ফুটবলে ‘বল প্লে’ বলে একটা কথা আছে। মাটিতে বল রেখে খেলো। সেটা নিজের জিম্মায় রাখো। তারপর সঠিক পাসটা করো।
আমাদের সময় দেখতাম আমেদ খান বা তুলসীদাস বলরাম সেটাই করত। ছায়া হতে পারে, কিন্তু রবিবার রাতে কটকে দেখলাম, সেটাই করে দেখাল সনি নর্দে আর ইউসা কাতসুমি। ঝোড়ো হাওয়া থামিয়ে যেমন পাল্টা বৃষ্টি নামে, ফেড কাপের এই সেমিফাইনাল সেই আবহেরই প্রতিচ্ছবি যেন।
কী আসাধারণ শুরু করল ইস্টবেঙ্গল! মাঝমাঠের দখল মুঠোয়। উইলিস প্লাজা-মহম্মদ রফিক-ওয়েডসন আনসেলেমদের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল আজ দিনটা ওদেরই। বল পজেশন ৬৫-৪৫। সহজতম সুযোগগুলো প্লাজা-রফিক নষ্ট করছিল। দেখে আমার ডার্বি জীবনের কথা মনে পড়ছিল। গোল মিস করলে হতাশা কী ভাবে গ্রাস করে জানি। কিন্তু সব ওলটপালট করে দিল তো সনি! এবং পরে কাতসুমি। লিখতেই পারি, খেলার অভিমুখ বদলে দিল ওরাই। দু’জনের দু’টো অসাধারণ পাস ইস্টবেঙ্গলকে শেষ করে দিল।
মোহনবাগানকে ফাইনালে তোলার জন্য সনিকে আমি জয়ের ভগীরথ বলব। কারণ ও যে মাপা সেন্টার রাখল ড্যারেল ডাফির মাথায়, সেটা করা কঠিন। সনিকে আমি কখনও হোসে ব্যারেটোর সমমানের ফুটবলার মনে করি না। তবে গতির কথা উঠলে হাইতি মিডিওকে আমি ব্রাজিলিয়ানের চেয়ে বেশি নম্বর দেব। ডাফি একেবারে ইংলিশ ঘরানার স্ট্রাইকার। গোলটা চেনে। বলটা কোণাকুনি গোলে রাখল। বুঝলাম না কেন অর্ণব মণ্ডল বা গুরবিন্দর সিংহ ওকে বক্সের মধ্যে নজরে রাখল না! চৌত্রিশ মিনিটের ওই গোলটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল ম্যাচের। ইস্টবেঙ্গলের হাত থেকে ম্যাচটা বেরিয়েও গেল। শুরুতে সঞ্জয় সেনের টিমকে যে ভাবে ভয়ার্ত হয়ে কুকড়ে থাকতে দেখেছিলাম, সেটা বদলে গেল সনি-ডাফির সৌজন্যে। মাঝমাঠের ব্যাটনটা চলে গেল মেহতাব হোসেনদের থেকে সনি-শৌভিকদের হাতে। ফলে যা হয়। ফুটবলের সেই পরিচিত স্লোগানটা লিখতেই হচ্ছে, ‘মাঝমাঠ যার ম্যাচ তার-ই’। সেটাই হল। খেলা শেষ হওয়ার সাত মিনিট আগে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি জায়গা থেকে কাতসুমির পাসটাও আমাকে মুগ্ধ করেছে। ওই রকম কোণ থেকে ছয় গজ বক্সের মাথায় বল রাখা যথেষ্ট কঠিন। বলবন্ত সিংহ গোলটা না করলে অবাকই হতাম।
আরও পড়ুন: ডার্বি জিতে ফেডারেশন ফাইনালে সবুজ-মেরুন
বহুদিন পর দেখা গেল ডার্বি বঙ্গসন্তানের দখলে। দুই টিমের প্রথম একাদশের অর্ধেকই বঙ্গসন্তান। দেবজিৎ আর শুভাশিস—দুই গোলকিপারের দু’টো ভাল সেভ বা মেহতাব-প্রীতমদের বেশ ভাল লাগল। দুই টিমের বেঞ্চেও ছিল বাঙালি কোচ। এই ম্যাচটা তো আমাদেরই ম্যাচ। এর আবেগ বাঙালি ছাড়া বুঝবে কে? বিশ্বের যেখানে যে থাকুক, সবাই এই ম্যাচের খোঁজ রাখে। সকাল থেকে যে কত জন আমাকে জিজ্ঞাস করল, ম্যাচটা কী হবে বলুন তো? সেই আবেগকে সম্মান জানাচ্ছে না ফেডারেশন। কষ্ট হচ্ছে। আইএসএল থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে দু’টো টিমকে। এটা অন্যায় হচ্ছে। কলকাতার দুই প্রধান ছাড়া এ দেশের ফুটবল বাঁচতে পারে না। বাঁচবে না। আবেগের বিস্ফোরণ কিন্তু টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
মোহনবাগানকে তিন বছর কোচিং করিয়ে সঞ্জয় যেভাবে সাফল্য এনে দিচ্ছে, ওকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। আই লিগে রানার্স হওয়ার পর ফেড কাপেও ডার্বি জিতে ফাইনালে। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে এ বার খেলবে সনিরা। আমার বাজি কিন্তু ওই ম্যাচে মোহনবাগানই।