প্রস্তুতি: কালিকট স্টেডিয়ামে অনুশীলনে দিপান্দা ডিকা, ইউতা কিনওয়াকিদের অনুশীলন চলছে। ছবি: এআইএফএফ
লিগের সাপ-লুডোর খেলায় হঠাৎ-ই খেতাবের সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন দিপান্দা ডিকারা। পরিস্থিতি যা, তাতে বৃহস্পতিবার হার-জিতের নানা অঙ্কে শিকে ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে শঙ্করলাল চক্রবর্তী-দের কপালে।
তবুও ‘খেতাব’ শব্দটা ড্রেসিংরুমে ঢুকতে দিতে নারাজ মোহনবাগান। মনে যাই থাক, চাপ মুক্ত হতে কালিকটের টিম হোটেলে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই স্লোগান, ‘আগে ম্যাচ জেতো, বাকিটা ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দাও।’
এ বারের আই লিগের ‘জায়ান্ট কিলার’ গোকুলমের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন মোহনবাগান কোচের গলায় শোনা গেল সেই স্লোগানেরই রেশ। ‘‘খেতাবের সঙ্গে জড়িত যে তিনটি ম্যাচ হচ্ছে তার মধ্যে সবথেকে কঠিন ম্যাচ আমাদের সঙ্গে গোকুলমের। গোকুলম এ বারের লিগের অন্যতম শক্তিশালী দল। ওরা যখন কলকাতায় আমাদের হারিয়েছিল, তখনই বলেছিলাম ওরা যে কোনও দলকে যে কোনও সময় হারিয়ে দিতে পারে। পরে সেটা প্রমানিত হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল, মিনার্ভাকে হারিয়েছে ওরা।’’ বলার পর শঙ্করলালের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আমরা এক একটা ম্যাচ ধরে এগিয়েছি। শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে ছেলেদের বলেছি, খেতাবের কথা ভেবে মাঠে না নামতে। ম্যাচটা জিততে হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাকিটা ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দাও।’’
বুধবার কালিকটের মূল স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেন আক্রম মোগরাভি, শিল্টন পাল-রা। দক্ষিণের এই রাজ্যে এখন প্রচণ্ড গরম। সেটা অবশ্য সমস্যা নয়, বলছেন পালতোলা নৌকার সওয়ারিরা। মোহনবাগান টিমে সম্ভবত দুটো পরিবর্তন হচ্ছে। শুরু থেকেই নামবেন গুরজিন্দার কুমার এবং রাণা ঘরামি-রা। পরপর তিনটে ম্যাচ জিতে এমনিতে চাঙ্গা ইউতা কিনওয়াকিরা। দুই স্ট্রাইকারই গোলের মধ্যে আছেন। ফলে শঙ্করলালের চিন্তা কম। তাঁর চিন্তা বরং নিজের রক্ষণ সংগঠন নিয়ে। কারণ, গোকুলমের ত্রিফলা আক্রমণ রুখতে হলে আনসুমানা ক্রোমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ত্রিফলা মানে তিন বিদেশি। উগান্ডার হেনরি কিসেক্কা, মুদে মুসার সঙ্গে বাহরিনের মেহমুদ আল আজমি। বিনো জর্জের টিমকে এই তিন জনই বদলে দিয়েছেন। গোকুলম এখন রয়েছে লিগ টেবলের সপ্তম স্থানে। সুপার কাপে সরাসরি খেলতে হলে প্রথম ছয়ে ঢুকতে হবে তাদের। ‘‘আমাদের তিন পয়েন্ট পেতেই হবে। কারণ আমরা ছয়ে থাকতে চাই। মোহনবাগান শক্তিশালী দল। কিন্তু আমরাও যে কোনও দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখি’’, বলেন জর্জ। যুবভারতী ও পঞ্চকুল্লার খেলা সরাসরি দেখানো হলেও কালিকটের ম্যাচ দেখানো হবে না। তবে ইন্টারনেটে তা দেখা যাবে। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে ফুটবলপ্রেমীদের কোনও একটা ম্যাচে দেখে তৃপ্ত হওয়ার উপায় নেই। তিনটি শহরের খবর-ই একসঙ্গে রাখতে হবে। নজর রাখতে হবে খেতাবের লড়াইয়ে থাকা মিনার্ভা এফসি, নেরোকা এফসি, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ফলের দিকে।
খেতাব মিনার্ভার দিকে বেশি ঝুঁকে থাকলেও নেরোকা রয়েছে লড়াইয়ে। সঙ্গে কলকাতার দুই প্রধানও। বাইশ বছর আগে প্রথম জাতীয় লিগ জেতা কোচ সুখবিন্দর সিংহ অবশ্য মনে করেন, ট্রফি জেতার ব্যাপারে মিনার্ভাই ফেভারিট। ‘‘আমি আই লিগে সব চেয়ে ধারাবাহিক মনে হয়েছে মিনার্ভাকে। পঞ্জাবের একটা টিম আবার জাতীয় সেরা হবে, এটাই আমাকে উত্তেজিত করছে। আমি যে বার জেসিটি-কে চ্যাম্পিয়ন করেছিলাম, সে বার জেতার পরও অনেকক্ষণ মাঠে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছিল, খেতাবের লড়াইয়ে থাকা দলের ম্যাচের ফল জানতে। কারণ তখন মোবাইলের যুগ ছিল না,’’ বললেন সুখবিন্দর। প্রাক্তন ভারতীয় কোচের ভবিষ্যদ্বানী মিলবে কী না তা জানা যাবে আজ সন্ধ্যায়।
তবে এ দিন ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আই লিগ এত উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে যে, গতবারের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি দর্শক মাঠে এসেছেন। গড়ে ১০ হাজারেরও বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন প্রতি ম্যাচে। নেরোকার মাঠে গড়ে ২৪ হাজার দর্শক এসেছেন। আর কলকাতার দুই প্রধানের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের প্রতি ম্যাচে মাঠে এসেছেন গড়ে ১৬ হাজার সমর্থক। আই লিগের জোড়া ডার্বিতে জিতলেও সবুজ-মেরুন সমর্থকরা মাঠে এসেছেন কম। ম্যাচ প্রতি ১৫ হাজার। দুই ডার্বি মিলে এক লাখের বেশি দর্শক হয়েছে যুবভারতীতে। বৃহস্পতিবার লিগের শেষ দৃশ্যে গ্যালারি, টিভি, ইন্টারনেট মিলিয়ে সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।