টিকিট কিনতে মোহনবাগান সমর্থকেরা।
টানা ছ’টা ম্যাচ জিতে দল এখন লিগের মগডালে। সামনে এ বার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। রবিবার ডার্বির দিনে তাই ইলিশ চাই, বাজারে গিয়ে আগাম জানিয়ে রেখেছেন লাল-হলুদ ভক্তরা। কিন্তু অসময়ে ইলিশ কোথায়? হিমঘর থেকে ইলিশের জোগান পেতে হন্যে হয়েছেন শিলিগুড়ির মাছ ব্যবসায়ীরা।
সবুজ-মেরুণ সমর্থকদের অবশ্য চিন্তার কোনও কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিচ্ছেন, ক্যানিং, গোসাবা, এমনকী মেদিনীপুর থেকেও রোজ অঢেল গলদা চিংড়ি ঢুকছে বাজারে। যা শুনে চওড়া হাসছেন মোহনবাগান ভক্তরা, মাঠের বাইরের লড়াইয়ে যেন এক রাউন্ড জয় হাসিল।
খুদিরামপল্লির বাজার বা গুরুঙ্গ বস্তির বাজার, ইলিশ-চিংড়ির যুদ্ধের ছাপ এখন সর্বত্রই। চিংড়ির জোগানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইলিশ আনতে কোমর বেঁধে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আশ্বস্ত করে তাঁরা জানাচ্ছেন, আজ, শুক্রবার থেকে হিমঘরের ইলিশ এসে যাবে বাজারে।
ডার্বির জন্য শিলিগুড়ি যাতায়াতের বাসের সংখ্যা বাড়াচ্ছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। জলপাইগুড়ি, মালবাজার, ইসলামপুর তিন রুটে চলা বাসের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিগম। ম্যাচ শুরু এবং শেষের তিন ঘণ্টা আগে-পরে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সরকারি বাস চলবে বলে এ দিনই নিগমের তরফে জানানো হয়েছে। টিকিট বিক্রি শুরু হতেই ডার্বি উন্মাদনা ছড়াতে শুরু করেছে শিলিগুড়িতে।
টিকিট কিনতে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা।
গত বছর এপ্রিলেও কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ডার্বি হয়েছিল। শহরের ক্রীড়াপ্রেমীরা তো বটেই, জলপাইগুড়ি-সহ লাগোয়া এলাকা, এমনকী কলকাতা থেকে ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন দু’দলের সমর্থকেরা। সে বার ইস্টবেঙ্গল জেতার পরে শহরের বাজারগুলিতে ইলিশের খোঁজ শুরু হয়। মাছের জোগান তেমন না থাকায় হতাশ হয়েছিলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। এ বার যাতে আর তা না হয়, আগে থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে মাছের বাজারে। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক বাপি চৌধুরী বলেন, ‘‘যেহেতু শিলিগুড়িতে আগে নিয়মিত ইস্ট-মোহন ম্যাচ হয়নি, সে জন্য গত বার চাহিদার কথা আঁচ করে আগাম মাছের বাড়তি জোগানের ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে সে বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।’’ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, চিংড়ির জোগান ভাল বলে দাম কম রয়েছে। ক্যানিং ও বসিরহাট থেকেই মূলত চিংড়ি আসে শিলিগুড়ির বাজারে। এ বার মেদিনীপুর থেকেও আসছে। পাইকারি বাজারে চিংড়ির দর গড়ে ৬০০ টাকা কেজি থাকলেও এ বার দাম অনেকটা কম। বাজারে এখন যে ইলিশের জোগান রয়েছে তা পাঁচশো থেকে ছ’শো গ্রামের। বাপিবাবুর কথায়, ‘‘বড় মাছ তেমন নেই। হিমঘরে যা আছে সবই ছোট।’’ নিজেদের কয়েকটি হিমঘরে প্রায় দেড়শো কেজি মাছ মজুত রেখেছিলেন ব্যবসায়ী দীনেশ শাহ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কাল থেকে মাছ বের করা হবে। রবিবারের জন্য সব বাজার থেকেই চাহিদা জানানো হয়েছে।’’
এ দিন বিকেলে টিকিটের খোঁজে দাঁড়িয়ে থাকা দু’দলের সমর্থকদের কাছে মাছ নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা শোনা গেল। হায়দারপাড়ার বাগান-ভক্ত অর্পণ দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের দল প্র্যাকটিসে নামলে বাজার থেকে বড় চিংড়ি নিয়ে গিয়ে উপহার দেব ঠিক করেছি।’’ ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সম্পদ রায়ের আবার দাবি, জেতার ব্যাপারে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। ম্যাচের শেষে ইলিশ-পিকনিকের আয়োজনও হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পাড়ায় মাছের দোকানে বলে রেখেছি। দল জিতলে ইলিশ তো চাই-ই।’’
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।