নতুন ফাইনাল

নিশির র‌্যাকেটে টেনিসের জে লিগ উদয়

ফ্লাশিং মেডোয় পুরুষ সিঙ্গলস ফাইনালের লাইনআপ দেখে অনেকে বলছেন, নিশিকোরি বনাম চিলিচ বোধহয় গ্র্যান্ড স্ল্যামে নতুন যুগের সূচনা করল! আমি এই দলে নিজেকে রাখতে রাজি নই। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেই তো এ বারও সেমিফাইনাল খেলেছে ফেডেরার, জকোভিচ। আর নাদাল চোটের জন্য টুর্নামেন্টেই ছিল না। তাই টেনিসের বিগ থ্রি-র যুগ একেবারে শেষ, বলার সময় এখনই আসেনি।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

খেতাবের লড়াইয়ে চিলিচ বনাম নিশিকোরি

ফ্লাশিং মেডোয় পুরুষ সিঙ্গলস ফাইনালের লাইনআপ দেখে অনেকে বলছেন, নিশিকোরি বনাম চিলিচ বোধহয় গ্র্যান্ড স্ল্যামে নতুন যুগের সূচনা করল! আমি এই দলে নিজেকে রাখতে রাজি নই। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেই তো এ বারও সেমিফাইনাল খেলেছে ফেডেরার, জকোভিচ। আর নাদাল চোটের জন্য টুর্নামেন্টেই ছিল না। তাই টেনিসের বিগ থ্রি-র যুগ একেবারে শেষ, বলার সময় এখনই আসেনি।

Advertisement

তবে একটা কথা হয়তো এখনই বলে দেওয়া যায়। ফুটবল, সাঁতার টেবল টেনিস, বেসবল এমনকী মোটর স্পোর্ট, সুমো কুস্তির মতোই টেনিস বিশ্বেও জাপানি-শাসন নিশিকোরির র‌্যাকেটের দাপটে কায়েম হল বলে!

জাপানকে ফুটবলে সাতের দশকেও ভারত হারিয়েছে। এখন খেলা হলে আমাদের পাঁচ-ছ’গোল খাওয়া অবধারিত। ওদের জে লিগ গ্ল্যামারে, খেলার স্ট্যান্ডার্ডে ইউরোপের ফুটবল লিগের সঙ্গে টক্কর নিচ্ছে। টেবল টেনিসে ফুকুহারা গত অলিম্পিকেই ফাইনালিস্ট। বেসবলে জাপান বরাবর বিগ-পাওয়ার। কিন্তু টেনিসে জাপান বলতে ৪৩ বছরেও মেয়েদের পেশাদার সার্কিটে খেলে চলা কিমিকো দাতে-কেই এত দিন বোঝাত। একটা সময় র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরও ছিল।

Advertisement

মঙ্গলবার টোকিওর ভোর সাড়ে চারটেয় সমগ্র জাপান নিশ্চয়ই টিভির স্পোর্টস চ্যানেল খুলবে তাদের নতুন টেনিস মহানায়কের হাতে দেশের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস ট্রফি দেখার আশা নিয়ে। কেই নিশিকোরি শুধু জাপানই নয়, এশিয়ার প্রথম পুরুষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালিস্ট! মারিন চিলিচ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্ট্রেট সেটে ৬-৩, ৬-৪, ৬-৪ ফেডেরারকে হারিয়ে অবশ্যই ফাইনালে বিরাট চ্যালেঞ্জার। কিন্তু আমার মতে আগের রাউন্ডেই পাঁচ সেটে জেতার ধকলে তেত্রিশের ফেডেরার সেমিফাইনালে হয়তো ক্লান্ত ছিল। সেখানে পাঁচ নম্বর বাছাই রাওনিক আর তৃতীয় বাছাই ওয়ারিঙ্কার বিরুদ্ধে পরপর দুটো ম্যারাথন পাঁচ সেট ম্যাচ জেতার পর শীর্ষ বাছাই জকোভিচকেও হারিয়ে নিশিকোরির ফাইনালে ওঠা অনেক বেশি কৃতিত্বের। তাৎপর্যেরও।

বছর তেরো-চোদ্দো থেকে নিক বলতিয়েরির ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি নিশিকোরির স্থায়ী ঠিকানা হলেও তার আগে পর্যন্ত জাপানের বিশ্বমানের ক্রীড়া পরিকাঠামোতেই তার টেনিস-তালিম ঘটেছে। যে পরিকাঠামো একশো ভাগ অত্যাধুনিক, ফোকাসড্, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, শৃঙ্খলাপরায়ণ। যে গুণগুলোর কোনওটাই আমাদের দেশের টেনিস বলুন বা অন্য খেলার পরিকাঠামোতে নেই। এটিপি-র পয়েন্ট সিস্টেম চালু হওয়ার পর ভারতীয়দের মধ্যে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং সবচেয়ে উঁচুতে ছিল বিজয় অমৃতরাজের। ১০-১২ হবে বোধহয়। আমি ১৭-১৮ নম্বর পর্যন্ত উঠেছি। এটিপি-র আগে বেসরকারি ভাবে রামনাথন কৃষ্ণন বিশ্বে তিন নম্বর ছিল। আমাদের খেলোয়াড়জীবনে ছয়ের দশকে আমরা (আমি-কৃষ্ণন-প্রেমজিৎ) ডেভিস কাপে জাপানকে প্রতিবার হারিয়েছি। তখন ওদের সেরা প্লেয়ার ছিল ইশিগুরো, ওয়াতানাবে।

কিন্তু শেষ দশ-বারো বছরে ছবিটা আমূল পাল্টে গিয়েছে। নিশিকোরির মতো ওয়ার্ল্ড-বিটার বেরিয়েছে জাপান থেকে। যা বিশ্ব টেনিসেও জাপানি-যুগ শুরুর রীতিমতো সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এর পর স্বভাবতই প্রাক্তন টেনিস প্লেয়ার হিসেবে আমাকে একটা প্রশ্নের অনেকবার সম্মুখীন হতে হল রবিবার।

জাপান পারলে ভারত পারে না কেন? নিশিকোরি পারলে লিয়েন্ডার-সোমদেব পারে না কেন?

এর একটা কারণ তো আমাদের দেশে যথার্থ টেনিস পরিকাঠামোর অভাব বটেই। কিন্তু লিয়েন্ডার যদি ডাবলসের স্বার্থে সিঙ্গলস খেলাটা না ছাড়ত, তা হলেও ওর পক্ষে নিশিকোরি হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। কিংবা সোমদেব আমেরিকায় আরও বড় কোনও টেনিস অ্যাকাডেমিতে পড়ে থাকলেও কোনও দিন গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে ওঠা ওর সম্ভব নয়। লিয়েন্ডারের গ্রাউন্ডস্ট্রোক ভাল নয়। ব্যাকহ্যান্ড দুর্বল। রিফ্লেক্স এবং ফিটনেস অসাধারণ, আর কিছু রিটার্ন। মূলত সেটা বছর পনেরো আগেই বুঝতে পারায় ডাবলসে এত বেশি মনোনিবেশ করেছে লিয়েন্ডার।

আবার সোমদেব পেশাদার ট্যুরে নিয়মিত সিঙ্গলস খেললেও ও মূলত কাউন্টার-পাঞ্চার। হাতে কোনও উইনিং স্ট্রোক নেই। টেনিসে লম্বা র‌্যালির মধ্যেও একটা উইনার মেরে পয়েন্ট তোলাটা যে ভীষণ জরুরি, সে রকম কোনও বড় ফোরহ্যান্ড বা ব্যাকহ্যান্ড শট ওর খেলায় নেই। র‌্যালি ফিনিশ করতে পারে না। মূলত কাউন্টার করে যায়।

নিশিকোরি একটা ব্যাকহ্যান্ড ডাউন দ্য লাইন শট মারে, যে রকম মারতে পারলে নাদালও গর্বিত হত। এটাই একজন চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ারের হাতে থাকা উইনিং স্ট্রোক। এ বছরই মাদ্রিদ ফাইনালে ক্লে কোর্টে নাদালকে উড়িয়ে দিচ্ছিল নিশিকোরি। দুর্ভাগ্যক্রমে তৃতীয় সেটে চোট পেয়ে ওয়াকওভার দিতে বাধ্য হয়। নাদাল ট্রফি নিয়ে স্বীকার করেছিল, ‘আজ নিশিকোরিই এটা পাওয়ার যোগ্য, আমি নই।’ তবে চোট-প্রবণতা নিশিকোরির একটা সমস্যা। অনেকটা নাদালের মতোই। তবে এখন বছরভর কঠিন পেশাদার সার্কিটের রগড়ানির ফলে প্লেয়ারের বারবার চোট পাওয়াটা টেনিসে বড় খবর নয়। বলুন তো, ফেডেরার বাদে আর কোন টপ প্লেয়ারটা বড় চোট পেয়ে অন্তত কিছু দিন কোর্টের বাইরে থাকেনি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন