যুবভারতীতে দাপট ফিরল মোহনবাগানের, অভিষেকে সফল খালিদ

আই লিগে জিতেও রোদ্দুর নেই ডিকাদের বারান্দায়

মোহনবাগানের বাগানে ফুলের সুগন্ধী ছড়াল? একেবারেই নয়। নানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী খালিদের মধ্যে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ল না এ দিন। বরং ইস্টবেঙ্গলে যা করতেন তা-ই করলেন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪১
Share:

দুরন্ত: ফের গোলের মধ্যে ফিরলেন। যুবভারতীতে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস ডিকাকে ঘিরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মোহনবাগান ২ • মিনার্ভা পঞ্জাব ০

Advertisement

গোল করে দিপান্দা ডিকার উৎসবের ধরনটা ছিল বেশ চমকপ্রদ।

Advertisement

সনি নর্দের দুর্দান্ত পাস ধরে দলের দু’নম্বর গোল করার পর দু’টো আঙুল কানে গুঁজে গ্যালারির দিকে দৌড়লেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছিল, সদস্য-সমর্থকদের তিনি বলতে চাইছেন, এ বার তাঁকে নিয়ে সমালোচনা বন্ধ হোক।

গত দু’বারের আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ডিকা। আর এ বার তো তিনি সুপার ফ্লপ। ক্যামেরুন স্ট্রাইকারের ঝুলিতে ১২ ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল। তাঁকে মাঝেমধ্যেই বসে থাকতে হচ্ছিল রিজার্ভ বেঞ্চে। নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা গলিতে আলোর হদিশ পেয়ে তিনি উচ্ছ্বাসে ভাসবেন, সেটাই স্বাভাবিক।

ডিকা নিজে বেঁচে ওঠার একটা আলোর দিশা পেলেন। তাঁর জন্যই মোহনবাগান পেনাল্টি পেল। যা থেকে গোল করলেন ওমর এলহুসেইনি। ওই গোলটার আগেও আরও একটা পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হলেন পালতোলা নৌকার সওয়ারিরা। দু’বারই ডিকাকে নিজেদের বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন মিনার্ভা পঞ্জাবের ল্যানসিন তোরে।

জিতলেও খেতাব জেতার দৌড়ে মোহনবাগানের বারান্দায় এখনও রোদ্দুর নেই। সেখানে শুধুই শীতের সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। যুবভারতীতে সাতটা ম্যাচ খেললেন সনি, শিল্টনরা। জয় মাত্র দু’টিতে। সেই কবে লিগ টেবলের লাস্ট বয় শিলং লাজংকে হারিয়েছিলেন ডিকারা, তার পর এই আবার! আলো আসবে কী ভাবে? ফলে লিগ টেবলে সেই ছয় নম্বরেই থেকে গেল খলিদ জামিলের দল। খেতাব দূরের কথা, সেখান থেকে ওপরের দিকে ওঠাও যে এখন বেশ কঠিন। খালিদের দলের সামনে পরের দুটোই আবার কঠিন হার্ডল। সনিদের খেলতে হবে খেতাবের অন্যতম দাবিদার মণিপুরের নেরোকা এবং পড়শি ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ডার্বি। সম্ভবত সে জন্যই নতুন জার্সিতে অভিষেক ম্যাচে জেতার পরও হাসি নেই খালিদের মুখে। বরং চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট।

গতবারের চ্যাম্পিয়ন মিনার্ভা পঞ্জাবের অবস্থা এ বার নির্বিষ সাপের মতো। প্রতিপক্ষের বক্সে ছোবল মারার খেলোয়াড়ই নেই পল মুনস্টারের দলে। ফলে হলটা কী, মোহনবাগান গোলকিপার শিল্টন পালকে পুরো ম্যাচে ধরতে হল গোটা চারেক বল।

কিন্তু তাতেও কি মোহনবাগানের বাগানে ফুলের সুগন্ধী ছড়াল? একেবারেই নয়। নানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী খালিদের মধ্যে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ল না এ দিন। বরং ইস্টবেঙ্গলে যা করতেন তা-ই করলেন। খেলা শুরু হওয়ার মিনিট পাঁচেক পর মাঠে নামলেন। বদলি ফুটবলারদের নামানোর আগে নিজের সামনে একবার করে তাদের ছোট্ট একটা দৌড় করানোর পুরানো অভ্যাসও রয়ে গিয়েছে তাঁর।

কিন্তু প্রথম একাদশ নামানোর আগে দেখা গেল অন্য একটা ‘তুকতাক’! এত দিনের লেফট ব্যাক অভিষেক আম্বেকর নামলেন রাইট ব্যাকে, সনি নর্দে বাম উইং ছেড়ে ডানে শুরু করলেন। দশ মিনিট পর আবার যে যাঁর জায়গায় ফিরলেন। এ রকম অদ্ভুত শুরু কেন? খালিদ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘আমি কিছু করিনি। মাত্র একদিন সবাইকে অনুশীলনে পেয়েছি। ফুটবলাররা নিজেরাই ঠিক করেছে কে কোথায় নামবে?’’ ড্রেসিংরুম থেকে অবশ্য একেবারে অন্য খবর চুঁইয়ে বেরোচ্ছে। খালিদই এভাবে শুরু করতে বলেছিলেন। সময় বেঁধে দিয়ে নিজেদের জায়গায় ফেরার নির্দেশও ছিল তাঁর।

আগের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর জমানায় যাঁরা কার্যত ছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে, তাদের এ দিন দলে ফিরিয়েছিলেন খালিদ। ডিকার সঙ্গেই দলরাজ সিংহ, গুরজিন্দর কুমার, ড্যারেন ক্যালডেইরা নামলেন শুরুতে। কিন্তু তাতেও খেলাটা আটকে থাকল মাঝমাঠে। অসংখ্য স্কোয়ার পাসের চোরা বালিতে আটকে গেল ফুটবলের সৌন্দর্য। মাঠ জুড়ে খেললেন মহম্মদ সালাহর দেশের মিডিয়ো ওমর। তিনিই ম্যাচের সেরা। পেনাল্টিটা ওমর মারলেন মিনার্ভা গোলকিপার ভাস্কর রায় যে দিকে ঝাঁপালেন, তাঁর উল্টো দিকে। কলকাতা মাঠের বাতিল তোরে, দীপক দেবরানি, মইনুদ্দিন, অমরদীপ সিংহরা ছিলেন পঞ্জাবের দলে। কেউই জ্বলে উঠতে পারলেন না।

ডিকার আলোয় ফেরার দিনে তাদের ব্যর্থতা তাই আরও প্রকট হল।

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অভিষেক আম্বেকর, কিংসলে ওবুমেনমে, দলরাজ সিংহ, গুরবিন্দর সিংহ, সনি নর্দে, ওমর এলহুসেইনি, ডারেন ক্যালডেইরা (মেহতাব হোসেন), ইউতা কিনওয়াকি, আজাহারউদ্দিন মল্লিক (শেখ ফৈয়াজ), দিপান্দা ডিকা (হেনরি কিসেক্কা)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন