নতুন মিশন নিয়ে ভারতে মুস্তাফিজুর

সারা বিশ্ব তাকে মিডিয়াম পেসার হিসেবে চেনে। আরও ভালো করে বললে-কাটার মাস্টার। কিন্তু সেই মুস্তাফিজুর রহমানকে সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রাম ও আশেপাশের লোকজন চেনে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ১২:৩৮
Share:

সারা বিশ্ব তাকে মিডিয়াম পেসার হিসেবে চেনে। আরও ভালো করে বললে-কাটার মাস্টার। কিন্তু সেই মুস্তাফিজুর রহমানকে সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রাম ও আশেপাশের লোকজন চেনে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে!

Advertisement

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্ব শেষ করে সুন্দরবনের একেবারে কোলের কাছে বাড়িতে গিয়ে কয়েকটা দিন খুব আমোদে কাটিয়ে এসেছেন মুস্তাফিজ। সকাল বিকেল মটরসাইকেলে করে গ্রামের পথে ধুলো ওড়ানো, এলাকার স্কুল পড়ুয়াদের সাথে ব্যাটিং করা; এসব চলেছে।

সেই সুখের দিন ফুরোলো।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে দলের সিনিয়র ও অভিভাবকতূল্য সাকিব আল হাসানের পিছু পিছু আবার রওনা দিলেন ভারতে। সাকিব কলকাতা রয়ে গেলেন। আর সেখান থেকেই রাতে কানেকটিং ফ্লাইট ধরে হায়দারাবাদে পৌছে গেছেন মুস্তাফিজ।

সাকিব-মুস্তাফিজ দু জনেরই উদ্দেশ্য আইপিএল খেলা।

সাকিবের জন্য ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। পঞ্চমবারের মতো কেকেআরের হয়ে খেলতে কলকাতা পৌছেছেন বাংলাদেশের সেরা এই ক্রিকেটার। কলকাতা তো বটেই, আইপিএলের ভেন্যু, ভঙ্গি, গন্ধ সবই পরিচিত হয়ে যাওয়ার কথা সাকিবের।

কিন্তু মুস্তাফিজের জন্য এ এক কলম্বাস হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার।

কলকাতা অবদি তবু সঙ্গী ছিলেন সাকিব। এরপর একেবারে একা। এই প্রথম একা একা দেশের বাইরে কোনো লিগ খেলার জন্য উড়াল দিলেন। সঙ্গী সাথী যাদের পাবেন, তার মধ্যে কেউ যে ভুলেও দু একটা অক্ষর বাংলা বলবেন, সে সম্ভাবনা নেই। ফলে আক্ষরিক অর্থেই তরুন এই পেসারের জন্য জলের মাছ ডাঙায় পড়ার মতো অবস্থা হতে পারে।

কিন্তু মুস্তাফিজ তার ডেলিভারির মতোই মানুষ; দেখতে সরল, ভেতরে কঠিন।

প্রশ্নটা উঠতে, ‘আপনারা আমাকে চেনেন না? আমি মুস্তাফিজ কি এত কিছু ভাবি? খেলার কথা, খেলব। ভালো করার চেষ্টা করব।’

আরও পড়ুন-মিশন আইপিএল, নেহরার প্রশংসা পেয়ে বেজায় খুশ মুস্তাফিজুর

কথার ছলে কথা বলতে বলতে এটা মানলেন যে, একটু অস্বস্তি হবে। যেহেতু ইংরেজী বা হিন্দিটা কোনোটাই খুব সড়গড় নয়, তাই যোগাযোগ তৈরী বা বন্ধু বানানোয় একটু ঝামেলা তো হবেই। যে কারণে ক দিন আগে দেখা হলেও তার দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর ভিভিএস লক্ষনের সাথে দেখা হলেও খুব একটা কথা হয়নি। নিজেই মজা করে বললেন, খুব কথা না হওয়ার কারণ ওই যোগাযোগের সমস্যা।

তবে একটা ব্যাপার হলো, ক্রিকেটারদের জন্য শেষ অবদি ভাষাটা নাকি তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। ব্যাট-বলের নিজস্ব একটা ভাষা আছে। যে ভাষায় তারা পরষ্পরের সাথে দিব্যি কথা চালাতে পারেন। নইলে মুস্তাফিজ কোন ভরসায় নেহরা, বৌল্টদের সাথে বন্ধুত্ব করে কিছু শিখেই ফেরার কথা শোনান।

মুস্তাফিজ হায়দারাবাদে গিয়ে তৈরী বন্ধু না পেলেও পরিচিত মুখ অনেককে পাবেন। নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনকে পাবেন। ভারতের অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার আশিস নেহরা আছেন দলে। বিশ্বকাপ চলার সময়ই যিনি মুস্তাফিজকে নিয়ে জানিয়েছিলেন মুগ্ধতা ও আইপিএলে নিজ দলে পাওয়ার স্বস্তি। ভারতের উঠতি বাঁহাতি পেসার বারিন্দর স্রানও আছেন দলে; আছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বাঁহাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। স্কোয়াডে আরও পেসার আছেন ভূবনেশ্বর কুমার, অভিমন্যু মিঠুন, বিদেশি পেসারদের মধ্যে বেন কাটিং।

এতোসব পেসার, বিশেষ করে বাহাতি পেসার আছেন বলে একটু হতাশ চাইলে হতে পারতেন মুস্তাফিজ। মনে হতে পারতো-ইলেভেনে জায়গা হবে তো!

ওই যে মুস্তাফিজ জটিল করে ভাবতে শেখেননি। তাই ইলেভেনের জায়গার কথা না ভেবে বরং বললেন, এতো জন বাহাতি পেসার থাকার অর্থ, তার জন্য আরও অনেক কিছু শেখার সুযোগ, ‘শেখার ইচ্ছে তো আছেই। একসঙ্গে এতজন বাঁহাতি পেসার থাকলে অনেক কিছুই শেখা যায়।’

বয়সে, অভিজ্ঞতায় নবীন হলে কী হবে, চিন্তাটা বেশ পরিণতই। আইপিএল থেকে সেই চিন্তাটা আরও শান দিয়ে আনারই ইচ্ছে মুস্তাফিজের।

ইচ্ছেপূরণের ভারটা অবশ্য সময়ের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন