কলকাতা লিগ চাই, সংকল্প মোহনবাগানে

কলকাতা লিগে অভিযান শুরুর আগের দিন সকাল। সবুজ-মেরুন তাঁবুতে পা দিয়েই সমর্থক শূন্য গ্যালারি দেখে অস্ফুটে এ কথা বলে উঠলেন, টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অচিন্ত্য বেলেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

প্রস্তুতি: ডিকা নেই, শনিবার নজরে তাই হেনরি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

এ কোন মোহনবাগান গ্যালারি!

Advertisement

কলকাতা লিগে অভিযান শুরুর আগের দিন সকাল। সবুজ-মেরুন তাঁবুতে পা দিয়েই সমর্থক শূন্য গ্যালারি দেখে অস্ফুটে এ কথা বলে উঠলেন, টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অচিন্ত্য বেলেল। বিরানব্বইয়ের মোহনবাগান অধিনায়ক কমিটির আর এক সদস্য মিহির বসুর কাছে আফশোস করছিলেন, ‘‘সাতাশিতে প্রথম বার সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে লিগের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম। তার আগের সকালে উৎসাহ দিতে সদস্য গ্যালারি প্রায় ভরে গিয়েছিল।’’ যা শুনে মিহিরের আফসোস, ‘‘বাঙালি এখন বিশ্বকাপ আর ইউরোপের ফুটবল দেখে। আর ঘরের ছেলেদের ফুটবল নিয়ে বিপ্লব করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে।’’

সেই ২০০৯ সালের পরে কলকাতা লিগ আসেনি মোহনবাগানে। এই পরিস্থিতিতে পাঠচক্রের বিরুদ্ধে কলকাতা লিগ অভিযান শুরুর আগে কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বা দিপান্দা ডিকাদের বিশ্বকাপ ঘোর রয়েই গিয়েছে।

Advertisement

প্রথম ম্যাচে খেলতে না পারা দিপান্দা ডিকা যেমন বলে দিলেন, ‘‘ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছে। আমার স্ত্রী ফরাসি ভাষায় কথা বলেন। আমিও ফ্রান্সের সমর্থক। সদ্যোজাত মেয়ের তাই নাম রেখেছি ফ্রান্স ম্যাডিসন ডিকা। এ বার কলকাতা লিগে যত গোল করব সব আমার মেয়ে ফ্রান্স ম্যাডিসনকেই উৎসর্গ করব।’’

আর সবুজ-মেরুন শিবিরের কোচ? তিনি আবার এ দিন ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পরে টানা মিনিট পঁচিশ অনুশীলন করিয়ে গেলেন সেট পিস। কারণ জানতে চাইলে সিঁথি নিবাসী কোচও বলে দেন, ‘‘এ বারের বিশ্বকাপে দেখেছেন, কত গোল সেট পিস থেকে হয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে হওয়া ১১ টি গোলের মধ্যে পাঁচটিই ফ্রি-কিক অথবা কর্নার থেকে। কলকাতা লিগে বড় দলের বিরুদ্ধে ছোট দলগুলো গোলের দরজা বন্ধ করে দেয় রক্ষণে খেলোয়াড় বাড়িয়ে। তখন সেট পিস থেকে গোলই চাপমুক্ত করতে পারে।’’ সেট পিসের পাশাপাশি এ দিন পেনাল্টি অনুশীলনও করতে দেখা গেল মোহনবাগানকে।

বিপক্ষ পাঠচক্র এ বারের কলকাতা লিগে অন্যতম শক্তিশালী দল। লালকমল ভৌমিকের নেতৃত্বাধীন দলে রয়েছেন জাপানি স্ট্রাইকার ফুতা নাকামুরা। ক্রোয়েশিয়ার উইথড্রল স্ট্রাইকার আন্তো পেয়িচ। আক্রমণে রয়েছেন বুঁধিরাম টুডু, স্নেহাশিস চক্রবর্তীর মতো বড় দল ফেরত ফুটবলারও। রক্ষণে গত বছর কলকাতা লিগে তাক লাগানো জিম্বাবোয়ের স্টপার ভিক্টর কামহুকা, মনোতোষ চাকলাদার। কল্যাণী স্টেডিয়ামে প্রাক-মরসুম শিবির করা দলটির ডাচ কোচ রেমকো বোয়ের।

মোহনবাগান কোচ তাই বলছেন, ‘‘পাঠচক্র দলটার আক্রমণ ভাগ দুর্দান্ত। রক্ষণ ও মাঝমাঠকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছি। কারণ, এ বার আমাদের কলকাতা লিগ পেতেই হবে। ছেলেদের তা বলে দিয়েছি।’’ সঙ্গে অবশ্য যোগ করেন, ‘‘তবে বেশি সাবধানী হতে চাই না। ওরা আমাদের চাপ দেওয়ার আগেই আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে বিপক্ষ রক্ষণে। প্রেসিং ফুটবলের সঙ্গে প্রতি-আক্রমণ এ বার আমাদের অস্ত্র।’’

এ দিন সকালের অনুশীলন থেকে স্পষ্ট, প্রথম ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট তুলে আনতে গোলে শিল্টন পালকে রেখে রক্ষণে অরিজিৎ বাগুই, কিমকিমা, কিংসলে ও অময় গণেশ রানাওয়াড়ে-কে নিয়েই দল সাজাচ্ছেন মোহনবাগান কোচ। মাঝমাঠে পিন্টু মাহাতো, শিল্টন ডি’সিলভা, সৌরভ দাস এবং বসন্ত সিংহ। আক্রমণে গোকুলম এফসি থেকে আসা হেনরি কিসেক্কার সঙ্গে আজহারউদ্দিন মল্লিক।

বিপক্ষ দলের জাপানি স্ট্রাইকার নাকামুরা বলছেন, ‘‘মোহনবাগান ভাল দল জানি। কিন্তু নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেললে আমরাও ওদের চাপে ফেলতে পারি।’’

যা শুনে গত বছর আই লিগের ডার্বিতে মোহনবাগানের গোলদাতা এজে কিংসলে বলছেন, ‘‘রক্ষণে সামান্য ভুল করাও চলবে না। করলে কিন্তু এ বারও কলকাতা লিগ আমাদের হাত থেকে পিছলে যেতে পারে। সেটা মাথায় নিয়েই নামব পাঠচক্রের বিরুদ্ধে।’’

শনিবার কলকাতা লিগ: মোহনবাগান বনাম পাঠচক্র (মোহনবাগান মাঠে খেলা শুরু ৪.৩০ থেকে)। সরাসরি সম্প্রচার সাধনা টিভিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন