হতাশ: গোল করেও দলকে জেতাতে ব্যর্থ সনি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সনি নর্দের অসাধারণ গোলও শেষ পর্যন্ত কাজে লাগল না।
স্প্যানিশ আমার্ডা মাথা নোয়াতে নোয়াতেও ভেসে উঠল শনিবারের যুবভারতীতে। এবং সেটা মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দু’টি ভুল সিদ্ধান্তে।
পেদ্রো মানজি, সান্দ্রো রদ্রিগেজ, নেস্তর গার্দিয়ো— চেন্নাইয়ের এই তিন স্প্যানিশ ফুটবলারকে প্রতিযোগিতার সেরা ত্রয়ী বলা হচ্ছে এ বার। তাঁদের দাপটেই অশ্বমেধের ঘোড়া হয়ে উঠেছে চেন্নাই। সেই দলকেই এ দিন বাড়তি তাগিদ এবং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন সনি নর্দে, সৌরভ দাসেরা। পাঁচ মিডিয়ো এবং এক স্ট্রাইকারে খেলতে নেমেও বিরতির পাঁচ মিনিট পরে পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। হেনরি কিসেক্কার পাস থেকে বাঁক খাওয়া শটে সনির অসাধারণ গোলটার পর মনে হচ্ছিল অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতেই পারে।
দেখা যাচ্ছে বিরতির আগে পর্যন্ত ইউতা কিনওয়াকিরা পেয়েছিলেন সাতটি কর্নার। সেখানে চেন্নাই মাত্র তিনটি। পাসিং, গোলমুখী শট বা বল দখলের লড়াইতেও এগিয়ে ছিল সবুজ-মেরুন। এ রকম যখন অবস্থা, তখনই মোহনবাগান কোচের ভুল পা ফেলা। ১-০ এগিয়ে থাকা তাঁর দলকে শঙ্করলাল চ়ূড়ান্ত রক্ষণাত্মক তো করে দিলেনই, পাশাপাশি বসিয়ে দিলেন মাঝমাঠের ব্লকার ও পাসার ওমর হুসেইনিকে। মিশরের ওমরের জায়গায় নামলেন মুম্বইয়ের শিল্টন ডি’ সিলভা।
চেন্নাইয়ের মাঝমাঠের সেরা অস্ত্র নেস্তর এবং সান্দ্রো রদ্রিগেজ এই সুযোগে পাখা মেললেন। শুরু করলেন তিকিতাকা ফুটবলের ঝাপটা। মোহনবাগানের ইউতা কিনওয়াকি, ওমর আর সৌরভ দাস মিলে তৈরি করেছিলেন জমাট মাঝমাঠ। সেখানে ফাটল ধরল বিদেশি ওমর চলে যাওয়ার পরই। সেই সুযোগটা কাজে লাগালেন ওঁরা। শিল্টন মাঠে নেমে বুঝতেই পারলেন না কী করতে হবে। আদতে ডিফেন্সিভ ব্লকার শিল্টন নামার পরেই ম্যাচটা ১-১ হয়ে গেল। নেস্তরের গোলের পরে শুরু হল চেন্নাই-ঝড়ও। তার গতিবেগ এতটাই ছিল যে, শেষ দশ মিনিটে আরও গোটা দুয়েক গোল খেতে পারতেন সনিরা। চেন্নাইয়ের সান্দ্রোর শট মোহনবাগান পোস্টে লেগে ফিরল। এডউইনের শট রুখলেন সবুজ-মেরুন গোলকিপার শঙ্কর রায়। শঙ্করলালের দলের দশ জন তখন নিজেদের বক্সে দাঁড়িয়ে কোনওক্রমে বাঁচালেন দলকে। না হলে হয়তো এক পয়েন্টও জুটত না শতবর্ষ পেরোনো ক্লাবের।
যুবভারতীর গ্যালারিতে এ দিন হাজির কুড়ি হাজারেরও বেশি দর্শক। তাদের একাংশকে দেখা গেল ম্যাচের পর কোচ শঙ্করলালের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে। পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে খোঁড়াতে থাকা পিন্টু মাহাতোর সঙ্গে হেঁটে আসার পথে শঙ্করলালকে মরসুমে প্রথম বার শুনতে হল, নানা বিদ্রুপাত্মক শব্দ। মোহনবাগান কোচ অবশ্য ভাঙলেন, তবু মচকালেন না। প্রথমে বললেন, ‘‘ওমর মাঝামাঠে ফাঁক ভরাট করতে পারছিল না বলেই ওকে তুলে নিতে হয়েছে।’’ পরে যোগ করলেন, ‘‘শিল্টনকে যে জন্য নামিয়েছিলাম সেটা ও করতে পারেনি।’’
মোহনবাগানের দল নামানো নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ম্যাচের পর। যেমন, এক) সুস্থ দিপান্দা ডিকাকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখে কেন চোট পাওয়া হেনরি কিসেক্কাকে শুরুতে নামানো হল? দুই) পিন্টু চোট পাওয়ার পরে তাঁর জায়গায় কোনও মিডিয়ো না নামিয়ে কেন নামানো হল একজন ডিফেন্ডারকে?
ম্যাচের পর এ সব প্রশ্নের উত্তর নিজের মতো করে দিয়েছেন শঙ্করলাল। পাশাপাশি মন্তব্য করেছেন, ‘‘দাদাগিরি করে অলআউট খেলতে গিয়ে ডুবতে চাইনি।’’ কিন্তু এ দিন পুরোপুরি না ডুবলেও খেতাব যুদ্ধ থেকে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে মোহনবাগান। ছয় ম্যাচ খেলে ৯ পয়েন্ট হল সনি নর্দেদের। সেখানে চেন্নাইয়ের পয়েন্ট সাত ম্যাচে ১৭। চেন্নাই কিন্তু খেতাবের দিকে এক্সপ্রেস ট্রেনের মতোই ছুটছে!
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই, কিংগসলে ওবুমেনেমে, কিম কিমা, অভিষেক আম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (আমে রানওয়াডে), ওমর হুসেইনি (শিল্টন ডি’সিলভা), ইউতা কিনওয়াকি, সৌরভ দাশ, সনি নর্দে, হেনরি কিসেক্কা (দিপান্দা ডিকা)।