অঘটনের ফেড কাপে বাংলার আশা বেঁচে বাগানে

দল বাছা থেকে প্ল্যান বি-র অভাব, এ কোন মর্গ্যান

চিরিচ মিলোভান, অমল দত্তরা তাঁকে দ্য ‘ইঞ্চি’ কোড পড়াননি। তাই বিপক্ষের অসময়ে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিতে পারেন না তিনি! ফেড কাপ কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লিগে ইস্টবেঙ্গল-লাজং ম্যাচ ২-২ শেষ হওয়ার পর (হোম-অ্যাওয়ে মিলিয়ে লাজং ৪-৩ জিতে সেমিফাইনালে) বারাসত স্টেডিয়াম থেকেই মোবাইলে ধরা হল তাঁকে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৫:০৬
Share:

হতাশার লাল-হলুদ। বুধবার বারাসতে। -উৎপল সরকার

লাজং এফসি-২ : ইস্টবেঙ্গল-২
(পেনা-পেনাল্টি, উইলিয়ামস) (র‌্যান্টি-পেনাল্টি, লালরিন্দিকা)

Advertisement

চিরিচ মিলোভান, অমল দত্তরা তাঁকে দ্য ‘ইঞ্চি’ কোড পড়াননি। তাই বিপক্ষের অসময়ে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিতে পারেন না তিনি!

ফেড কাপ কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লিগে ইস্টবেঙ্গল-লাজং ম্যাচ ২-২ শেষ হওয়ার পর (হোম-অ্যাওয়ে মিলিয়ে লাজং ৪-৩ জিতে সেমিফাইনালে) বারাসত স্টেডিয়াম থেকেই মোবাইলে ধরা হল তাঁকে। প্রথম রাউন্ডেই ইস্টবেঙ্গল ছিটকে গিয়ে মরসুম শেষ করেছে শুনে লাল-হলুদের পদত্যাগী কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের গলায় তাই অভিশম্পাতের বদলে আর্তনাদ। ‘‘পারল না! রিয়েলি ব্যাড নিউজ।’’

Advertisement

মাঠে তখন আধ ঘণ্টা প্রাতঃভ্রমণে হাঁটার মতো খেলে বার্নার্ড মেন্ডি চড়াও হয়েছেন ফেন্সিংয়ের ধারে। তাঁকে ‘গো ব্যাক’ বলা দর্শকদের ছাপার অযোগ্য গালাগাল দিতে দিতে। সে দিকে এক বার নির্নিমেষ দৃষ্টি হেনে এসে ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান বোমা ফাটালেন সাংবাদিক সম্মেলনে। ‘‘এগারোটা ফুটবলার খেলেছে আমাদের আজ। একটা টিম নয়। আমার আগের ইস্টবেঙ্গলে এটা ছিল না। পরের মরসুমেও আমি দায়িত্বে থাকলে টিমে বদল চাইব।’’

দুঃসময়ের ত্রাতা বলে যে মর্গ্যানকে ইস্টবেঙ্গল জনতা গত তিন বছর ভেবে এসেছে, এ দিন বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের কেউ কেউ কোচের উদ্দেশ্যে দিয়ে ফেললেন‘গো ব্যাক’ স্লোগান। ২৪ এপ্রিল থেকে ৪ মে— মাত্র দশ দিনে লাজং-৩: মর্গ্যান-০। কারও কারও প্রতিক্রিয়া, ‘‘লাজংকে হারাতে পারছেন না। এর পর আবার আই লিগ...। সাহেবের বয়স হয়েছে রে।’’

সমর্থকরা প্রিয় দলের হারে আবেগের বশে এ জাতীয় কথা বলতেই পারেন। কিন্তু মর্গ্যান? লাজং বধের প্ল্যান ‘বি’ কি সত্যিই নেই ব্রিটিশ কোচের হাতে? পূর্বতন বাঙালি কোচ ড্রেসিংরুমে কোনও কোনও ফুটবলারের কাছে ‘ভীতুদা’ আখ্যা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ‘ভীতু’ বিশ্বজিৎ আই লিগে লাজংকে ৪-০ উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আই লিগে প্রথম আট ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল যত গোল হজম করেছিল, তত গোলই তাদের জালে ঢুকল ফেড কাপের প্রথম দু’ম্যাচেই।

ম্যাচ শেষে লাজং কোচ থাংবই সিনটো বলছিলেন, ‘‘ওদের রাইট ব্যাকটা নড়বড়ে। তাই সেই জায়গা টার্গেট করেছিলাম।’’ লাল-হলুদ কোচ লাজং কোচের কাছে ঠকে গেলেন দল বাছতে গিয়েই। যে দীপক মণ্ডল ওভারল্যাপে গিয়ে নামতে দেরি করেন, টার্নিং দুর্বল, তাঁকেই তিনি ফের রাখলেন রাইট ব্যাকে। পেনার পেনাল্টি দীপক-ই হাতে বল লাগানোয়। দীপককে তুলে চোট পাওয়া মেন্ডিকে মর্গ্যান নামালেন দ্বিতীয়ার্ধে। খাবরা তখন রাইটব্যাক—দু’বছর আগে অপারেশনের পর যিনি দৌড়তে গেলে মাঝেমাঝে খোঁড়ান। অতিরিক্ত সময়ে আবার খাবরাকে তুলে নামালেন তুলুঙ্গাকে। ওভারল্যাপ আর বিপক্ষ বক্সে ক্রস ভাসানোর আশায়। প্রশ্ন এটাই, এ রকম ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে এই দুই ভূমিকাতেই দক্ষ সামাদকে টিমেই রাখলেন না কেন? র‌্যান্টির জন্য লোবোর অবর্তমানে বল হোল্ড করে খেলতে পারে এ রকম একজনকে দরকার। যিনি র‌্যান্টিকে গোলের বল বাড়াবেন। সেটা গোড়া থেকে হতে পারতেন রফিক। কিন্তু তিনি নামলেন লাজং ২-২ করার পর। অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে।

আগে গোল খেলেও প্রথমার্ধেই র‌্যান্টির পেনাল্টি আর লালরিন্দিকার অনবদ্য প্লেসিং থেকে ২-১ এগিয়ে ছিলেন মেহতাবরা। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে লাজংয়ের উইলিয়ামসের গোলের সময় পেন নিজেদের রাইট হাফের জায়গা থেকে ছুটলেন বিপক্ষের লেফট হাফ পর্যন্ত। কোনও ট্যাকল এল না। পেনের ভাসানো বল যখন অর্ণবের মাথা টপকে রাইট ব্যাকের সামনে পড়ছে তখন তুলুঙ্গা জায়গায় নেই। আর সেখান থেকেই এ বারের মতো মরসুম শেষ লাল-হলুদের!

পাহাড়ের দলের স্ট্র্যাটেজি ছিল ম্যাচের শুরু আর শেষের পনেরো মিনিট গোলের জন্য ঝাঁপাও। মর্গ্যান সেটাও ধরতে পারলেন না। বুঝলেন না তাঁর প্রিয় পুরনো ছাত্রদের বয়স বেড়েছে তিন বছর। উল্টে তিনি বললেন, ‘‘জেতার আগ্রহ কোথায় এদের?’’ তাই? তা হলে কলকাতা লিগে আর্মি একাদশ, কালীঘাট এমএস আর আই লিগে আইজল ম্যাচে দু’গোলে পিছিয়ে গিয়েও কী ভাবে জিতে ফিরেছিল বিশ্বজিতের ইস্টবেঙ্গল?

ফলে ফেড কাপে যে মর্গ্যান প্রদীপ জ্বালিয়ে কর্তারা আলো ফেরাতে চেয়েছিলেন তা একরাশ ছাই ছাড়া আর কিছুই দিতে পারল না!

ইস্টবেঙ্গল: রেহনেশ, দীপক (মেন্ডি), অর্ণব, বেলো, নারায়ণ, খাবরা (তুলুঙ্গা, রফিক), মেহতাব, লালরিন্দিকা, সঞ্জু, র‌্যান্টি, ডং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন