কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

ফের হ্যাটট্রিক দুরন্ত ডিকার, গোল উৎসব মোহনবাগানে

ক্যামেরুন স্ট্রাইকার কলকাতা লিগেই আগুন হয়ে উঠেছেন। জোড়া হ্যাটট্রিক। নয় ম্যাচ খেলে দশ গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে তাঁর আশেপাশে কেউ নেই।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪১
Share:

অপ্রতিরোধ্য: এই ভাবেও আটকে রাখা যাচ্ছে না দিপান্দা ডিকাকে। মোহনবাগানের হয়ে কলকাতা লিগে আবার হ্যাটট্রিক করলেন ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মোহনবাগান ৫ • এফ সি আই ০

Advertisement

গোল করলে কোনও উৎসব করা যাবে না, নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে মোহনবাগানে।

তবুও দিপান্দা ডিকা উচ্ছ্বাসের আতিশয্যে মেতে হামাগুড়ি দিয়ে ফেললেন। নিজের সন্তানের কথা মনে করে। দু’হাত আর হাঁটুতে ভর দিয়ে সামান্য এগোনোর পর অবশ্য তাঁর সম্বিত ফিরল। থমকেও গেলেন।

Advertisement

তাঁর গোলের পর আকাশে ফানুস উড়ল। হ্যাটট্রিকের পর গ্যালারিতে সবুজ-মেরুন রং মশাল এবং স্মোক বম্বের ধোঁয়ায় ঢাকল। ক্যামেরুন স্ট্রাইকার কলকাতা লিগেই আগুন হয়ে উঠেছেন। জোড়া হ্যাটট্রিক। নয় ম্যাচ খেলে দশ গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে তাঁর আশেপাশে কেউ নেই। সাম্প্রতিক কালে এ রকম কোনও ফুটবলারের সৌজন্যে গোল-উৎসব দেখেনি ময়দান। ডিকা-এক্সপ্রেস শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে? ম্যাচের পর পেটানো চেহারা থেকে প্রশ্ন শুনে বেরোল মৃদু হাসি। ‘‘গোল তো করতেই হবে। কিন্তু খেতাব না পেলে এসবের কোনও দাম নেই।’’

ডিকা আর খেতাবের মধ্যে গত তিন বছর ধরেই যেন আড়ি। তিনি দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন, কিন্তু তাঁর দল চ্যাম্পিয়ন হয় না। শিলং লাজং, মহমেডান, মোহনবাগান—এই পরম্পরা চলেছেই। এ বার তাঁর কপালে কী লেখা আছে তা সময় বলবে। তবে ডিকা যে এই ভাগ্যদোষ কাটাতে মরিয়া তা বোঝা যায় তাঁর কথা শুনলেই। ম্যাচের সেরা হয়ে ডিকা বলে দিলেন, ‘‘গোল সংখ্যা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে রাখতে হবে। সেই চেষ্টা আমরা সবাই মিলে করছি। ট্রফিটা জেতা দরকার।’’

কিন্তু হঠাৎ গোল করে উৎসব করার উপর কেন নিষেধাজ্ঞা? মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘উৎসব করতে গেলে সময় নষ্ট হয়। এখন আমাদের প্রতিটি মিনিট, সেকেন্ড গোলের জন্য ঝাঁপাতে হবে। সে জন্যই সবাই মিলে উৎসব বর্জন করেছি। খেতাব জিতলে সব হবে।’’ ডিকাদের কোচের ভাবনার নতুনত্ব শুনে চমকে যেতে হয়। তা সত্ত্বেও বিদেশিহীন অতি দুর্বল এফ সি আইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটা পেতে হেনরি কিসেক্কাদের অপেক্ষা করতে হল উনপঞ্চাশ মিনিট। মানে বিরতির পরের অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিট পর্যন্ত। বিরতির পর আলো জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বদলায় ছবিটা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পর খাদ্য দফতরেও হানা দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল সবুজ মেরুন বাহিনী। লিগ শীর্ষে থাকা মোহনবাগানের এখনও দুটো ম্যাচ বাকি। কাস্টমস ও মহমেডানের সঙ্গে। লিগ টেবলের পরিস্থিতি যা তাতে খেতাব জিততে হলে শুধু জেতা নয়, গোল সংখ্যাও বাড়িয়ে রাখতে হবে ডিকাদের।

এ দিন সেই লক্ষ্যেই বিকাশ পাঁজির দলকে বেছে নিয়েছিলেন পালতোলা নৌকার সওয়ারিরা। পাঁচ-পাঁচটি গোল হল। হতে পারত আরও। তা সত্ত্বেও ম্যাচের পর আশঙ্কিত সবাই। ‘‘ইস্টবেঙ্গল শেষ তিনটে ম্যাচে কত গোল করে ফেলবে তা তো জানি না, তাই গোল বাড়িয়ে রাখাটা জরুরি। ওদের শেষ ম্যাচ আবার এফ সি আইয়ের সঙ্গে,’’ বলে দেন ডিকাদের কোচ।

বড় ব্যবধানে জিতলেও বিরতির আগে পর্যন্ত হেনরি, আজহারউদ্দিন মল্লিকরা ছিলেন কিছুটা ছন্নছাড়া। অবনমনে পড়ে যাওয়া এফ সি আই আট-নয় জন মিলে গোলের মুখে লক গেট ফেলবে জানাই ছিল। প্রতিপক্ষ এই রননীতি নিলে গোলের মুখ খুলতে উইং প্লে হল সেরা ওষুধ। সেটাই হচ্ছিল না। বিরতির পর তাই দুই উইংয়ে বদল আনলেন মোহনবাগান কোচ। একদিকে জঙ্গলমহলের পিন্টু মাহাতো, অন্যদিকে সোদপুরের তীর্থঙ্কর সরকারকে নামিয়ে দিলেন তিনি। আর তাতেই খাদ্য দফতরের দরজা খুলে গেল।

পিন্টুর পাস থেকে ডিকা তিন নম্বর গোলটা করার পর তীর্থঙ্কর বাকি কাজটা করলেন। প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই মিডিও সম্পদ হয়ে উঠেছেন শঙ্করলালের দলে। তাঁর বাঁ পা-টা ছুরির মতো। ফ্রি কিক আর কর্নারে ময়দানের সেরা। তীর্থঙ্কর নিজে বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকে গোল করলেন, আবার কর্নার থেকে গোলও করালেন লালছাওয়ান কিমাকে দিয়ে। তবে ওই দুটি গোল যখন হল তখন এফ সি আই দশ জন হয়ে গিয়েছে। ম্যাচের বাহাত্তর মিনিটে ডিকার চোখে কনুই দিয়ে মেরে লালকার্ড দেখেন এফ সি আইয়ের লক্ষীকান্ত রায়। যা অমার্জনীয় অপরাধ।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই, লালছাওয়ান কিমা, কিংগসলে ওবুমেনেমে, অভিষেক আম্বেকর, ব্রিটো পি এম, সৌরভ দাশ, শিন্টন ডি’সিলভা (অবিনাশ রুইদাশ), আজহারউদ্দিন মল্লিক (পিন্টু মাহাতো), হেনরি কিসেক্কা, দিপান্দা ডিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন