছিল। বরং অপ্রত্যাশিত—ইস্টবেঙ্গলের কাছে বিধ্বস্ত সেই টিমের ফুটবলাররাই এ দিন কী করে সত্তর মিনিট পর্যন্ত আটকে রাখল মোহনবাগানের মতো হেভিওয়েটকে? বাগান কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘ওরা পুরোটাই তো নেগেটিভ ফুটবল খেলল। যখন-তখন মাঠে শুয়ে পড়ছে। গোল করব না, করতেও দেব না— মানসিকতা নিয়ে নেমেছিল। হাফটাইমে তাই আমার ফুটবলারদের বলেছিলাম, বুদ্ধি করে জিততে হবে তোমাদের। আর সেটাই ওরা করে দেখিয়েছে।’’
সঞ্জয় ভুল বলেননি। প্রথমার্ধের ছবি পরের অর্ধে পাল্টাতেই মাঠের গোটা পরিস্থিতিও বদলে যায়। বাগানের দু’টো পরিবর্তনই মূলত গোটা টিমের চরিত্র বদলে দেয়। রাম মালিককে তুলে কেন লুইসকে নামান কোচ সঞ্জয়। লালকমলের বদলে নামান আসিফকে। ফলে মাঝমাঠ আরও সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠে। আক্রমণের গতিও বাড়ে। আমেরিকায় এমএলএস খেলা লুইস ডান দিক যে ভাবে বারবার কাট করে ঢুকছিলেন তা সামাল দেওয়ার মতো শক্তি রেল রক্ষণের ছিল না। তাঁর নেওয়া কর্নারেই জটলার মধ্যে থেকে প্রথম গোল কাতসুমির।
আর এই গোলটাই হয়ে যায় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ এর পরই নভোনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেল দল আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নিটফল, ডুডু এবং কাতসুমির পরপর গোল করে যাওয়া। জাপানি মিডিও এ দিন শুধু নিজে জোড়া গোল করেছেন তাই নয়, ডুডুকে গোল করিয়েছেন অসাধারণ পাস দিয়ে। তা সত্ত্বেও কাতসুমি বেশিক্ষণ বল পায়ে রাখছেন মনে করে বিরক্ত বাগান কোচ। বলেও দিলেন, ‘‘কাতসুমি যদি বল বেশিক্ষণ পায়ে না রেখে পাস বাড়াত প্রথমার্ধেই গোল হত।’’
ইস্টবেঙ্গল জিতে চলেছে। বাগান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে তাড়া করছে। লাল-হলুদের ডং হ্যাটট্রিক করছেন তো পাল্টা ডুডুও তিন গোল করছেন। সব মিলিয়ে সাপ-লুডোর লিগ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। যা মনে হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির গোড়ায় মরসুমের প্রথম ডার্বিই হয়তো খেতাব নির্ধারক ম্যাচ হতে চলেছে কলকাতা লিগের।
মোহনবাগান: শিল্টন, সুখেন, প্রতীক, বালমুচু, সুমন, কাতসুমি (মণীশ), পঙ্কজ, লালকমল (আসিফ), রাম (কেন), আজহারউদ্দিন, ডুডু।