কাউন্ট ডাউন শুরু। দরজায় কড়া নাড়ছে আইএসএল ২০১৫। কলকাতা লিগ, এমনকী আই লিগও সাময়িক ভুলে অগুনতি মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হয়তো এ বার পরিবার নিয়েও ভিড় জমাবেন পস্তিগা, জিকো, রবের্তো কার্লোস, লুসিও, আদ্রিয়ান মুতুদের এ দেশের মাঠে দেখতে।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ অর্থাৎ আইএসএল ফুটবলের মান, জাঁকজমক, জনপ্রিয়তায় আই লিগকে আবার এক ধাক্কায় অন্ধকূপে ঠেলে দেবে কি না সেই প্রশ্নে এই লেখায় ঢুকছি না। কিন্তু আমার মতো যারা এ দেশে একটুআধটু কোচিং করায়, তাদের কাছে আইএসএলে জিকো, রবের্তো কার্লোস, হাবাস, ডেভিড প্লাট, পিটার রিড, পিটার টেলর, সিজার ফারিয়াসদের মগজাস্ত্র প্রয়োগ একটা বাড়তি আকর্ষণ তো বটেই!
এ বারের আইএসএলে যে পাঁচ জন কোচের স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্স দেখার জন্য আমি মুখিয়ে রয়েছি তাঁরা হলেন, আটলেটিকো কলকাতার কোচ হাবাস, গোয়ার জিকো, দিল্লির কোচ-কাম-ফুটবলার রবের্তো কার্লোস, পুণের ডেভিড প্লাট এবং মুম্বইয়ের নিকোলাস আনেলকা।
প্রথমেই আসছি আটলেটিকো দে কলকাতা কোচ হাবাস প্রসঙ্গে। আমার শহরের এই স্প্যানিশ কোচের সঙ্গে আমার যদিও আজ পর্যন্ত কোনও কথা হয়নি, কিন্তু কাউন্টার অ্যাটাক স্ট্র্যাটেজিতে উনি যে বেশ ভাল রকম দক্ষ তা গত বছরে কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের কিছু ম্যাচ দেখেই বুঝতে পেরেছি। নিজের টিমের সামর্থ বুঝে বুদ্ধিদীপ্ত প্রতি-আক্রমণে কলকাতাকে ঠিক এগিয়ে নিয়ে যান। অনেকেই বলছেন এ বার কলকাতা টিমটা নাকি গত মরসুমের মতো মজবুত নয়। এটা ঠিক যে, সেই টিমের গার্সিয়া, ফিকরু, বেটে, লোবো-সহ বেশ কয়েক জন ফুটবলার বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেন্ট্রাল ডিফেন্স এবং দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার নাতো এবং বোরহা থাকায় খুব একটা অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। আর ডিফেন্সে নবি এবং মাঝমাঠে জুয়েল রাজা থাকায় আমার মতে হাবাসের হাতে এক্স ফ্যাক্টর-ও রয়েছে। স্প্যানিশ কোচের দর্শনে জমাট মাঝমাঠ একটা বড় সম্পদ। আর অ্যাটাকে গার্সিয়ার চেয়ে পস্তিগার বয়স কম বলে পুরো নব্বই মিনিট আক্রমণের ঝাঁঝটাও মনে হয় বেশি থাকবে। সঙ্গে থাকছে হিউমের মতো পেনাল্টি-বক্স স্ট্রাইকার!
এখন দেখার হাবাস কোন ছকে দলকে খেলান এ বার। গত বার ৪-২-৩-১-এ বেশি ম্যাচ খেলিয়েছিলেন। এ বার নতুন কী ছক বেরোবে হাবাসের থেকে সেটা দেখতে মুখিয়ে রয়েছি। তবে বেটে এবং শুভাশিস দু’জনকেই ছেড়ে দেওয়ায় গোলকিপারের জায়গাটা এই টিমে একটা চ্যালেঞ্জের বলেই মনে হচ্ছে।
জিকো আবার হাবাসের মতো কাউন্টার অ্যাটাক নয় বরং সরাসরি আক্রমণেই বিশ্বাসী। আর এ বার গোয়ার টিমটা আরও মজবুত। গতবার ওরা শুরুর দিকে হোঁচট খেতে খেতে এগিয়েছিল। কিন্তু সেকেন্ড ল্যাপে জিকোর মস্তিষ্ক ওদের শেষ চারে নিয়ে যায়। এ বার ডিফেন্সে ফরাসি গ্রেগরি আর্নোলিনের সঙ্গে লুসিও। গোটা দলে সাত জন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। ফলে টিমের একাত্মতা বাড়াতে জিকোর কাজটা সহজ। টিমেও খুব একটা পরিবর্তনও হয়নি ওদের। মাঝমাঠে আটলেটিকো কলকাতা ফেরত হোফ্রে। দুবাইতে প্রস্তুতি শিবিরে গিয়েও টিমটা বেশ ভাল ফুটবল খেলেছে ওখানকার স্থানীয় টিমগুলোর সঙ্গে। এতে শুরুর দিকে আত্মবিশ্বাসটাও ভাল থাকবে। আর জিকো যে টিমের সঙ্গে রয়েছেন তার একটা বাড়তি ওজন তো থাকবেই। গত বার বেশ কিছু ম্যাচে জিকোর টিম ৪-৩-৩ ছকে কামাল করেছিল। তবে সেমিফাইনালে গিয়ে আটকে যায় নিজেদের দোষে। এ বার গোয়ার মাঠেই ফাইনাল। তার জন্য গোটা টিমের ভেতর যে ফাইনাল খেলার একটা বাড়তি উদ্যোগ থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রবের্তো কার্লোস আবার দিল্লির হয়ে শুধু কোচিংই করাবেন না। খেলবেনও। সঙ্গে ফরাসি মিডিও মালৌদা। কার্লোসের সেই বাতাসে গোত্তা খাওয়ানো সেই বিখ্যাত ফ্রিকিক এবং ওভারল্যাপ দেখতে এখন থেকেই প্রহর গুনছি। আশা করব গত বার দেল পিয়োরো যে রকম হতাশ করেছিলেন এ বার দিল্লি তার থেকে অনেক ভাল খেলবে। রবিন সিংহ, শেহনাজ, প্রবীর দাসরাও এ বার ওদের পজিটিভ ফ্যাক্টর।
ডেভিড প্লাটের আবার ফুটবল জীবন থেকেই ব্রিটিশ লং বল থিওরির সঙ্গে সখ্যতা। তবে ওয়েন রুনি-পরবর্তী সময় থেকে সব ব্রিটিশ কোচই সেই থিওরি থেকে সরে এসেছে এখন। হৃতিক রোশনের দলের কোচ প্লাট এ বার টিমটাও পেয়েছেন বেশ ভাল। টিমের বিদেশিদের মধ্যে ইপিএল খেলা ফুটবলারের সংখ্যা বেশি। নিকি শোরে, আদ্রিয়ান মুতু, স্টিভ সিমোনসেনদের সঙ্গে স্বদেশি প্রীতম কোটাল, জ্যাকিচন্দ, ইউজেনসিন লিংডো। সব মিলিয়ে জমাট দল। প্লাট নিজেও সাম্পাদোরিয়া, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দল সামলেছেন। কাজেই ওঁর থেকে বাড়তি কিছু কৌশল শেখার আগ্রহ রয়েই যাচ্ছে আমার।
সব শেষে আনেলকা। গত বারও খেলে গিয়েছেন আইএসএলে। এ বার ওঁর সঙ্গে সুনীল ছেত্রী আর গত আই লিগে নজর কাড়া আমার মোহনবাগান টিমের সনি নর্ডি। আনেলকা-ছেত্রী-নর্ডি ত্রিভুজ এ বারের আইএসএলের প্রতিটা টিমের ডিফেন্ডারদের কাছে মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে উঠবে বলেই আশা করছি। মুম্বইয়ের গোলেও সুব্রত পাল আর দেবজিৎ মজুমদার। তবে আসলে আনেলকার টিমের ইউএসপি যে আক্রমণাত্মক ফুটবল তা এখন থেকেই বুঝতে পারছি। তবে সেটা কোন চেহারায় মাঠে ফুটিয়ে তুলবেন আনেলকা সেটাই তাঁর টিমের সম্ভবত সেরা আকর্ষণ হতে চলেছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আনেলকার মুম্বইকে শেষ চারে দেখতেই পারি।