দক্ষিণ আফ্রিকায় বিতর্কে ভরা একটা সিরিজ কি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতিটাই বদলে দেবে? তাদের নতুন অধিনায়ক টিম পেইনের কথা সত্যি হলে হয়তো তেমনই হতে চলেছে।
বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির ধাক্কায় ভেঙে চুরমার অস্ট্রেলিয়াকে মঙ্গলবার তাদের টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম হার দেখতে হল জোহানেসবার্গে। রানের বিচারে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে টেস্ট হারের (৬৭৫) ৯০ বছর পরে ৪৯২ রানে এই লজ্জার হার স্বীকার করতে হল তাদের। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪৮ বছর পরে টেস্ট সিরিজে হারল (৩-১) অস্ট্রেলিয়া।
একের পর এক বিতর্কে ঠাসা যে সিরিজে পাঁচ ক্রিকেটারকে শাস্তি পেতে হয়েছে, তিনজনকে দীর্ঘ নির্বাসন দেওয়া হয়েছে, সেই সিরিজের পরে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে এক নতুন চেহারায় দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন পেইন। মঙ্গলবার সিরিজ হারের পরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নতুন কোচ আসছেন। নতুন সংস্কৃতিও হয়তো আসবে। এই সিরিজ থেকে অনেক ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই দেশে ফিরব আমরা। মাঠে আমাদের আচরণে বদল আনতেই হবে।’’
স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ড্যারেন লেম্যানদের বিদায়েই এই যুগ বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছে সেদেশের সংবাদমাধ্যমও। আর দেশের মানুষের দাবি মেনে এই বদলটা দরকার বলেও মনে করছেন নতুন অধিনায়ক। পেইন বলছেন, ‘‘দেশের মানুষের কথা আমাদের শুনতে হবে। আগে আমরা ভাবতাম, সাফল্য আনতে থাকলে আমরা যা খুশি করতে পারি। লোকে তা মেনে নেবে। কিন্তু গত এক মাসে বোঝা গিয়েছে, আমরা যা খুশি করলে দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। তাই সোজা কথা হল, আমাদের বদলাতে হবে। এই শেষ টেস্টেই অনেকে বুঝে নিয়েছেন, আমরা অনেকটাই বদলে গিয়েছি। এখন থেকে আমরা এই পথেই চলব।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার ডিন এলগার অবশ্য বলছেন উল্টো কথা। তাঁর মতে, ‘‘এই দলটা যতই শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করুক, ওরা এটা ধরে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, খেলার মধ্যে উত্তেজনায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েই থাকে। ওদের পক্ষে এই স্বভাব বদলানো কঠিন। জোর করে আবেগ চাপতে গেলে ওরা ভাল খেলতেও পারবে না।’’ শেষ টেস্টে বিশাল হারের পরে অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে আরও অনেকেই এই কথা বলতে শুরু করেছেন। এ দিন যে ভাবে মুখ থুবরে পড়ল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং, তা তাদের চেনা ছন্দ নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১২ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য নিয়ে নেমে টিম পেইনের দল গুটিয়ে যায় মাত্র ১১৯ রানে। ৮৮ রানে তিন উইকেট হারানোর পরে তাদের শেষ সাত উইকেট পড়ে মাত্র ৩১ রানের মধ্যে, ১৭ ওভারে। ভার্নন ফিল্যান্ডার ও মর্নি মর্কেলদের দাপটে ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। যেমন পড়েছিল আগের টেস্টেও। ফিল্যান্ডার দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ রানে ৬ উইকেট নেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ন’উইকেট তাঁর। সিরিজের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এই টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলেও ডুপ্লেসিদের অযথা দ্বিতীয় ইনিংস লম্বা করা নিয়ে বিতর্কের একটা ছোঁয়া থেকেই গেল ওয়ান্ডারার্সে। ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ঘাড়ে ৬১২ রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার এই দৃশ্য দেখে শেন ওয়ার্ন টুইট করেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেট আরও উত্তেজক হয়ে বেঁচে থাকুক, এটাই আমরা চাই। কিন্তু এটা টেস্টের পক্ষে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়।’’