সবুজ পিচ নিয়ে বিস্ময় আছে, অভিযোগ নেই

ঘাস থাকলে থাকুক, মন্ত্র ভারতের

বরাবর ভারত অধিনায়করা দেশের মাটিতে নিজেদের পছন্দের উইকেট চেয়ে এসেছেন। মহম্মদ আজহারউদ্দিন থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— কেউ ব্যতিক্রম হননি।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০৮
Share:

পরীক্ষা: ইডেনে চলল দু’দফায় পিচ দেখা। একবার এলেন রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহালি। পরে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইডেনের সবুজ পিচ নিয়ে এখনও পর্যন্ত একটি কথাও কেউ বলেননি ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে। যা কার্যত অপ্রত্যাশিত এবং নজিরবিহীন। আরও চাঞ্চল্যকর হচ্ছে, ভারতীয় দল থেকে ঘাস দেখেও কোনও রকম হইচই না করা।

Advertisement

উল্টে শোনা গেল, দলের মধ্যে নাকি বলাবলি হয়েছে, যে রকম পিচ দেবে তাতেই খেলার জন্য তৈরি থাকো সকলে। আয়োজক সংস্থা হিসেবে সিএবি-র প্রতি খুব প্রসন্ন হয়ে ভারতীয় দলের সদস্যরা এমন কথা বলেছেন, মানা যাচ্ছে না।

বরাবর ভারত অধিনায়করা দেশের মাটিতে নিজেদের পছন্দের উইকেট চেয়ে এসেছেন। মহম্মদ আজহারউদ্দিন থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— কেউ ব্যতিক্রম হননি। কেউ কেউ নিজেরা বসে থেকে কিউরেটরকে দিয়ে ঘাস কাটিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিরাট কোহালির দল থেকে কেউ সেটা করার চেষ্টা করল না কেন? মঙ্গলবার ভারতীয় দল যখন প্র্যাকটিস করছে, তখন একবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও এসেছিলেন পিচ পরিদর্শনে। পাশে ছিলেন তাঁর আস্থাভাজন সিএবি কিউরেটর। তখন ভারতীয় দলের কাউকে দেখা যায়নি সৌরভের সঙ্গে গিয়ে কথা বলতে।

Advertisement

পিচ নিয়ে সবচেয়ে বেশি করে রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে দু’দিকের দুই শীর্ষ চরিত্রের উপস্থিতির কারণে। সিএবি প্রেসিডেন্টের নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় দলের প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী। দু’জনের মধ্যে হাত মেলামেলি হওয়াটাও এমন ‘লিপ ইয়ার’-এ ঘটে যে, মুথাইয়া মুরলীধরনের বিতর্কিত আম্পায়ার ডারেল হেয়ারকে নৈশভোজে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। হেয়ার মানে যিনি মুরলীকে ‘নো’ ডেকেছিলেন।

আরও পড়ুন: স্পিন-পেস দু’টোই সামলানোর প্রস্তুতি

যদিও সৌরভ-শাস্ত্রী সম্পর্কের ছায়া ইডেনের পিচ প্রস্তুতিতে পড়েছেই, এমন কথা জোর দিয়ে বলা হয়তো যায় না। তেমন কোনও প্রমাণপত্র নেই বা সরকারি ভাবে কেউ অভিযোগও তোলেননি। তবু প্রশ্ন তো উঠছেই যে, ভারতীয় দল দেশের মাটিতে খেললেও এমন সবুজ পিচ কেন? কবে এমন পিচে আর খেলেছে কোনও ভারতীয় দল? সানি থেকে সৌরভ— কেউ কি এমন বাইশ গজ চেয়েছেন?

এমনিতে ভারতীয় ক্রিকেটে নিজেদের দলের স্বার্থ উপেক্ষা করে সবুজ পিচ দেওয়ার উদাহরণ এটাই প্রথম নয়। ইডেনেই আগে হয়েছে। সৌরভ তখন টিমের বাইরে। গুরু গ্রেগ চ্যাপেলের আমলে রাহুল দ্রাবিড় যখন টিম নিয়ে ওয়ান ডে খেলতে এসেছিলেন। সবুজ পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতকে দশ উইকেটে হারিয়ে দেয়। আর এক বার সৌরভ যখন অধিনায়ক, নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সবুজ উইকেট বানিয়ে চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিলেন শশাঙ্ক মনোহর। এখন আইসিসি প্রধান মনোহর তখন ছিলেন বোর্ডে জগমোহন ডালমিয়ার বিরোধী।

মনে করা হয়, ডালমিয়া ঘনিষ্ঠ সৌরভকে বিপাকে ফেলার জন্যই এমন পিচ বানিয়েছিলেন মনোহর। চোট লাগায় সেৃই টেস্টে যদিও খেলেননি সৌরভ। শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান। নেতৃত্ব দেন রাহুল দ্রাবিড়। অস্ট্রেলীয় মিডিয়া পর্যন্ত লেখে, গ্লেন ম্যাকগ্রার শততম টেস্টে বিশেষ উপহার দিল আয়োজক ক্রিকেট সংস্থা। আর ইডেনে গ্রেগের মুখের উপরেই প্রয়াত প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলে দিয়েছিলেন, ঘাস ছাঁটবেন না। কারণ? অবশ্যই সৌরভকে ‘অন্যায় ভাবে’ দল থেকে বাদ দেওয়া।

কাজেই পিচ নিয়ে প্যাঁচ-পয়জার ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। মাঝেমধ্যে বাইশ গজকে রাজনীতির মঞ্চ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। সৌরভের সিএবি-ও কি পিচ বিতর্কে জড়িয়ে যেতে পারে? নাকি শেষ বেলায় ঘাস ছাঁটার কাজ শুরু হবে বুধবার? ইডেনে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা টেস্ট নিয়ে আগ্রহের চেয়ে অনেক বেশি কৌতূহল থাকবে পিচ পরিণতি দেখার জন্য।

মঙ্গলবার পর্যন্ত দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এক নম্বর সম্ভাবনা হচ্ছে কোনও পক্ষে কথাবার্তা না হয়ে বাইশ গজ যেমন আছে তেমনই থেকে যাওয়া। পিচ নিয়ে ভারতীয় দলে কেউ মুখ খুলছেন না। তাঁরা খুব প্রসন্ন হয়েছেন, মনে করার কারণ নেই। কিন্তু তাঁরা সিএবি পিচ প্রস্তুতকারককে বলবেনও না ঘাস ছাঁটতে। কেন? এই দলের মস্তিষ্করা মনে করছেন, তাঁরা এখন আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট টিম। এই শ্রীলঙ্কা দলের বিরুদ্ধে ঘাসের পিচে খেলা নিয়ে অনুযোগ করাটা এক নম্বর দলের শোভা পায় না।

কোহালিরা তাই স্টান্স নিয়ে ফেলেছেন, পিচ নিয়ে কথা বলবেন না। বরং কেউ কেউ বলাবলি করেছেন, কয়েক দিন পরেই তো দক্ষিণ আফ্রিকা যাব আমরা। তখন তো ওরা যে উইকেট দেবে, তাতেই খেলতে হবে। সেই প্র্যাকটিসটা না হয় ইডেন থেকেই শুরু করে দিক দল। অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি পিচ দেখার পরে ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারককে এমন কথাও বলে এসেছে যে, ঘাসটা পুরো কাটবেন না। আমরা পেস আর বাউন্সি পিচেই খেলতে চাই।

শুনে কারও কারও মনে হয়েছে, সেটা দাবি নয়, কটাক্ষই। বুঝিয়ে দেওয়া যে, ঘাসের পিচে খেলার মতো বারুদও আমাদের রয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে গেলে সত্যিই আছে। মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমারদের নিয়ে ভারতের পেস বিভাগ এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা। আবার ইডেনের উইকেটে ঘাস থাকলেও কতটা যে দ্রুতগামী হবে বা বাউন্স থাকবে, সেটাও দেখার।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন কোহালি। এমনকী, টিভি-তে বসে ভি ভি এস লক্ষ্মণের মতো বিশেষজ্ঞও বলেছিলেন, টসে জিতলে অবশ্যই ফিল্ডিং নেওয়া উচিত। ইডেনের পিচে বল ছুটবে, লড়াচড়াও করবে। কোহালি তার দেড় মিনিটের মধ্যে টস জিতে সকলকে অবাক করে দিয়ে বলেন, ব্যাট করব। ইডেনের সেই ম্যাচটা জেতে ভারতই।

আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, এই ভারতীয় দল ঘরে-বাইরে ধারণাটা তুলে দিতে চাইছে। শুধু একটা ক্রিকেট ম্যাচ হিসেবে দ্যাখো। সেই মতবাদ মেনে চললে তো পিচ নিয়ে অনুযোগ করা সাজে না। আগুনে পিচে তাই আগুন দেখানোর ডাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন