Rahul Tewatia

পাড়ার দাদারা বাড়ি এসে বলেন, রাহুল ক্রিকেটার হোক

ফরিদাবাদ থেকে ফোনে তেওটিয়া আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘হরিয়ানার হয়ে তিনজন আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার খেলে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

তাঁকে যদি নিলামে পাওয়া যায় তবে কেকেআর দারুণ উপকৃত হবে। তিনি যেমন ডেথ ওভারে দ্রুত রান তুলতে পারেন, তেমনই দরকারে উইকেট তুলে নিতে পারেন। এ বারের টুর্নামেন্টে ১৭টি ছক্কা এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে, গড় ৪২.৫। এমন একজনকেই মিডল অর্ডারে প্রয়োজন কেকেআরের।

পাড়ায় টেনিস বলের ক্রিকেট দলে জায়গা হত না ছোটবেলায়। তবুও প্রত্যেক দিন বিকেলে দাদাদের ম্যাচ দেখতে ছুটতেন পাড়ার মাঠে। বল হারিয়ে গেলে তা খুঁজে আনতে সাহায্য করতেন। হরিয়ানার সিরিগাওয়ে এ ভাবেই শুরু হয়েছিল রাহুল তেওটিয়ার জীবন। এক দিন পাড়ার ক্রিকেটে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় না থাকায় সুযোগ পায় সে। আট বছর বয়সি রাহুল তখনও বুঝতে পারেনি, তার সঙ্গে কী হতে চলেছে।

Advertisement

সিনিয়রদের সঙ্গে আগে কখনও খেলার অভিজ্ঞতা রাহুলের ছিল না। কিন্তু পাড়ার মাঠের লেগসাইড ছোট থাকায় একের পর এক ছয় মেরে ম্যাচ জিতিয়ে দেয় ছোট তেওটিয়া। সে দিনই বাড়িতে এসে পাড়ার দাদারা রাহুলের বাবাকে অনুরোধ করেন, ‘‘রাহুল দারুণ ত্রিকেট খেলে। দয়া করে ওকে আপনারা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দিন।"

টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে বেড়ে ওঠা রাহুলই এ বারের আইপিএলের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। তিনি নিজে পরিসংখ্যানে বিশ্বাসী না হলেও এ বারের আইপিএলে ২৫৫ রান করার পাশাপাশি দশটি উইকেট তাঁর ঝুলিতে। ইকনমি রেট (ওভার পিছু দেওয়া রান) ৭.০৮। আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। কে ভুলতে পারবে এক ওভারে তাঁর সেই পাঁচটি ছয় মারা! তেওটিয়ার এখন স্বপ্ন, হরিয়ানার রঞ্জি ট্রফি দলে নিয়মিত ভাবে সুযোগ পাওয়া।

Advertisement

ফরিদাবাদ থেকে ফোনে তেওটিয়া আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘হরিয়ানার হয়ে তিনজন আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার খেলে। চহাল, অমিত মিশ্র ও জয়ন্ত যাদব। তাই রঞ্জিতে আমি নিয়মিত সুযোগ পাই না। চতুর্থ স্পিনার খুব প্রয়োজন না হলে কেন নেবে কোনও দল? সাদা বলের ক্রিকেটে যদিও সব ম্যাচই খেলি। রাজ্যের হয়ে সব ধরনের ক্রিকেটেই নিয়মিত হয়ে উঠতে চাই আমি।"

তেওটিয়াকে দেখে মুগ্ধ বীরেন্দ্র সহবাগ থেকে যুবরাজ সিংহ। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে তাঁর ম্যাচ জেতানো ৫৩ রানের ইনিংসের প্রশংসা করেছেন সচিন তেন্ডুলকরও। এই পর্যায়ে সে রকম অভিজ্ঞতা না থেকেও কী করে জেতালেন সেই ম্যাচ? তেওটিয়ার জবাব, ‘‘আমাদের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ আমার উপরে খুব ভরসা রাখত‌‌। চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়ে বলেছিল, দলকে জিতিয়েই ফিরবে। প্রথম ২০ বলে সে রকম রানই করতে পারিনি। কিন্তু ডাগআউট থেকে স্মিথ প্রচুর সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে লড়ে যাওয়ার পুরস্কারই সে দিন পেয়েছিলাম আমি।’’

বেন স্টোকস দলে যোগ দেওয়ার পরেই রাহুলকে এসে জড়িয়ে ধরেন। জানতে চান, কী ভাবে রাহুল জেতালেন সেই ম্যাচ? জফ্রা আর্চার, জস বাটলারেরা অনুশীলনেও মুগ্ধ হয়ে দেখতেন তাঁর ব্যাটিং। রাজস্থান রয়্যালসে তেওটিয়ার প্রিয় বন্ধু যদিও ডেভিড মিলার। তরুণ অলরাউন্ডারের কথায়, ‘‘মিলার আমাকে ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝাতে সাহায্য করত। কার বিরুদ্ধে আগ্রাসী হওয়া উচিত, কাকে সমীহ করে খেললে উইকেট হারানোর সুযোগ কম। এই ব্যাপারগুলো মিলারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতাম। স্টোকসও খুব সাহায্য করেছে।" তেওটিয়ার মুখে আরও একটি নাম— শেন ওয়ার্ন। বলছিলেন, ‘‘লেগস্পিনার হলেও ফ্লিপার ঠিক মতো করাতে পারতাম না। ওয়ার্ন স্যর বলে দেন, উইকেট পেতে হলে ফ্লিপার করতেই হবে। নিজের হাতে ধরে ফ্লিপার শেখান আমাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন