ইস্টবেঙ্গলের লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবরটা পেলাম যখন, আমি রাস্তায়। সুব্রত কাপ উদ্বোধনে নয়াদিল্লি গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ফিরছি। হঠাৎ শুনলাম, ইস্টবেঙ্গল আবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে। শোনা মাত্র মোহনবাগান কর্তাদের মুখ মনে পড়ে গেল।
মোহনবাগান কি না ইস্টবেঙ্গলকে লিগটা তুলে দিল!
কেন যে ডার্বিটা খেলল না মোহনবাগান, আজও তার উত্তর পাই না। অন্তত নিজের বুদ্ধিতে তো নয়। একই সঙ্গে এটাও মনে হয় যে, ইস্টবেঙ্গলও তো পারত একদিন পর ডার্বিটা খেলতে। কী এমন হত, একটা দিন পিছিয়ে গেলে? এই যে ডার্বিতে মোহনবাগানকে না খেলে ওরা যে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হল, উৎসবটা ওরাও ঠিকঠাক করতে পারবে তো?
মনে তো হয় না।
ফুটবলে এ ধরনের অ্যাডজাস্টমেন্ট নতুন কিছু নয়। ’৭৯ শিল্ড ফাইনালে আমরাও করেছিলাম। সে বার শিল্ড ফাইনাল আমাদের মাঠে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারিখ নিয়ে গণ্ডগোল হওয়ায় ম্যাচ পিছিয়ে যায়। ঘটনা হল, তখন কিন্তু আমরাই বলেছিলাম— যে কোনও তারিখে খেলব। বললে র্যাম্পার্টেও খেলব। এমনকী অষ্টমীর দিনও খেলতে রাজি। ইস্টবেঙ্গল যেমন টিম ওরা চ্যালেঞ্জ নিতে সবসময় প্রস্তুত থাকে। এক দিন খেলা পিছোলে খুব বড় সমস্যা হত কি? ওরা তো বলতেই পারত এক দিন কেন, একশো দিন পিছোলেও খেলব। আমি নিশ্চিত, এতে ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা খুশি হয়নি। লিগ হয়তো এসেছে। কিন্তু মোহনবাগানকে হারিয়ে লিগ জেতার আনন্দটা ওরা পেল কোথায়?
ডার্বি— শব্দটা নিশ্চিত এখন মোহনবাগানকেও পোড়াচ্ছে ভেতরে ভেতরে। যা টিম ছিল মোহনবাগানের, ওরা জিততে পারত ম্যাচটা। কিন্তু স্রেফ কর্মকর্তাদের দম্ভ আর প্রাক্তন ফুটবলারদের সাহসিকতার অভাবে ভুগতে হল ক্লাবকে। যে সব প্রাক্তনরা সাজগোজ করে দিন-রাত কর্তাদের পিছন পিছন ঘোরে তাদের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা নেই। খেলোয়াড় জীবনেও ছিল না। এখনও নেই। আমি ওদের জায়গায় হলে কর্মকর্তাদের বোঝাতাম। ডার্বি খেলার জন্য রাজি করাতাম। কিন্তু এদের সেই ‘ইয়েস স্যার’ করার স্বভাবটা বন্ধ হলে তো একটু সাহস দেখাবে!
’৮৬-র ফেড কাপ ফাইনাল মনে নেই? এক ফুটবলার (বর্তমানে যে মোহনবাগানের কর্মকর্তা) টাইব্রেকারে শট নিতে ভয় পাচ্ছিল। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ, তার উপর টাইব্রেকার, নার্ভ রাখতে পারছিল না। কিন্তু আমরা সে দিন ওকে জোর করে বলেছিলাম, তুই মার আমরা আছি। গোল কিন্তু করেছিল ও। কিন্তু সাহসী মনোভাব দেখাতে পারেনি। ঠেলে পাঠাতে হয়েছে। সে দিন পারেনি। খেলোয়াড় জীবনে পারেনি। আজও পারল না। সাহসটা দেখাতে পারলে, আজকে চোখের সামনে এই ভাবে ইস্টবেঙ্গলকে ড্যাং ড্যাং করে লিগ-চ্যাম্পিয়ন হতে দেখতে হত না।
আরও একটা ব্যাপার। ম্যাচের তারিখ নিয়ে আগাগোড়াই খুঁতখুঁতে মোহনবাগান। জোড়-বিজোড় তারিখ নিয়ে আমাদের সময়ও ঝামেলা হত। মোহনবাগান জোড় তারিখে খেলতে পছন্দ করে। এ বারও হয়তো ৭ তারিখ নিয়ে সে কারণেই বেঁকে বসেছিল ওরা। তবে ও সব অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং ডার্বির কু-প্রভাবে টালিগঞ্জ ম্যাচেও ভুগতে হল মোহনবাগানকে। একে তো ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ায় শুরুতেই খেলার ইচ্ছেটা নষ্ট হয়ে যায়। তার ওপর ডার্বির যন্ত্রণাও মনে হয়, তাড়া করেছে টিমকে। বোধহয় একটা অদৃশ্য অপরাধবোধ কাজ করে চলেছে ফুটবলারদের ভিতরে-ভিতরে। হয়তো মনে হয়েছে, এ বার ইস্টবেঙ্গল যে ট্রফিটা পেল, তা আমাদেরও হতে পারত। আমরাও জিততে পারতাম। পারতাম, ইস্টবেঙ্গলের সাতে সাত আটকে দিতে।