বন্ধু অরুণ পাণ্ডের সঙ্গে চার্টার্ড ফ্লাইটে ধোনি। ছবি-টুইটার
অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মানেই কোনও না কোনও চমক। কখনও যোগিন্দর শর্মাকে দিয়ে বল করিয়ে, কখনও নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে এনে, কখনও সুরেশ রায়নাকে দিয়ে বল করিয়ে।
বিদায়বেলাতেও চমক দিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন কুল। টেস্ট থেকেও সরে দাঁড়িয়েছিলেন সম্পূর্ণ আকস্মিক ভাবে। বহির্বিশ্বকে অন্ধকারে রেখে। ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সিও ছাড়লেন একই রকম নাটকীয় ভাবে। ঘুণাক্ষরেও আগে থেকে কাউকে জানতে দিলেন না কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এমনকী জানতেন না তাঁর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ও ম্যানেজার অরুণ পাণ্ডেও।
‘‘ওকে আমি দীর্ঘদিন চিনি। গত কয়েক সপ্তাহে ওকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল এমন কিছু একটা করতে পারে। কিন্তু ও বরাবরই তো চুপচাপ। আমাকেও কিছু জানতে দেয়নি। ক্রিকেট নিয়ে ধোনির সঙ্গে আমার নানা কথা হয়। গত কয়েক সপ্তাহে ক্রিকেট নিয়ে কোনও আলোচনা এড়িয়ে চলছিল। তখনই আমার সন্দেহটা হয়,’’ বলছিলেন অরুণ।
এ দিন সরকারি ভাবে বিসিসিআই সিদ্ধান্তটা মেল করার কয়েক ঘণ্টা আগে অরুণকে ব্যাপারটা বলেন ধোনি। তার আগে বিসিসিআইকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। অরুণ বললেন, ‘‘জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন সিদ্ধান্তটা নিল। ধোনি বলল, ‘ক্রিকেট নিয়ে তোর মাথা ঘামানোর দরকার নেই। মাঠে আমি কী করি না করি সেটা আমার উপর ছেড়ে দে।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘ইংল্যান্ড সিরিজের নির্বাচনী বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছিল ধোনি। শুক্রবার টিম সিলেকশন। তার আগেই সিদ্ধান্তটা নিল।’’
চার মহাকীর্তি
১. ২০০৭: টি-২০ বিশ্বকাপ। ২. ২০১১: বিশ্বকাপ। ৩. ২০১১: এক নম্বর টেস্ট দল। ৪. ২০১৩: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
বুধবার, রাত ন’টা নাগাদ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একটি ই-মেল মারফত আসে খবরটা।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আর দেশকে নেতৃত্ব দেবেন না। তবে দলে নির্বাচিত হলে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে, টি- টোয়েন্টি সিরিজ খেলবেন।
ভারতীয় ক্রিকেটে প্রশাসনিক পরিবর্তনের সঙ্গে আচম্বিতে বদলে গেল ভারতীয় দলের নেতৃত্বও।
ক্যাপ্টেন কুল যুগের অবসান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ থেকে আক্ষরিক অর্থে ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয়ে যাচ্ছে বিরাট যুগ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার পর কি এ বার অবসরের রাস্তায় হাঁটবেন ধোনি? কিন্তু তিনি তো বলেছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছে রয়েছে।
ধোনির বন্ধু বলছেন, ‘‘বিশ্বকাপ পর্যন্ত ওর খেলা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। দেশের জন্য খেলার মোটিভেশনটা ওর এখনও খুব জোরালো। আজ সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর ধোনি পরিষ্কার আমায় বলল, ভারতের জার্সিতে ও খেলাটা চালিয়ে যেতে চায়। ২০১৯ বিশ্বকাপেও খেলতে চায়।’’
ধোনির সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পরে অবশ্য উত্তরসূরি বিরাট কোহালি সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে এ দিন বিকালের দিকে নতুন ক্রিকেট সরঞ্জামের ছবি পোস্ট করে টুইটারে লেখেন, ‘‘নতুন ক্রিকেট সরঞ্জাম দেখার সেই উচ্ছ্বাসটা একদম পাল্টায়নি। সেই ছোটবেলা থেকে এক আছে। চিরকালীন সেই একই উত্তেজনা আর আনন্দ।’’ আর রাতে সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় মেয়েদের জন্য, ‘‘ব্লু-র পাশে সব সময় আছি। রেকর্ড চার নম্বর খেতাবের জন্য শুভেচ্ছা মেয়েদের।’’
কে জানত তাঁর কিছুক্ষণ পরই নিঃশব্দে তাঁর কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে সরে যাবেন ধোনি?
হঠাৎ কেন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন তিনি? এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ক্রিকেটমহলের একটা অংশের ধারণা, টেস্টে বিরাট কোহালি যে ভাবে পরপর সাফল্য পাচ্ছেন, তাতে ধোনির উপর বাকি দুই ফর্ম্যাটে অধিনায়কত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। এই চাপের মুখেই সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে ক্যাপ্টেনের তাজ ছেড়ে দিলেন তিনি। তিন ফর্ম্যাটেই এ বার ভারতের নেতা হতে যাচ্ছেন বিরাট।
ধোনির বন্ধু অবশ্য মনে করছেন, ‘‘এ বার ক্রিকেটে আরও বেশি করে মন দিতে পারবে। বেশ কিছুদিন খেলাটা চালিয়েও যেতেও পারবে। এখন ওর বয়স ৩৫। দারুণ ফিট। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে ফিটনেসটা ধরে রাখতে সে রকমই পরিশ্রম করে। দশ বছর আগেও ও এত ফিট ছিল বলে আমার মনে হয় না। দেশের অন্য কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা যদি ৩৮-৪০ বছর পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে পারে, তা হলে ধোনিই বা পারবে না কেন?’’