মেসিদের গ্রহে

নেইমারও এখন একাই একশো

লিওনেল মেসি পারেননি। পেনাল্টি ফস্কে কাঁদতে কাঁদতে মাঠেই ট্রফি ফেলে এসেছিলেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দল পারলেও তিনি পারেননি। মনে করা হচ্ছিল, জিতলে তাঁর গোলেই ইউরো জিতবে পর্তুগাল। কিন্তু ফাইনালের শুরুতেই চোট পেয়ে বেরিয়ে যেতে হয় রোনাল্ডোকে। বাইরে থেকেই অনামী এডেরের গোলে ইউরো জয় দেখতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

সোহম দে

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

লিওনেল মেসি পারেননি। পেনাল্টি ফস্কে কাঁদতে কাঁদতে মাঠেই ট্রফি ফেলে এসেছিলেন।

Advertisement

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দল পারলেও তিনি পারেননি। মনে করা হচ্ছিল, জিতলে তাঁর গোলেই ইউরো জিতবে পর্তুগাল। কিন্তু ফাইনালের শুরুতেই চোট পেয়ে বেরিয়ে যেতে হয় রোনাল্ডোকে। বাইরে থেকেই অনামী এডেরের গোলে ইউরো জয় দেখতে হয়েছিল তাঁকে।

নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র পারলেন। অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে একটা ম্লান হয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যকে সোনার অক্সিজেন দিয়ে গেলেন। রিও অলিম্পিক্স ফাইনালে ফ্রি-কিকে গোল থেকে অলিম্পিক্স ইতিহাসের দ্রুততম গোল। নেইমার বুঝিয়ে দিলেন, একা হাতে তিনি টানতে পারেন টিমকে।

Advertisement

অলিম্পিক্স ফুটবলের সঙ্গে কোপা বা ইউরোর তুলনা হয় না। অলিম্পিক্স ফুটবল তরুণ ব্রিগেড দেখে নেওয়ার মঞ্চ। ভবিষ্যৎ লগ্নি কারা হতে পারে, বুঝে নেওয়ার মঞ্চ। বিশ্বকাপ বা ইউরোর হানাহানি, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আবহ অলিম্পিক্সে থাকে না। টিমে তিন সিনিয়র প্লেয়ার থাকতে পারে, এই নিয়ম সত্ত্বেও অর্ধেক দেশ পুরো শক্তির টিম পাঠায় না অলিম্পিক্সে। রিওয় রুপোজয়ী জার্মানি যেমন। কোথায় একটা মেসুট ওজিল, কোথায় একটা ম্যানুয়েল ন্যয়ার। ব্রাজিলের যে টিম চ্যাম্পিয়ন হল, পরিচিতদের মধ্যে সেখানে নেইমার ছিলেন শুধু। দাভিদ লুইজ, মার্সেলো, উইলিয়ান, অস্কার— কেউ ছিলেন না।

কিন্তু এটাও ভাবার বিষয় যে, ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিলেন নেইমাররা। কয়েক কোটির প্রত্যাশা নিয়ে। অধরা সোনা জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। দেশের মাটিতে জার্মানির কাছে ধ্বংসের কালো স্মৃতি নিয়ে। তার উপর প্রথম দুটো ম্যাচেই ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র। চ্যালেঞ্জ কম সামলাতে হয়নি নেইমারকে।

একাধিক চ্যালেঞ্জের চাপই হয়তো শেষ পর্যন্ত ‘তৈরি’ করে দিল নেইমারকে। প্রতিভাবান পার্শ্বনায়ক থেকে তাঁকে রূপান্তরিত করল ওয়ান ম্যান আর্মিতে। গোটা বিশ্বের সামনে প্রমাণ করে দিল, মেসি-রোনাল্ডো পরবর্তী যুগের ব্যাটন তাঁর হাতে তুলে দেওয়া যায়।

দশ আর সাত নম্বর জার্সির দুই তারকা মালিক যখন বুট তুলে রাখবেন, তখন কি নেইমারই সেরার শিরোপা পাবেন? তাঁর হাতে উঠবে ব্যালন ডি’অর? আই লিগের সবচেয়ে সফল কোচ আর্মান্দো কোলাসোর কথায়, ‘‘নেইমার দারুণ খেলেছে অলিম্পিক্সে। ফাইনালে ওর ফ্রি-কিক দেখার মতো ছিল। এখনই ওর সঙ্গে মেসি-রোনাল্ডোর তুলনা করবেন না। তবে হ্যাঁ, ভবিষ্যতে ও আরও উন্নতি করবে। ব্যালন ডি’অরও জিততে পারে।’’

ময়দানের ব্রাজিলীয় জোসে ব্যারেটোও বলছেন, ‘‘নেইমার সঠিক পথে এগোচ্ছে। ও পরের প্রজন্মের মুখ। কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোর মতো হতে গেলে ওকে আরও গোল করতে হবে।’’ ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে আলভিটো ডি’কুনহা বললেন, ‘‘এখন তো কারও সঙ্গে ফুটবল নিয়ে কথা বললেই মেসি, রোনাল্ডো আর নেইমারের নাম উঠে আসে। এতেই বোঝা যাচ্ছে নেইমার বড় ফুটবলার।’’

মেসি অলিম্পিক্স সোনা দিয়েছেন আর্জেন্তিনাকে। কিন্তু সেই টুর্নামেন্টে মেসি ছিলেন অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবলার। তাঁর চার পাশে ছিলেন রিকেলমে, আগেরো, দি’মারিয়া, লাভেজ্জিরা। নেইমারের টিমে সেখানে অধিনায়ক বাদে যাঁরা খেললেন, সেই জেকা, গাবিগোল, জেসাস— এঁদের নাম অলিম্পিক্সের আগে ক’জন জানতেন, সন্দেহ আছে।

এটা ঠিক যে, মেসি-রোনাল্ডোর ধারেকাছে পৌঁছতে গেলে এখনও অনেক সময় লাগবে নেইমারের। টানা গোল করতে হবে— প্রতি মরসুমে অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশটা। মুখের কথা নয়। কিন্তু একা হাতে দলকে টানার ক্ষমতা যদি একমাত্র মাপকাঠি হয়, তা হলে কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোকে ছুঁয়ে ফেলেছেন নেইমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন