ফের জয়ের রাজ্যে ফেরার পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী মোহনবাগান?
সনি: আশি শতাংশ এগিয়ে গিয়েছি। পরের তিনটি বাইরের ম্যাচে জিতলেই তো আমরা চ্যাম্পিয়ন।
কাতসুমি: অঙ্ক করিনি। তবে আর নয় পয়েন্ট পেলেই কেউ আমাদের ছুঁতে পারবে না।
বোয়া: আমাদের সামনে রাস্তায় এমন কেউ নেই যে, তাকে ওভারটেক করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা আমাদের হাতেই রয়েছে। খেতাব জয়টা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ডেনসন: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা এখন মুখে আনা ঠিক নয়। বলতে পারেন আমরা সবার চেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় আছি।
সঞ্জয় সেন: করিমের টিমকে হারিয়ে একধাপ এগোলাম। ছেলেরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। খেতাব পাবই এটা বলার জায়গায় নেই এখনও। তবে আমি আশাবাদী।
রবিবার লাঞ্চ টেবিলে কোচ ও ফুটবলাদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে যা ফল বেরোল তা হল— প্রত্যেকে সতর্ক, তবে চ্যাম্পিয়ন হব না, এ কথা কেউই বলছেন না। বরং সবার চোখ ট্রফির দিকেই।
পাঁচ বছর পর কোনও সর্বভারতীয় ট্রফির সামনে দাঁড়িয়ে বাগান। যদি সেটা হয়, তা হলে এর পিছনে অন্যতম কারণ হবে— আত্মবিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাস। শিলংয়ে হেরে যাওয়ার পর সবাই যখন ধরে নিয়েছে সনি-ডেনসনদের চাপে পড়া শুরু হয়ে গেল, তখনই পুণে ম্যাচে অনায়াস জয় ছিনিয়ে আনার পিছনে কাজ করেছে, ‘‘আমরা পারি, আমরাই পারব’’ মনোভাব।
এ দিন দুপুরেই দলের বিদেশি ফিজিও গার্সিয়া এবং বলবন্ত সিংহ-সহ আরও পাঁচ ফুটবলার যোগ দিয়েছেন টিমের সঙ্গে। পরপর তিনটে বাইরের ম্যাচ। কার্ড সমস্যা, চোট হতেই পারে। লম্বা লিগে যা হওয়া স্বাভাবিক। সেই ধাক্কায় যাতে টিমের ক্ষতি না হয়, সে জন্যই বাগান কোচের ফর্মুলা মেনে রিজার্ভ বেঞ্চের সব ফুটবলারকে ফিট রাখতে উড়িয়ে আনা হয়েছে এখানে। যাতে বিপদের সময় কাজে লাগে।
সঞ্জয় এ দিন সকালের টিম মিটিংয়ে ‘মিশন মুম্বই’ অভিযানের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন। ‘‘কুপারেজ এমনিতে ছোট, মুম্বই এফসি নিজেদের রক্ষণটা আঁটোসাঁটো করে খেলে। জিততে খুব সমস্যা হয়। সেটা মাথায় রাখছি,’’ বলছিলেন বাগান কোচ। জানিয়ে দিলেন চোট পাওয়া বোয়াকে তিনি পরের মুম্বই এবং ভারত এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচেও খেলানোর ঝুঁকি নেবেন না। ‘‘শেষ চারটে ম্যাচে ওকে খুব দরকার। কুপারেজের কৃত্রিম ঘাসে খেললে চোটটা বেড়ে যেতে পারে। তাই ঝুঁকি নিচ্ছি না।’’
বোয়া না খেলা মানেই সনি নর্ডির উপর চাপ বেড়ে যাওয়া। করিম বেঞ্চারিফার দল তাঁকে আটকানোর যে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছিল তার পরিণতি দেখাচ্ছিলেন হাইতি স্ট্রাইকার। ডান পায়ের অন্তত পাঁচটি জায়গায় স্পাইকের দাগ। রক্তক্ষরণের স্পষ্ট দগদগে চিহ্ন। ‘‘সব টিমই চেষ্টা করেছে আমাকে মেরেধরে আটকানোর। আমি তাতে রক্তাক্ত হচ্ছি। কিন্তু দুঃখ পাচ্ছি না। কারণ আমাকে আটকালেও টিমের জয় আটকানো যাবে না। অন্যরা গোল করে দেবে। দেখুন আমি সাতটা গোল করেছি, কাতসুমি, বলবন্তও ছ’টা করে গোল করেছে। কাল তো জেজেও গোল করল। ক’জনকে আটকাবে। আসলে আমাদের টিমে কেউই অপরিহার্য নয়। আমিও না,’’ অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছিলেন বাগান জনতার হার্টথ্রব। মে-র শেষে হাইতির জাতীয় দলে খেলার জন্য তাঁকে ডাকা হচ্ছে বলে শুনেছেন। কিন্তু ঠিক করে ফেলেছেন বাগান তার আগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে তবেই যাবেন। নিজেই বললেন, ‘‘আইএসএলের তিনটে ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। চেন্নাইয়ান এফসি-র প্রস্তাবটা সবথেকে ভাল। ওদেরও বলেছি, লিগ জেতার পর কথা বলব।’’
সনির এই মনোভাবটাই বাগানের পুরো টিমের মধ্যে সঞ্চারিত। যত আকর্ষণীয় প্রস্তাবই থাক, সবার আগে আই লিগ জয়কেই মোক্ষ করে অগ্রাধিকার দেওয়া! আর এটাই সঞ্জয়ের কাছে বড় সুবিধা। বাগান কোচ ফুটবলারদের এমন ভাবে মোটিভেট করছেন যে, বিশ্ব এক দিকে চলে গেলেও প্রীতম-দেবজিৎরা নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরছেন না। খেতাব এ বার তাঁদের চাই-ই। আর এর ফসল হাতেনাতে পাচ্ছে বাগান। মণীশ ভার্গবের মতো ফুটবলার প্রায় দু’মাস পরে প্রথম টিমে নেমেও টাট্টু ঘোড়ার মতো দৌড়চ্ছেন। বহু দিন পর প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েই জেজে গোল করেছেন। আসলে রিজার্ভ বেঞ্চের সঙ্গে প্রথম একাদশের মধ্যে কোনও পাঁচিল যাতে তৈরি না হয় তার উপর সব সময় নজর রাখছে্ন সঞ্জয়। খাওয়ার টেবিলে রুমমেটকে সঙ্গে না আনলে ধমক খাচ্ছেন বেলো রাজ্জাকের মতো সিনিয়রও।
পুরো টিমকে একাত্ম রাখার মরিয়া চেষ্টা চালানোর পাশে কোনও রকম চাপ যাতে সনিদের উপর না পড়ে সেটাও লক্ষ রাখতে হচ্ছে বাগান কোচকে। আর টিমের উপর চাপ কমাতে পিয়ের বোয়াকে দারুণ বুদ্ধি করে ব্যবহার করছেন তিনি। টিম মিটিং থেকে খাওয়ার টেবল, সব জায়গাতেই ক্যামেরুন স্ট্রাইকার নিয়ম করে সতীর্থদের বলেছেন, ‘‘আমরা কেউই আই লিগ জিতিনি। আমরা সবার আগে রয়েছি। নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলেই লিগ টেবিলে সবার আগে শেষ করব। কোনও চাপ নেই। নিজের খেলাটা খেল।’’
করিম-ওডাফা আমলের তারকা নির্ভর মোহনবাগান সত্যিই যেন বদলে গেছে। বাগান এখন একটা টিম। সব অর্থেই সফল মেরিনার্স।